ক্ষমতার পট পরিবর্তনে প্রধানমন্ত্রী হবেন গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. ইউনূস’

Uncategorized অন্যান্য

!! ক্ষমতার পট পরিবর্তনে প্রধানমন্ত্রী হবেন গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. ইউনূস’—‘পাওনা লভ্যাংশ পরিশোধ ও অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার প্রলোভন’!!



নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ ‘পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ড. ইউনূস’, বার্তা ছড়িয়ে গ্রামীণ টেলিকমের সমঝোতা
‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি অদূর ভবিষ্যতে শ্রীলঙ্কার মতো হবে এবং ক্ষমতার পট পরিবর্তনে প্রধানমন্ত্রী হবেন গ্রামীণ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. ইউনূস’—‘পাওনা লভ্যাংশ পরিশোধ ও অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার প্রলোভন’-এর পাশাপাশি এমন বার্তা ছড়িয়ে গ্রামীণ টেলিকম এবং টেলিকম ইউনিয়নের কর্মচারীদের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছিল।

গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মো. মাইনুল ইসলামকে (৩৯) জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
গ্রামীণ টেলিকম এবং টেলিকম ইউনিয়নের কর্মচারীদের সঙ্গে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় মাইনুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ।

গত বুধবার (২৪ আগস্ট) কুমিল্লার সদর থানাধীন মগবাড়ি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এই সময় তার কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ এবং ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার একটি চেক জব্দ করা হয়।

গতকাল রবিবার (২৮ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ ও গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী ইউনিয়নের কয়েকজন নেতার যোগসাজশে সাধারণ কর্মচারীদের ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা লুটপাট করা হয়েছে।

এই ঘটনায় গত ৫ জুলাই গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান ও সেক্রেটারি ফিরোজ মাহমুদ হাসানকে গ্রেফতার করা হয়। তারা আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

গত ৪ জুলাই গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী এবং টেলিকম ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান (৩৮) মিরপুর মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেন যে গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানিতে বিভিন্ন সময়ে নিয়োজিত শ্রমিক-কর্মচারীদের স্থায়ীকরণ না করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ক্রমাগত নবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এছাড়া শ্রম আইন অনুযায়ী বাৎসরিক লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ ৮০:১০:১০ অনুপাতে ওয়ার্কার্স প্রফিট পার্টিসিপেশন ফান্ড, শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড এবং শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে দেওয়ার কথা থাকলেও ‘কর্মচারীরা স্থায়ী নয়’ ও ‘কোম্পানি অলাভজনক’সহ বিভিন্ন অজুহাতে লভ্যাংশ দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এসব বিষয়ে কর্মচারীরা বিভিন্ন সময় দাবি জানালে গত বছর প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৯৯ জন শ্রমিককে বেআইনিভাবে ছাঁটাই করা হয়।

এসব কারণে প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকরা শ্রম আদালতে ১৯০টি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু শ্রমিকদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কোম্পানি ও শ্রমিক ইউনিয়নের কয়েকজন নেতার যোগসাজশে মামলাগুলো তুলে ফেলা হয়।

তিনি আরও বলেন, এরপর গত ২৭ এপ্রিল গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তি অনুযায়ী গত ১০ মে ঢাকা ব্যাংক গুলশান শাখায় একটি সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। সেখানে বিগত ২০১০ সাল থেকে চলতি ২০২২ সালের সহ প্রতি বছরের কোম্পানির মোট লভ্যাংশের ৫ শতাংশের টাকা ও এই অর্থের সুদ হিসাবে আরও ৪ শতাংশ টাকা হারে কোম্পানি থেকে এই সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্টে প্রায় ৪৩৭ কোটি টাকা জমা করা হয়।

চুক্তি অনুযায়ী অ্যাকাউন্টটি থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য গ্রামীণ টেলিকমের এমডিকে বাধ্যতামূলক সিগনেটরি এবং ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অন্য দুই সিগনেটরি হিসেবে রাখা হয়।
ডিবি প্রধান বলেন, শ্রমিকদের সব পাওনাদি এই অ্যাকাউন্ট থেকেই পরিচালিত হওয়ার কথা। চুক্তি অনুযায়ী সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট থেকে শ্রমিকদের পাওনা এবং ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ব্যতীত অন্য কোনও অর্থ ছাড় করার সুযোগ নেই। কিন্তু বিধিবহির্ভূতভাবে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি, সহ-সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ আরও কয়েকজন মিলে অ্যাকাউন্ট থেকে ২৬ কোটি ২২ লাখ সরিয়ে আত্মসাৎ করে ফেলে। গ্রেফতার মো. মাইনুল ইসলামকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ডিবি প্রধান বলেন, গ্রামীণ টেলিকমের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তাকেসহ এই প্রতিষ্ঠানের আরও কর্মীদের অর্থের প্রলোভনের পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। আর এর মাধ্যমে ইনডেমনিটি দেওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রামীণ টেলিকমের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেয়। সেই সঙ্গে কর্মচারী ইউনিয়নের নিয়োজিত আইনজীবীকে অযৌক্তিক ও অতিরঞ্জিত প্রায় ১৬ কোটি টাকা ফি বা পারিতোষিক প্রদান করতেও উৎসাহী করে।
অন্যান্য শ্রমিকের মতো মাইনুল ইসলাম আইনানুগভাবে প্রাপ্য ৪ কোটি টাকা নেওয়ার পরও তার ডাচ বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ২ কোটি এবং ব্র্যাক ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এছাড়া তার অন্য দুই সহকর্মী অর্থাৎ টেলিকম ইউনিয়নের সভাপতি এবং সেক্রেটারি মোট ৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে মাইনুল ইসলাম বলেছে, ‘অফিসে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, ড. ইউনূস প্রধানমন্ত্রী হলে শ্রমিকদের মামলা কোনও কাজে আসবে না, শ্রমিকরা কোনও ক্ষতিপূরণও পাবেন না। বিপরীতে তাদের চাকরি হারানো, জেল খাটাসহ অন্যান্য নির্যাতনের মুখে পড়তে হবে। মূলত এই ভয়ে এবং কিছুই না পাওয়ার অনিশ্চয়তার বিপরীতে টেলিকম কর্তৃপক্ষের ৪৩৭ কোটি টাকার প্রলোভনে আইনজীবীর পরামর্শে তারা অতি দ্রুত অর্থ তুলে নেয়। আইনজীবী এই সমঝোতা বিষয়টির গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে বলে। ৪৭৩ কোটি টাকার মধ্যে ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে, বাকি টাকা কোথায় গেলো; প্রশ্ন করা হলে ডিবি প্রধান বলেন, ‘এ বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’
ড. ইউনূস এর সঙ্গে জড়িত আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা মনে করছি, এর দায় তিনি এড়াতে পারেন না। তারপরও আমরা আরও জিজ্ঞাসাবাদ করছি। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলবো। তদন্তে যা আসবে, সে অনুযায়ী আমরা ব্যবস্থা নেবো।’


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *