বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে অগ্রণী ভুমিকা রাখায় কালের কন্ঠ এওয়ার্ড পেলেন সানজিদা

Uncategorized অন্যান্য


!! ৭৫ টি বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে অগ্রণী ভুমিকা রেখেছেন বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় থাকা সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ঝাউগড়া গ্রামের মেয়ে !!


নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ নিজ উদ্যোগে ৭৫টি বাল্যবিয়ে ঠেকিয়ে দিয়েছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক কিশোরী। আর, উঠে এসেছেন বিবিসির জরিপে বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায়। বলছি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ঝাউগড়া গ্রামের মেয়ে কালের কন্ঠের শুভসংঘের সদস্য সানজিদা ইসলাম ছোঁয়ার কথা।

গত মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেডের কনফারেন্স কক্ষে এ অর্জনে তাকে তাকে পুরস্কার হিসেবে ২৫ হাজার টাকা, ক্রেস্ট, এবং অটোগ্রাফসহ নিজের লেখা বই তুলে দেন কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন।

একই সঙ্গে সানজিদার খোরপোশ ও শিক্ষার যাবতীয় ব্যয় বহন করার ঘোষণাও দেন তিনি। নিজেদের ‘ঘাসফড়িং’ নামে পরিচয় দেন সানজিদা ও তার বন্ধুরা।

কোথাও বাল্যবিয়ের তথ্য এলে প্রশাসনের সহায়তায় সেটি প্রতিহত করেন তারা। অনুভূতি জানতে চাইলে সানজিদা বলেন, গত ৬ ডিসেম্বর বিবিসি বিশ্বের প্রভাবশালী নারীদের নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করে। সেই তালিকায় থাকতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। এই অর্জন আমার একার মনে করি না। আমার সঙ্গে যারা ছিল, আছে সবার অর্জন বলেই মনে করি। এটা একটা লম্বা একটা জার্নি, হুট করেই এই দিনটি আসেনি।
কিভাবে এই কাজের শুরু জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসলে আমার আম্মুর অনেক কম বয়সে বিয়ে হয়। যার ফলে উনি প্রায়ই অসুস্থ থাকতেন। একই সঙ্গে, তার মনে প্রতিষ্ঠিত হতে না পারার একটা আক্ষেপ দেখতাম সব সময়। তো, এই কথাগুলো শুনতে-শুনতেই আমার মনে হলো, বাল্যবিয়ের কারণে একটা মেয়ের জীবনে এত হতাশা-এত আক্ষেপ। তো, আমার সঙ্গে যাতে এরকম না হয়। এরপর মনে হলো শুধু আমার সঙ্গে কেনো, আমার আশেপাশে কারও সঙ্গেই যেনো এরকম না হয়। এর থেকেই মূলত আমার কাজের স্পৃহাটা জাগে। আমি কালের কণ্ঠের আঞ্চলিক প্রতিনিধি আলম ফরাজীর কাছেও কৃতজ্ঞ। তিনি পেছন থেকে শক্তি জুগিয়েছেন। তিনি আমাকে শুভ সংঘের সঙ্গে যুক্ত করে নেন। একই সঙ্গে আমাদের যে ব্যয় হতো এ কাজে, সেই অর্থও আসত শুভ সংঘের মাধ্যমে।

সানজিদা বলেন, এই গল্পটার শুরু হয় মূলত ২০১৬ সাল থেকে, যা এখনো বহাল আছে। এখন পর্যন্ত ৭৫টির মতো বাল্যবিয়ে আমরা আটকাতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের যে গ্রাম, সেটিও বর্তমানে সম্পূর্ণ বাল্যবিয়ে মুক্ত। আমার চাওয়া হচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম বাল্যবিয়ে জনিত সব কুফল থেকে মুক্ত থাকুক।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সঙ্গে যারা পড়াশোনা করছে, তাদের অনেকেই এ কাজের সঙ্গে যুক্ত হতে চায়। আমি তাদের শুভ সংঘের সঙ্গে যুক্ত হতে বলেছি। আগামীদিনেও সবাইকে নিয়ে এই কাজ অব্যাহত রাখতে চাই।

কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ছোঁয়া মূলত শুভ সংঘেরই মেয়ে। ওরা যখন ‘ঘাসফড়িং’ নামে ওদের একটা টিম করে, তখন থেকেই আমরা ওর কথাটা জানি। মাঝখানে যেটা হলো, বিবিসির জরিপে সে ১০০ প্রভাবশালী নারীর একজন। তখনও পর্যন্ত সে ৫০টিরও বেশি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করেছে। এখন পর্যন্ত এটি ৭০-৭৫ ছাড়িয়েছে। এটা খুব বড় একটা ব্যাপার৷ আমি আসলে ভুলে গিয়েছিলাম সে আমাদেরই মেয়ে। এরমধ্যে আমাদের আঞ্চলিক প্রতিনিধি আলম ফরাজী একটা রিপোর্ট করলেন। সেখানে এটা জানার পরে আমি খুবই আন্দোলিত হয়েছি। তো, এরপর আজকে আমাদের এই আয়োজন। আমরা এই মেয়েটার পাশে আছি, শুভ সংঘ আছে, সর্বোপরি বসুন্ধরা গ্রুপ এই মেয়েটার পাশে আছে। আমরা তার সার্বিক দায়িত্ব নিচ্ছি।

সানজিদার মা লিজা আক্তার বলেন, আসলে আমি কোনোদিন চিন্তাই করিনি আমার মেয়ে এত সুনাম অর্জন করবে। এই আনন্দ প্রকাশ করার ভাষা আমার এই মুহুর্তে জানা নেই। মেয়ের সফলতায় আমার আজ মনে হচ্ছে আমি একজন সফল মা।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন দৈনিক কালের কন্ঠের ডেপুটি এডিটর হায়দার আলী, কালের কণ্ঠ শুভ সংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, সানজিদার বাবা আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া ও কালের কণ্ঠের ময়মনসিংহের আঞ্চলিক প্রতিনিধি আলম ফরাজী।

প্রসঙ্গত, বিবিসির তৈরি করা ২০২২ সালের বিশ্বে অনুপ্রেরণাদায়ী এবং প্রভাবশালী শীর্ষ ১০০ নারীর তালিকায় স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের মেয়ে সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া। ময়মনসিংহের নান্দাইলের ঝাউগড়ায় তার গ্রামের বাড়ি। কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি।

মনোনীত ১০০ নারীকে নিয়ে গত ৬ ডিসেম্বর বিবিসি একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিশ্বের রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, অধিকার আন্দোলন, স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান প্রভৃতি শাখায় এসব নারীকে নতুন তালিকায় স্থান দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অ্যাক্টিভিজম ও অ্যাডভোকেসি শাখায় রয়েছে সানজিদা ইসলাম ছোঁয়ার নাম। বিবিসির সে তালিকায় ২১ নাম্বারে আছেন তিনি।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *