নওয়াপাড়া নদী বন্দরে উচ্ছেদ অভিযান, প্রথম দিনে অবৈধ ৬০টি ঘাটের মধ্যে ৯টি উচ্ছেদ

Uncategorized বিশেষ প্রতিবেদন

সুমন হোসেন, (যশোর) ঃ
যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলার শিল্প-বানিজ্যে ও বন্দর নগরী নওয়াপাড়া নৌ বন্দরে অবৈধ তালিকায় থাকা ৬০টি ঘাটের মধ্যে ৯টি ঘাট উচ্ছেদ করেন নৌ বন্দর কতৃপক্ষ। এই উচ্ছেদ অভিযান শরু হয়েছে বুধবার সকাল থেকে।

প্রথম দিনে নওয়াপাড়া ও তালতলা এলাকায় অবস্থিত ৯টি ঘাট উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ অভিযান সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে। সূত্র জানায়, অবৈধ ঘাট গুলোর কাছ থেকে সরকার দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

বাংলাদেশ অভ্যান্তরিণ নৌ কর্তৃপক্ষের পরিচালনায় উচ্ছেদ অভিযানে অংশগ্রহণ করেন নওয়াপাড়া নদী বন্দরের উপ-পরিচালক মাসুদ পারভেজ, বিআইডাব্লিউটিএ’র নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট শোভন বংসা, অভয়নগর থানা পুলিশ, স্থানীয় নৌ পুলিশ সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
উচ্ছেদ হওয়া ঘাট গুলির মধ্যে রয়েছে, তালতলা এলাকায় অবস্থিত সরকার ট্রের্ডাস , তালতলা স্টোন হাউজ, এস এ এন্টার প্রাইজ, চাকলাদার স্টোন,নওয়াপাড়া এলাকার ব্রাইট ঘাট এক, ব্রাইট ঘাট দুই,অধিকারী ট্রের্ডাস, শংকরপাশা এলাকার রফিক গাজী ও জলিল গাজীর ঘাট।

নওয়াপাড়া নদী বন্দরের উপ-পরিচালক মাসুদ পারভেজ আজকের দেশকে জানান, অবৈধ ঘাট উচ্ছেদ অভিযানে কোন বাঁধা মানা হবে না। উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। অবৈধ ঘাট উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে।

গত ৬ জুলই আজকের দেশ পত্রিকায় “নওয়াপাড়া নদী বন্দরে ১শ’ ৬০টি ঘাটের মধ্যে ৬০টি ঘাটই অবৈধ” শিরোনামে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে ওই সংবাদের সূত্র ধরে বেশ কয়েকটি স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়। যে কারনে উচ্ছেদ অভিযান তরান্বিতভাবে শুরু হয়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে ,গত ২৮ ফেব্রুয়ারি মোংলা বন্দর থেকে যশোরের আফিল গ্রুপের আমদানি করা ১ হাজার ১শ’ ৬০ টন কয়লা নিয়ে একটি জাহাজ রওনা দেয় নওয়াপাড়া নৌ-বন্দরের উদ্দেশ্য। ৪ মার্চ নওয়াপাড়ায় পৌঁছানোর পর তলা ফেটে জাহাজটি ডুবে যায়। এভাবে গত ৫ বছরে বন্দরটিতে অর্ধশত জাহাজ ডুবে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন আমদানিকারকরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নওয়াপাড়া নৌবন্দরের অবৈধভাবে গড়ে উঠা ঘাটের কারণে নদীর নাব্যতা কমে যাচ্ছে। যে কারণে ঘন ঘন জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটছে।
নওয়াপাড়া নৌবন্দরে ১৬০টি ঘাটের মধ্যে ৬০টিই অবৈধ। এসব অবৈধ ঘাট থাকায় পলি জমে নদী ভরাট হয়ে ঘনঘন ঘটছে জাহাজ দুর্ঘটনা।

খুলনার দিঘলিয়া উপজেলার মজুদ খাল থেকে যশোর সদর উপজেলা আফরা ঘাট পর্যন্ত ২৪ কিলোমিটার নদীর তীরবর্তী এলাকা নিয়ে গঠিত হয়েছে নওয়াপাড়া নদী বন্দর। নদীর পশ্চিম তীর বরাবর যশোর-খুলনা মহাসড়ক হওয়ায় বেশির ভাগ ঘাট পশ্চিম তীরে গড়ে উঠেছে। মোংলা বন্দর থেকে নদী পথে এখানে কার্গো, বার্জ, বলগেট ইত্যদি নৌযানের মাধ্যমে সার, কয়লা, সিমেন্ট, খাদ্য শস্যসহ নানা ধরনের মালামাল আমদানি ও রফতানি হয়। ঘাটকে কেন্দ্র করে নওয়াপাড়া বাজার শিল্প বাণিজ্য নগরীতে পরিণত হয়েছে।

