রাজশাহী মহানগরীতে ওসিকে প্রত্যাহারের আলটিমেটাম সাংবাদিকদের : বিএমএসএস’র একাত্মতা

Uncategorized জাতীয়


রাজশাহী প্রতিনিধি ঃ রাজশাহীতে একটি হোটেলে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের সামনেই সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও হত্যার হুমকি দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এ ঘটনায় নগরের রাজপাড়া থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ উল্টো হামলাকারীদের পক্ষ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে। এ ঘটনার পর সাংবাদিকেরা থানার সামনে রাস্তায় অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।
সন্ধ্যার পর মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার আরেফিন জুয়েল সেখানে গিয়ে মহানগর পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পরে হোটেলে হামলায় ঘটনায় একটি মামলা রেডর্ক করে পুলিশ।
মহানগরের রাজপাড়া থানার অদূরে অবস্থিত একটি আবাসিক হোটেলে সংবাদ সংগ্রহের জন্য গিয়ে হেনস্তার শিকার হন দৈনিক ইত্তেফাকের রাজশাহীর স্টাফ রিপোর্টার মো. আনিসুজ্জামান। ওই হোটেলে রাজশাহীর একটি সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি অনুষ্ঠান করছিল দু’টি কোচিং সেন্টার। সম্প্রতি ওই হোটেলের একটি অনুষ্ঠানের অশ্লীল নাচের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়।
ওই হোটেলে বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কেন নেওয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে একজন অভিভাবক সাংবাদিক আনিসুজ্জামানকে ফোন করে জানালে তিনি সেখানে খবর সংগ্রহের কাজে গিয়েছিলেন।

সাংবাদিক আনিসুজ্জামান হোটেলে গিয়ে দেখেন, দোতলায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে নাচগানের অনুষ্ঠান চলছে। তিনি অনুষ্ঠানের একটি ছবি তুলে বের হয়ে আসছিলেন। তখন হোটেলের কর্মীরা তাকে আটকান এবং শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে তার ফোন থেকে ছবি ডিলিট করার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ।
এছাড়া রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ রিপনসহ কয়েকজন সাংবাদিক ওই সাংবাদিককে উদ্ধার করতে হোটেলে যান। প্রায় এক ঘণ্টা চেষ্টার পর অবরুদ্ধ সাংবাদিক আনিসুজ্জামানকে পুলিশের উপস্থিতিতে উদ্ধার করে হোটেল থেকে বের হচ্ছিলেন তারা। তখন হোটেলের কর্মীরা পুলিশের সামনেই আবার আনিসুজ্জামানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। পুলিশ তখন নির্বিকার। এ সময় ওই এলাকার এক সন্ত্রাসীকে ডাকা হয়। তিনি এসে ফোনে অন্য আরেকজন সন্ত্রাসীকে অস্ত্র নিয়ে আসতে বলেন এবং সাংবাদিকদের প্রকাশ্যেই হত্যার হুমকি দেন। সময় সাংবাদিকেরা হোটেলের সামনে অবস্থান নিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আটকের দাবি জানালে পুলিশ দুজনকে ধরে নগরের রাজপাড়া থানায় নিয়ে যায়।
কিন্তু থানায় নেওয়ার পর ওসি এ এস এম সিদ্দিকুর রহমান আইনি ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছিলেন এবং উল্টো হামলাকারীদের পক্ষ নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন।

পুলিশের বোয়ালিয়া জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার তৌহিদুল আরিফের সামনেই ওসি সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। তিনি সাংবাদিক নেতা রফিকুল ইসলামকে হাতকড়া পরানোর হুকুম দেন। এর প্রতিবাদে সাংবাদিকেরা থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন এবং ওসিকে প্রত্যাহারের দাবি জানান।

সাংবাদিকেরা অভিযোগ করেন, ওসি এ এস এম সিদ্দিকুর রহমান ওই হোটেল থেকে অবৈধ সুবিধা নেন বলে হোটেলটিতে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। তিনি আজকের ঘটনার পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছেন। তিনি রাজপাড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ থানায় থাকার যোগ্য নন। তার যোগ দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সেদিনই ওসিকে প্রত্যাহার করা উচিত ছিল। কারণ, তিনি পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যর্থ। এছাড়াও সম্প্রতি ওই ওসির নামে একজন এসআই আসামীর কাছে ঘুষ দাবি করার একটি অডিও ফাঁস হয়। এর পর ওই এসআইকে থানা থেকে প্রত্যাহার করা হলেও ওসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এদিকে, শুক্রবার বিকেল চারটা থেকে সাংবাদিকেরা নগরের রাজপাড়া থানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করতে থাকেন। সাংবাদিকেরা দাবি করেন, হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে তাদের কাছে থাকা অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে এবং থানার ওসি এ এস এম সিদ্দিকুর রহমানকে প্রত্যাহার করতে হবে।

সন্ধ্যার পরে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার আরেফিন জুয়েল সেখানে গিয়ে মহানগর পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন। তবে তিনি ওসি প্রত্যাহারের জন্য সময় চান। তখন সাংবাদিকেরা ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেন। এ সময়ের মধ্যে ওসি প্রত্যাহার না হলে সাংবাদিকেরা আবার আন্দোলনে ফিরে যাবেন বলে ঘোষণা দেন।

রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে ওই হোটেলে গিয়েছেন তাদের এক সহকর্মী। তখন পুলিশের উপস্থিতিতে তার ওপর হামলা করা হয়। বিষয়টি নিয়ে থানায় গেলে থানার ওসি হামলাকারীদের পক্ষ নিয়ে ওই সহকর্মী ও তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। বাধ্য হয়ে তারা রাস্তায় নামেন। পরে পুলিশ কমিশনারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন।
উপকমিশনার আরেফিন জুয়েলকে ঘটনাস্থলে পাঠানোর বিষয়টি উল্লেখ করে পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে ওসির দুর্ব্যবহারের ঘটনাটি খতিয়ে দেখবেন। এ ব্যাপারে তিনি সাংবাদিকদের নিয়ে বসবেন। পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে, উক্ত হীন ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী সহ রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং রাজশাহীর সকল সাংবাদিকদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক সোসাইটি।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান খন্দকার আছিফুর রহমান, মহাসচিব মো: সুমন সরদার এবং বিএমএসএস রাজশাহী বিভাগের আহবায়ক জুয়েল আহমেদ সহ নেতৃবৃন্দ যৌথভাবে এই সিদ্ধান্ত নেন।
নাহলে সারাদেশ মানববন্ধনসহ প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *