রেলের ১০ ইঞ্জিন কেনায় দুর্নীতি, দুদকের অভিযানে অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত

Uncategorized আইন ও আদালত

!! অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য লোকোমোটিভ, রিলিফ ক্রেন ও লোকোমোটিভ সিমুলেটর সংগ্রহ’শীর্ষক একটি প্রকল্প চালু করা হয়। পুরো প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ৭৩৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের অধীনে ৩২২ কোটি ৬৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকায় ১০টি মিটারগেজ ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ কেনা হয়। ইঞ্জিন গুলো প্রাক-জাহাজীকরণের দায়িত্ব দেওয়া হয় চায়না সার্টিফিকেট অ্যান্ড ইন্সপেকশন কোম্পানিকে (সিসিআইসি)। ২০২০ সালের ২৫ জুলাই ইঞ্জিনগুলো প্রাক-জাহাজীকরণ সমীক্ষা (পিএসআই) সনদ ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়। সিসিআইসি ওই বছরের ১২ আগস্ট নিয়ম ভেঙে একই দিনে দুটি পিএসআই সনদ দেয়। ওই বছরের ৩১ আগস্ট ইঞ্জিনগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে এলে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই খালাস করতে প্রকল্প পরিচালককে বাধ্য করা হয় !!

নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ রেলের ১০ ইঞ্জিন কেনায় দুর্নীতি, দুদকের অভিযানে সত্যতা বাংলাদেশ রেলওয়ের বহরে যুক্ত হওয়া ১০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) কেনায় দুর্নীতি ও অনিয়ম সংক্রান্ত অভিযোগ যাচাইয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) রেল ভবনে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তার ও উপ-সহকারী পরিচালক মো. কামিয়াব আফতাহি-উন-নবীর সমন্বয়ে গঠিত এনফোর্সমেন্ট টিম এ অভিযান চালায়। অভিযানে ইঞ্জিন কেনায় অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ রেলওয়েকে ইঞ্জিনগুলো সরবরাহ করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানি। দাম ছিল ৩২২ কোটি ৬৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এরইমধ্যে ৯০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। চুক্তিতে তিন হাজার হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিন দেওয়ার কথা থাকলেও দুই হাজার হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিন দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগেরও সত্যতা পেয়েছে দুদক। এছাড়া আরও কিছু অনিয়মের সত্যতা খুঁজে পেয়েছে টিম।অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা (উপপরিচালক) মুহাম্মদ আরিফ সাদেক।

দুদক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের বহরে যুক্ত হওয়া ১০টি মিটার গেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) কেনায় দুর্নীতি ও অনিয়ম সংক্রান্ত অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযানকালে টিম সচিব ও মহাপরিচালক সহ প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিকট থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। রেলের ইঞ্জিন কেনার জন্য ২০১৫ সালে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য লোকোমোটিভ রিলিফ ক্রেন ও লোকোমোটিভ সিমুলেটর সংগ্রহ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এ প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফায় বাড়িয়ে জুন, ২০২২ পর্যন্ত করা হয়।

রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় ইঞ্জিনগুলোতে তিনটি ক্যাপিটাল কম্পোনেন্টের ভিন্নতা আছে, যা চুক্তি বহির্ভূত। চুক্তিতে তিন হাজার হর্স পাওয়ারের ইঞ্জিন দেওয়ার কথা থাকলেও ২ হাজার হর্স পাওয়ারের ইঞ্জিন দেওয়া হয়েছে, টিএ-১২ মডেলের অল্টারনেটরের পরিবর্তে টিএ-৯ মডেল যুক্ত করা হয়েছে, এছাড়া ২৯০৯-৯ মডেলের পরিবর্তে ২৯০৯ মডেল দেওয়া হয়েছে। রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে পরবর্তী কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে দুদকের একটি ঊর্ধ্বতন সূত্র।
অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়েকে ইঞ্জিনগুলো সরবরাহ করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানি। দাম ছিল ৩২২ কোটি ৬৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। এরইমধ্যে ৯০ শতাংশ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সরকারের একটি সংস্থার প্রতিবেদন সূত্রে ওই অনিয়মের বিষয়টি সামনে আসে। অভিযোগের তির রেলওয়ের তখনকার মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মো. মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী এবং ঠিকাদার আফসার বিশ্বাসের দিকে।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য লোকোমোটিভ, রিলিফ ক্রেন ও লোকোমোটিভ সিমুলেটর সংগ্রহ’শীর্ষক একটি প্রকল্প চালু করা হয়। পুরো প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ৭৩৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের অধীনে ৩২২ কোটি ৬৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকায় ১০টি মিটারগেজ ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ কেনা হয়। ইঞ্জিন গুলো প্রাক-জাহাজীকরণের দায়িত্ব দেওয়া হয় চায়না সার্টিফিকেট অ্যান্ড ইন্সপেকশন কোম্পানিকে (সিসিআইসি)। ২০২০ সালের ২৫ জুলাই ইঞ্জিনগুলো প্রাক-জাহাজীকরণ সমীক্ষা (পিএসআই) সনদ ছাড়াই চট্টগ্রাম বন্দরে পাঠানো হয়। সিসিআইসি ওই বছরের ১২ আগস্ট নিয়ম ভেঙে একই দিনে দুটি পিএসআই সনদ দেয়। ওই বছরের ৩১ আগস্ট ইঞ্জিনগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে এলে সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই খালাস করতে প্রকল্প পরিচালককে বাধ্য করা হয়। ইঞ্জিনগুলোতে নিম্নমানের ক্যাপিটাল কম্পোনেন্ট সংযোগ করার বিষয়টি সিসিআইসি ও হুন্দাই রোটেম গোপন রেখেছে। আবার কমিশনিং কমিটির প্রতিবেদনে ইঞ্জিনগুলোর বিভিন্ন ত্রুটির বিষয় তুলে ধরা হলেও ‘পারফরম্যান্স সন্তোষজনক’ বলে উল্লেখ করা হয়।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *