নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ
নিয়ম-নীতির মধ্যে থেকেই এক যুগেরও বেশি সময় যাবত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে ঢাকা ওয়াসাকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাকসিম এ খান। ঘুরে দাঁড় করিয়েছেন ঢাকা ওয়াসাকে। কর্মদক্ষতা ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণেই সরকারের হাইকমান্ড বারবার আস্থা রেখেছেন তাঁর ওপর। কিন্তু ‘নাখোশ’ সুবিধা বঞ্চিত বিশেষ সিন্ডিকেট। নানা কায়দা কানুনে তাঁরা ব্যস্ত-সমস্ত ওয়াসা এমডির পিণ্ডি চটকাতে।
একের পর এক মিডিয়া ট্রায়াল! একাধিকবার ঘটনা গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। আদালত খারিজও করে দিয়েছে সর্বৈব মিথ্যা অভিযোগ। তবুও যেন যেকোনভাবেই সরাতে হবে তাকসিম এ খানকে! গণমাধ্যমে হাইলাইটস হওয়া ভুয়া সব অভিযোগের বিষয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জোরালো প্রতিবাদ জানানোর পর এবার রীতিমতো চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন ঢাকা ওয়াসার এমডি। নিজের নৈতিক দৃঢ়তার বিষয়টি জোরালোভাবে জানান দিয়েই বলেছেন, ‘জীবনে এক টাকাও হারাম খাননি।’
পাল্টা অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন অসাধু কর্মকর্তাদের দিকেই। বলেছেন, ‘ঢাকা ওয়াসায় যারা অবৈধ কাজ করতেন তাদের এই কাজের সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। তারা কি আমার ওপর সন্তুষ্ট থাকবেন? অসাধু কর্মকর্তারাই চেষ্টা করছে আমাকে হেয় করতে ও ওয়াসার পদ থেকে সরিয়ে দিতে।’
গতকাল বুধবার ৭ ডিসেম্বর, ওয়াসা ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এমন সব দাবি জানিয়েছেন ঢাকা ওয়াসার আলোচিত ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। গণমাধ্যমের কোন প্রশ্ন এড়িয়ে যাননি। জবাব দিয়েছেন টু দ্য পয়েন্টে। ফাঁস করেছেন মহল বিশেষর গোমর। দমে যাননি একবিন্দুও। অমিত দৃঢ়তায় বলেছেন, ‘অভিযোগ থাকলেই তো হবে না। অভিযোগ প্রমাণিত হতে হবে। তাই যদি হয় তাহলে ১২ বছর তো অনেক অভিযোগ ছিল, একটা অভিযোগ কি কোনোদিন প্রমাণিত হতে পারল না? অভিযোগ প্রমাণিত হতে পারছে না কেন? ঢালাও অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছেন।’
সংবাদ সম্মেলনে কঠিন প্রশ্ন, সহজ উত্তরঃ সাধারণত হেভিওয়েট কারও বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হলে সেসব নিয়ে পাশ কাটিয়ে যাওয়া বা মিডিয়াকে এড়িয়ে চলার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম এক নজির গড়েছেন তাকসিম এ খান। গণমাধ্যমকর্মীদের অনেক কঠিন প্রশ্নের সহজ উত্তর দিয়েছেন ঢাকা ওয়াসায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে উচ্চকন্ঠ তাকসিম। ওয়াসা এমডি বলেন, ‘বাংলাদেশে কি আইন বলতে কিছু নাই নাকি? নাউজুবিল্লাহ! ১২ বছর ধরে ওই একই জিনিস বারবার আসছে। বলেই যাচ্ছেন, বলার জন্য টেক্স লাগে না। বলেই যাচ্ছেন।’
তাসকিম বলেন, ‘আমি আমার জীবনে কোনোদিন এক টাকা হারাম খাইনি। আমি গর্বের সঙ্গে, আনন্দের সঙ্গে বলতে পারি। কাজেই যতই অভিযোগ আসুক, যেহেতু আমি জানি আমার ভয়েরইবা কী আছে? লজ্জারইবা কী আছে?’
