নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ হলি আর্টিজান বেকারি-তে জঙ্গী হামলায় সাত জাপানি নিহত হয়েছিলেন। তারা প্রত্যেকেই জাইকা’র সদস্য এবং ঢাকায় মেট্রোরেল প্রকল্পের সাথে পরামর্শক হিসেবে যুক্ত ছিলেন৷ বাংলাদেশের উন্নয়নে স্বার্থহীনভাবে পাশে থাকার পরেও নাগরিকদের এমন নির্মম হত্যাকান্ডের পর পুরো জাপান জুড়েই চরম অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। এদেশে বসবাসরত জাপানি প্রবাসীদের নিরাপত্তা নিয়ে তৎকালীন সময়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন সেই দেশের রাজনীতিবিদ থেকে জনগণসহ প্রায় সকলেই। এমনকি বিদেশি বিভিন্ন বিনিয়োগ বন্ধের মতো হুমকি ও আশঙ্কার সম্মুখীন হয় বাংলাদেশ।
কিন্তু এতো চাপ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন থেকে একবিন্দু সরে দাঁড়াননি প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও তাঁর নেতৃত্বাধীন জাপান সরকার। শুধু শক্ত বিবৃতি দেয়া নয় বরং বলেছিলেন বাংলাদেশের যেকোনো সংকটে জাপান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করবে, যেকোনো মূল্যেই পাশে থাকবে। সত্যিই তাই, জাপান কথা রেখেছিলো। বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগে একটি সন্ত্রাসী হামলা কোনোভাবেই বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বাংলাদেশের পাশে থাকতে জাপানের এমন অদম্য ভূমিকা উদ্বুদ্ধ করেছিল এদেশে বিনিয়োগকারী বাকি সংস্থা ও দেশগুলোকেও৷
এমনকি পদ্মাসেতু নিয়ে তৎকালীন সময়ে বিশ্বব্যাংকের আণিত দুর্নীতি অভিযোগ নিয়ে দ্বিধা প্রকাশ করেছিলো জাইকা ও জাপান সরকার। জাইকা দাবী করেছিলো, তারা মনে করেন না এখানে কোনো দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের সাথে তাদের চুক্তি অনুযায়ী, বিশ্বব্যাংক সেতু প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ানোই তাদেরকেও সরে যেতে হচ্ছে। তবে সেই জাপান-কে আর মেট্রোরেল প্রকল্প থেকে কোনোভাবে সরানো যায়নি।
একজন দৃঢ়চেতা নেতা শিনজো আবে না থাকলে আমাদের হয়তো হলি আর্টিজান ঘটনার পরে ঘুরে দাঁড়ানোই কঠিন হয়ে যেত। আজ পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল বা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো প্রকল্পগুলো আলোর মুখ দেখতে অনেক বেগ পেতে হতো।
শিনজো আবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাপানের ইতিহাসে দীর্ঘতম দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর অনাঙ্ক্ষিত হত্যাকান্ডে বাংলাদেশ একজন প্রকৃত ও বিশ্বস্ত বন্ধুকে হারিয়ে ফেললো। বাংলাদেশের বর্তমান সামগ্রিক অগ্রগতিতে তাঁর অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।