নিজস্ব প্রতিনিধি ঃ রবিবার ২৪ জুলাই, বিকালে রংপুর রেঞ্জের নতুন ডিআইজি মোহাঃ আবদুল আলীম মাহমুদ বিপিএম যোগদান করেছেন।
ডিআইজি’র যোগদান উপলক্ষে অত্রাফিসের পক্ষ হতে অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) মোঃ ওয়ালিদ হোসেন ডিআইজি কে ফুলেল শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
এসময় রেঞ্জ অফিসে কর্মরত সকল অফিসার ও ফোর্সসহ রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, রংপুর এর উর্ধ্বতন অফিসারবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন এবং রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, রংপুর এর পক্ষ ডিআইজি কে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করা হয়। ডিআইজি অফিসে যোগদান করে অফিসে কর্মরত সকল অফিসার ও ফোর্সের সাথে কুশল বিনিময় করেন।
মোহাঃ আবদুল আলীম মাহমুদ বিপিএম ১৯৬৮ সালের ২৫ শে অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার লক্ষনপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ থেকে বি এস সি এজি ইকন (অনার্স) ও কৃষি অর্থনীতিতে এম.এস.সি ও পরবর্তীতে আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ থেকে ইএমবিএ ডিগ্রী অর্জন করেন।
তিনি ১৯৯৫ সালে ১৫তম বিসিএস এর মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন। বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমী, সারদা থেকে বেসিক ট্রেনিং এবং সিরাজগঞ্জ জেলায় মাঠ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষে খাগড়াছড়ি জেলায় সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। সার্কেল এএসপি হিসেবে বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী ও শেরপুর সার্কেলে কর্মরত ছিলেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও শেরপুর জেলায় কর্মরত ছিলেন। পুলিশ সুপার হিসেবে নোয়াখালী, নড়াইল ও মৌলভীবাজার জেলা এবং উপ-পুলিশ কমিশনার হিসেবে চট্রগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত ছিলেন। এআইজি হিসেবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এবং পুলিশ টেলিকমে কর্মরত ছিলেন। বিশেষ পুলিশ সুপার হিসেবে স্পেশাল ব্রাঞ্চেও দায়িত্ব পালন করেছেন। অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে পুলিশ হেডকোয়াটার্সে কর্মরত ছিলেন। তিনি পুলিশ হেডকোয়াটার্সে ডিআইজি (এইচআর) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তিনি রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রথম কমিশনার হিসাবে যোগদান করে তিান একটি নতুন ইউনিটকে গড়ে তোলেন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে। নাগরিক সেবায় এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নগরবাসীর ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার হিসেবে তিনি প্রায় ৪ (চার) বছর কর্মরত ছিলেন।
তিনি চাকুরী জীবনে সর্বদা সততা, নিষ্ঠা ও দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। ভাল কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি দুইবার “আইজিপিস এ্যাক্সেমেপ্লেরী গুড সার্ভিসেস ব্যাজ” (আইজি ব্যাজ) প্রাপ্ত হন এবং ২০১৯ সালে বাংলাদেশ পুলিশের সর্বোচ্চ সম্মাননা বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল “বিপিএম সেবা” পদকে ভূষিত হন।
চাকুরীর পাশাপাশি তিনি খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে BAUST সৈয়দপুরে এবং ২০১৩ সাল থেকে নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ঢাকাতে অপরাধ বিজ্ঞান এবং ম্যানেজারিয়াল ইকোনমিক্স বিষয়ে পাঠদান করেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পাঠদান করেন।
তিনি দেশে ও বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ ট্রেনিং এ অংশগ্রহণ করেছেন।
লুসিয়ানা স্টেট পুলিশ একাডেমি, “ক্রাইসিস রেসপন্স টিম ট্রেইনিং’’, সাউথ কোরিয়াতে “গ্লোবাল ক্রাইম প্রিভেনশন”, চায়নাতে “পাবলিক সিকিউরিটি এন্ড কাউন্টার টেরোটিজম ফর বাংলাদেশ”, সিঙ্গাপুরে “মোবাইল ফোন লোকেশন ফাইন্ডার”, ভিয়েতনামে “এশিয়া রিজিওনাল ল-এনফোর্সমেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রাম” কোর্সে এবং ইতালিতে “প্রটেকশন অব সিভিলিয়ান্স” শীর্ষক প্রশিক্ষণসমূহে অংশ গ্রহণ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে “ ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব ডিরেক্টরস অব ল এনফোর্সমেন্টস স্ট্যান্ডার্স এন্ড ট্রেনিং” শীর্ষক কনফারেন্স এবং মালয়শিয়ায় “হিউম্যান স্মাগলিং এন্ড ফ্রডুলেন্ট ট্রাভেল ডকুমেন্ট” শীর্ষক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন।
তিনি সেমিনার, ওয়ার্কশপসহ বিভিন্ন সরকারি দায়িত্ব পালনের জন্য হংকং, জার্মানি, আইভরিকোস্ট, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া গমন করেছেন। এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে তিনি ফ্রান্স, অষ্ট্রিয়া, তূর্কী, সুইজারল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমন করেছেন।
তিনি জাতিসংঘের পূর্ব তিমূর শান্তিরক্ষা মিশনে ২০০৩-২০০৪ সালে CivPol হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
২০০৭-২০০৮ সালে জাতিসংঘের কঙ্গো শান্তিরক্ষা মিশনে BanFPU-2 এর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শান্তিরক্ষা মিশনে বিশেষ অবদানের কারণে কঙ্গো মিশন প্রধান (UNSRG) কর্তৃক তাকে বিশেষভাবে সম্মানিত করা হয়। এছাড়া তিনি দুইবার জাতিসংঘ পদকে ভূষিত হন।
অত্যন্ত সদালাপী, পরোপকারী ও সাংগঠনিক মানুষ হিসেবে তিনি পুলিশিং এর পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত।
“মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য” এ মহানব্রতকে সামনে রেখে সামাজিক ও মানবিক দায়বদ্ধতা থেকে স্রষ্টার সস্তুষ্টি অর্জনের আশায় মোহাঃ আব্দুল আলীম মাহমুদ বিপিএম প্রতিষ্ঠিত করেন “মানবতার বন্ধনে রংপুর” নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
তিনি সাতক্ষীরার তালা উপজেলার লক্ষণপুরে তাঁর পিতার নামে “আনসার মাহমুদ স্মৃতি সংস্থা” এবং এতিখানা ও মাদ্রাসা গড়ে তোলেন। তিনি এটির প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান উপদেষ্টা। স্মৃতি সংস্থার মাধ্যমে ৫০০ তালিকাভুক্ত পরিবারকে স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করা হয়। শুধু তাই নয় স্বাস্থ্য সর্ম্পকে সচেতন করা, স্বাস্থ্য শিক্ষাসহ শীতার্ত মানুষকে শীতবস্ত্র ও নগত অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়।
এছাড়া অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের তিনি সভাপতি ও উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছেন।তিনি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে, গান শুনতে এবং বই পড়তে পছন্দ করেন। তিনি ব্যক্তি জীবনে বিবাহিত ও এক কন্যা সন্তানের জনক।