কুটনৈতিক প্রতিবেদক ঃ মূল্যস্ফীতির ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়েছে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে। দেশটিতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পণ্য ও সেবার দাম। কিন্তু ক্রমবর্ধমান এই মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সংগতি রেখে বাড়ছে না বেতন বা মজুরি। এ অবস্থায় ব্রিটিশদের প্রকৃত আয়ের পরিমাণ নিম্নমুখী রয়েছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি বাদ দিয়ে হিসাব করা এ আয় গত ১০০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পতন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের ‘ট্রেডস ইউনিয়ন কংগ্রেসের (টিইউসি)’ একটি বিশ্লেষণের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ জানিয়েছে, ২০২২ সালের শেষের দিকে মূল্যস্ফীতির তুলনায় যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের আয় প্রায় ৮ শতাংশ পিছিয়ে থাকবে। এটি ব্রিটিশদের প্রকৃত মজুরিতে শতবছরের সর্বোচ্চ পতনকে নির্দেশ করে।
টিইউসি জানিয়েছে, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের পূর্বাভাস অনুযায়ী চলতি বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) মূল্যস্ফীতি ১৩ শতাংশে পৌঁছবে। এ সময়ে মজুরি মাত্র ৫ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়বে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। অর্থাৎ জীবনযাত্রার মানে অভূতপূর্ব ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ পতন ঘটবে।
সর্বশেষ ব্রিটিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বাভাস ব্যবহার করে কর্মীদের জীবনমানের ওপর মূল্যস্ফীতির প্রভাবের বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হয়েছে। টিইউসির মতে, দেশটিতে ১৯২০ সালের পর প্রকৃত মজুরিতে এত বড় পতন দেখা যায়নি।
হাজার হাজার শ্রমিক ইঙ্গিত দিয়েছেন, বিষয়টি অবহিত করার পরও উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণে শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ব্যর্থ হলে তারা ধর্মঘটের প্রস্তুতি নেবেন। এরই মধ্যে চলতি মাসের শেষ দিকে ধারাবাহিক ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছেন পোস্ট অফিসে কাজ করা ১ লাখ ১৫ হাজারেরও বেশি ব্রিটিশ কর্মী।
এর আগে তারা ৫ দশমিক ৫ শতাংশ বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এতে তারা শিগগিরই ধর্মঘটে সমর্থনের অনুরোধ করা ৪ লাখ ৮০ হাজার নার্সের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন। জুনের ১১ দশমিক ৮ শতাংশ খুচরা মূল্য সূচকের বিপরীতে নার্সদের ট্রেড ইউনিয়ন রয়েল কলেজ অব নার্সিং (আরসিএন) ৫ শতাংশের ওপরে বেতন বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে। তবে মন্ত্রীরা নার্সদের ৩ শতাংশ এবং জ্যেষ্ঠ নার্সদের ৪ শতাংশ বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন।
এদিকে, আগামী শীতে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস ১৩ শতাংশে উন্নীত করেছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আগামী অক্টোবরে গড়ে ব্রিটিশ পরিবারগুলোর বিল ৩ হাজার ৬০০ পাউন্ড বেড়ে যাবে এবং ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে এটি ৪ হাজার ২০০ পাউন্ড পর্যন্ত বাড়তে পারে।
তবে কয়েক দিনের প্রবণতা ইঙ্গিত দিচ্ছে আগামী বছর গড় বিল পরিবারপ্রতি ৫ হাজার পাউন্ডের মতো বেড়ে যেতে পারে।
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোও ক্রমবর্ধমান জ্বালানি বিলের চাপের মধ্যে রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় সংস্থাগুলো গ্রাহকের ওপর অতিরিক্ত এ ব্যয় চাপিয়ে দিচ্ছে। সব মিলিয়ে বেতন বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির মাত্র ২০ শতাংশ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে যুক্তরাজ্যে প্রকৃত আয়ে সবচেয়ে বড় পতন হয়েছিল ১৯২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে মূল্যস্ফীতি ব্যাপক আকার ধারণ করলেও বেতন সেভাবে বাড়েনি।
ফলে সে সময় প্রকৃত আয় ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ কমে গিয়েছিল। এরপর ১৯৪০ সালের প্রথম প্রান্তিকে জীবনমানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ২ শতাংশ পতন হয়েছিল।