আপনার বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগের কারণ কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কারা কারা করেছে? কারা কারা শাস্তি ভোগ করেছে, তাদের নাম আছে, যে সাসপেন্ড হয়েছে এক বছরের জন্য তাদের নাম আছে। আপনারা চাইলে আপনাদের নামগুলো দেওয়া হবে। যে এক বছরের জন্য সাসপেন্ড হয়েছে সে আমাকে কী করবে? সে চাইবে যে আল্লাহ যেন আমাকে এই পদ থেকে সরিয়ে দেয়, তাহলে তার সাসপেনশনটা উঠে যাবে। এটাই হচ্ছে ফেক্ট।’
তাকসিম এ খানের নিয়োগের বিষয়ে আদালতে করা রিটটি গতকাল খারিজ করে দিয়েছে আদালত। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাকসিম এ খান বলেন, ‘যে অভিযুক্ত উত্থাপিত হয়েছিল সেই অভিযোগ তা সর্বৈব অসত্য। এর মধ্যে কোনো সঠিক কিছু ছিল না। আল্লাহর রহমত মহামান্য হাইকোর্ট সেটাকে খারিজ করে দিয়েছেন।’
তাকসিম বলেন, ‘যদি আইনের ব্যত্যয় হয়ে থাকে তবে কোনো আইনগত ব্যবস্থা কেন নেওয়া হলো না? আইনের ব্যত্যয় হয়ে থাকলে এক থেকে দুই মাসের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পাঁচ বছরের মধ্যে যদি আইন ভাঙা হয়ে থাকে তাহলে ব্যবস্থা কেন নেওয়া হলো না? আইন সঠিকভাবেই মানা হচ্ছে। কোথাও আইন ভাঙা হয়নি।’
ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্পে ৩২০০ কোটি টাকা দুর্নীতি অভিযোগ রয়েছে। সেখানে অভিযুক্ত ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকও।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য। প্রজেক্ট সংক্রান্ত অভিযোগ সবই অসত্য। যদি দুর্নীতি হয়েই থাকে আপনারা অনুসন্ধান করে কী করলেন? এই অভিযোগটি ২০১৫ সালের। গত সাত বছরে কোনো তদন্ত ও অনুসন্ধান অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। কোনো মামলাও হয়নি।’
ওয়াসার দুই পরিচালক নিয়োগের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে দুদক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুদকে এ বিষয়ে অনুসন্ধান হচ্ছে। বহু সময় বহু বিষয় নিয়ে অনুসন্ধান হয়। অনুসন্ধান হচ্ছে কী নিয়ে সেটাকে শুনতে হবে।অনুসন্ধান হচ্ছে কোনোরকম দুর্নীতি নিয়ে না। অনুসন্ধান এখন যেটা হচ্ছে সেটা হচ্ছে কিছু কিছু নিয়োগের বিষয়ে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে যে, এই নিয়োগগুলো কি সঠিক ছিল কি না।
আমাদের ডাইরেক্টার দুজনকে আমরা নিয়েছিলাম। বোর্ড তার ক্ষমতাবলে চুক্তিভিত্তিক তারা কাউকে নিয়োগ দিতে পারে।
সে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এখন এটাকেই বলা হচ্ছে আইনগত হয়েছে কি না। আমার জানামতে কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি এখন পর্যন্ত। অনুসন্ধান করেছে কিন্তু কিছু পাওয়া যায়নি। অনুসন্ধান তো করতেই পারে।’ ওয়াসার কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০১০ সালের রোডম্যাপে আমাদের ছিল জিরো টলারেন্স এগেনেস্ট করাপশন।
বহু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অনৈতিক কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকতে বাধ্য করা হয়েছে। যারা অবৈধ কাজ করতেন তাদের এই কাজের সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। তারা কি আমার ওপর সন্তুষ্ট থাকবেন? অসাধু কর্মকর্তারাই চেষ্টা করছে আমাকে হেয় করতে ও ওয়াসার পদ থেকে সরিয়ে দিতে।’