নওয়াপাড়া নৌবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ৬০টি ঘাট অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত। ঘাট গুলো হচ্ছে- সরকার ট্রেডার্স, আলম ব্রাদার্স, আইয়ান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, মাহাবুব টুলু ঘাট, মিজান শেখ, তিস্তা সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, সীতার ঘাট, কাজী হামিমুল কাদির (বাবু মেম্বার), রবিন বিশ্বাস, মো. হাসান, সাহারা এন্টারপ্রাইজ, দি গোল্ডেন এন্টারপ্রাইজ (রাজঘাট), নওয়াপাড়া ট্রেডিং (রাজঘাট), ব্রাইট ঘাট, লুৎফর রহমান ও ওলিয়ার রহমান, এসএল এন্টারপ্রাইজ, মোল্যা ব্রাদার্স, তালতলা স্টোন, এসএ এন্টারপ্রাইজ, মাহবুব ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড, বিসমিল্লাহ ঘাট, তামিম এন্টারপ্রাইজ (চাপাতালা), আফসার মোল্যা ও কাছের মোল্যা, রেজোয়ান, লবণ মিল ঘাট (মহাকাল), এসএ এন্টারপ্রাইজ (চেঙ্গুটিয়া), শেখ ব্রাদার্স (চেঙ্গুটিয়া), বিদ্যুৎ ঘাট, দাদা ভাই ঘাট, দীপু স্টোন প্রাইভেট লিমিটেড, এআর সিমেন্টে মিলস লিমিটেড, মক্কা সিমেন্ট ঘাট, বেগেরঘাট, রাজ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড, মমতাজ নাসরিন (ডলার ঘাট), এ রহমান পরশ অটো রাইস মিলস লিমিটেড, সরকার ট্রেডার্স (মশরহাটি), জয়েন্ট ট্রেডিং কর্পোরেশন, বিশ্বাস ঘাট (মালোপাড়া ঘাট), মুন ট্রেডার্স, ফজলু এন্টারপ্রাইজ, হাসিব ফারাজী, বাঘা সাহেবের ঘাট, ভৈরব ঘাট, কামরুল মোল্যা, হাসান ফারাজী ও হোসেন ফারাজী, রফিক গাজী, শহিদুল গাজী, গাজীর ঘাট, জিয়া গাজী, ইসলাম এন্ড সন্স, মাস্টার ট্রেডিং-৩, অধিকারী ট্রেডার্স, ফারাজী নাসির উদ্দীন, নুরুল আমিন, শ্রী শ্রী বিজয় কৃষ্ণ আশ্রম ঘাট, চাকলাদার স্টোন হাউজ ও আলী আকবর বাবু।

এ সব অবৈধ ঘাটের বেশিরভাগ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নেই। তাছাড়া কিছু ঘাট আছে তারা প্রবাহমান নদীতে ইট, বালু, গাছ দিয়ে অবৈধ ঘাট করে জেটি নির্মাণ করেছে। এছাড়া অনেক শিল্প কারখানার সীমানার প্রাচীর নদী দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে। ওই সব ঘাট ও সীমানা প্রাচীরে নদীর পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। এতে পলি জমে নদী ভরাট হচ্ছে। অবৈধ ঘাট উচ্ছেদের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ বারবার নোটিশ দিয়েছে। কিন্তু কোন ঘাট মালিক কর্ণপাত করেনি। যে কারণে অবৈধ ঘাট উচ্ছেদের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নিয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য সূত্রে জানা গেছে, খুব শিঘ্রই ওইসব অবৈধ ঘাট ও জেটি উচ্ছেদ করা হবে।

নৌ র্কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ঘাট নির্মাণের জন্য তীর ভূমি ব্যবহার বাবদ বার্ষিক ইজারার হার প্রতি শতাংশ জমির জন্য ১ হাজার ৭২৮ টাকা। এছাড়া বাঁশের জেটিতে প্রতি বর্গমিটারে ৮৪ টাকা, কাঠের জেটিতে ১৪৪ টাকা এবং পাকা জেটিতে ২৭৬ টাকা। সবমিলে প্রতিটি ঘাট থেকে সরকার বছরে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা ইজারা পায়। কিন্তু অনেক অবৈধ ঘাট মালিক নদীর তীর ভূমি দখল করে ঘাট নির্মাণ করে দেদারছে মালামাল লোড আন লোডের কাজ করে যাচ্ছেন।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *