নড়াইলে ৩ সাংবাদিকের উপর হামলা ও মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলার ঘটনায় নিন্দা ও প্রতিবাদ

Uncategorized জাতীয়


নড়াইল প্রতিনিধি : নড়াইলে ৩ সাংবাদিককে হামলা ও মিথ্যা চাঁদাবাজি মামলার ঘটনায় গ্রেফতারের প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেঁটে পড়েছে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন ও সাংবাদিক সমাজ। নড়াইলে তথ্য সংগ্রহের সময় চাঁদাবাজির অভিযোগে মাইকে ঘোষণা দিয়ে হামলা করে মারধর এবং সাঁজানো মামলা দায়ের করে গ্রেফতার দেখিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের তিন সাংবাদিককে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা-প্রতিবাদ ও সারাদেশে বিভিন্ন কঠিন কর্মসূচি ডাক দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে বৃহৎ সাংবাদিক সংগঠন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক সোসাইটি (বিএমএসএস) সহ সারাদেশের সাংবাদিক সমাজ।
১৫ জানুয়ারী রবিবার মিথ্যা মামলার শিকার সংগঠনের কেন্দ্রীয় গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সহ নড়াইলের স্থানীয় ৩ সাংবাদিককে আদালতের মাধ্যমে জামিন করিয়ে জেল থেকে ফুলেল শুভেচ্ছায় মুক্ত করার পর সাংবাদিক সমাজ এবং নড়াইল জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ ও অন্ধ দাবী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সন্ধায় সংগঠনের অফিসিয়াল ফেসবুক আইডিতে এক লাইভে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন কর্মসূচি ডাক দেয়ার ঘোষণা দেন।
সেই সাথে বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন এবং সারাদেশের সাংবাদিক সমাজ ক্ষোভে পেশাদারিত্বের বিরুদ্ধে উক্ত ঘৃনিত ন্যাক্যারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দাও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএমএসএস’র সকল কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে অংশগ্রহন করতে সহমত প্রকাশ করেছে।
নড়াইলে সাংবাদিক রফিকুল ইসলামের বাড়িতে বিএমএসএস’র প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান খন্দকার আছিফুর রহমান, মহাসচিব মো: সুমন সরদার, কেন্দ্রীয় নেতা সাথী তালুকদার, রহিমা খানম সুমিসহ প্রমূখ নেতৃবৃন্দ লাইভে উপস্থিত ছিলেন।
এসময় সাংবাদিকরা তথ্য সংগ্রহ করা কালীন মিথ্যা চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে হামলা-মারধর, মামলা ও গ্রেফতারের বিরুদ্ধে কয়েকটি ভিডিও উপস্থাপন করে প্রতিবাদ জানানো হয়।
এছাড়া নড়াইল জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সদর থানার ওসিসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে মামলা প্রত্যাহার ও কথিত খোকন হুজুর নামক ভন্ড হুজুর আব্দুর রউফ, তার ছেলে সাজেদুল এবং ভাতিজা সন্ত্রাসী-নাশকতা মামলার আসামী বিএনপির ক্যাডার ইমরান শিকদারকে গ্রেফতার এবং ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে অবৈধ গ্রামডাক্তারি ও ঝাঁড়-ফুকের প্রতিষ্ঠান সীলগালা করার দাবী জানানো হয়। অন্যথায় নড়াইলে হাজার হাজার সাংবাদিকদের উপস্থিতি ঘটানো ও কঠোর কর্মসূচির ডাক দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।
সম্পূর্ণ তদন্ত ছাড়াই তিনজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি মামলা নিয়ে জেলহাজতে পাঠানোর ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। উক্ত মিথ্যা ঘটনার বিরুদ্ধে বহু ভিডিওসহ প্রমান থাকার কথাও বলা হয়।

উল্লেখ্য, নড়াইল সদর থানা পুলিশ গত শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) বিকালে মো. আব্দুর রউফ শিকদার ওরফে খোকন হুজুরের মামলার ভিত্তিতে সাংবাদিকদের গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে প্রেরণ করে। ১৫ জানুয়ারী রবিবার মাননীয় আদালত বিচার বিশ্লেষণ করে সকল ভিডিও দেখে তিন সাংবাদিককে জামিন প্রদান করেন।
ষড়যন্ত্রের শিকার সাংবাদিকরা হলেন- চিত্রাবানী২৪ অনলাইনের জেলা প্রতিনিধি মনির খান (৫৩), আমার সংবাদ পত্রিকার লোহাগড়া উপজেলা প্রতিনিধি রইস উদ্দিন টিপু (৫৫) এবং আজকের আলোকিত সকাল পত্রিকার সাংবাদিক মো: রফিকুল ইসলাম (৩৮)।

ঘটনার বিবরণ, পুলিশ সুত্রে জানা যায়, নড়াইল সদরের আগদিয়া গ্রামের মো. আব্দুর রউফ শিকদার ওরফে কথিত খোকন হুজুর নামে ব্যক্তি নিজের অর্জিত জ্ঞান দ্বারা বিভিন্ন রোগীর তদবির দিতেন। সমস্যাগ্রস্ত শত শত রোগী তার কাছে রোগ মুক্তির আসায় প্রতিনিয়ত আসেন। সাংবাদিক রফিকুল রোগী সেজে গত সপ্তাহে ওই হুজুরের কাছে সেবা নিতে আসেন। কিন্তু মনপুত সেবা না পাওয়ায় পরে আসবেন মর্মে হুজুরের বাড়ি ত্যাগ করেন। শুক্রবার দুপুরে রফিকুল তার আরো দুই সহযোগী সাংবাদিক নিয়ে হুজুরের বাড়িতে যান। তারা নিউজের প্রয়োজনে তথ্য সংগ্রহে ভিডিও ধারনের সময় হুজুরের স্বেচ্ছাসেবক সাংবাদিকদের হুজুরের রুমে নিয়ে যায়। সেখানে সাংবাদিকরা রোগীদের এভাবে তদবির দেওয়ার বৈধতার ব্যাপারে বক্তব্য, সরকারী অনুমোদন ও একাডেমিক যোগ্যতা সম্পর্কে জানতে চান। হুজুর তার সেবা দানের বৈধতার স্বপক্ষে নিজেকে পল্লী চিকিৎসক, ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক সনদ, ট্রেড লাইসেন্স, ড্রাগ লাইসেন্সের সনদ প্রদর্শন করেন। এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে খোকন হুজুরের অনুসারী নামধারী ও তার ছেল সাজেদুল এসে বাকবিতন্ডায় শুরু করেন এবং চাঁদা নিতে এসেছেন বলে অভিযোগ এনে সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের মারধর করে আটকে রাখেন। আটকের পর পুলিশে খবর দিলে সদর থানা পুলিশ তাদের হেফাজতে নেন।

সাংবাদিকদের হাতে থাকা ভিডিওটিতে দেখা যায়, স্থানীয় তিন সাংবাদিকদের ওপর হুজুর ও তার অনুসারীরা চড়াও হচ্ছে। বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে খোকন হুজুর নিজের মুখে বলেন, তারা যোগ্যতা যাচাইয়ের কথা বলেছেন তবে কোন টাকা বা চাঁদা চাননি। অথচ দায়েরকৃত মিথ্যা মামলায় খোকন হুজুর বলছেন, সাংবাদিক পরিচয়ে তিনজন আমার বাড়িতে এসে আমার কাছে এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে ও আমাকে প্রাননাশের হুমকি দেয়। স্থানীয় জনগন তাদের কিছুটা মারধর করে আটকে রাখে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায় খোকন হুজুর থানায় মামলা দায়েরের আগে ও পরে ভিন্ন বক্তব্যের আসল ঘটনা।
স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবী, তারা জুমার নামাজের আগে মাইকে শোনেন খোকন হুজুরের বাড়িতে সাংবাদিকরা হামলা করেছে-ডাকাত পড়েছে। সেই খবর শুনে এলাকাবাসী জড়ো হন। আর এই ঘটনার জন্ম দেয় খোকন হুজুরের ডান হাত তার ভাইয়ের ছেলে বহু অপকর্মের হোতা, নাশকতা মামলার আসামী, বিএনপির ক্যাডার মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী ইমরান শিকদার। সে মাদ্রাসার মাইকে ঘোষণা দিয়েই এই মিথ্যা সাজানো চাঁদাবাজির ঘটনা সাজিয়েছে। যার কোনো প্রমান নেই। সত্য ঘটনার বহু ভিডিও প্রমান সাংবাদিকদের কাছে রয়েছে। এমনকি ঘটনাস্থলের চারিদেকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেও প্রমাণ পাওয়া যাবে যে ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও সাঁজানো।

নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাহমুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা খবর পাই চাঁদা চাওয়ায় স্থানীয় জনতা তিন সাংবাদিককে আটকে রেখেছেন। তাৎক্ষণিক আমার পুলিশ পাঠিয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাদের উদ্ধার করে থানা হেফাজতে নিয়ে আসি। এরপর বাদীর মামলার প্রেক্ষিতে তাদের তিনজনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়।

এদিকে বহু অপকর্মের হোতা আলহাজ্ব নামধারী আব্দুর রউফ শিকদার ওরফে খোকন হুজুরের অবৈধ ক্ষমতা আর খুঁটির কোথায়? তার বক্তব্য অনুযায়ী অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালনায় কে তাকে শেল্টার দেয়? নড়াইলের সাবেক এসপি জসিম উদ্দীন না-কি সদর থানার ওসি অথবা প্রশাসন? নাকি শামিম ওসমানের পরিচয় দেয়া টাকায় বিক্রি মুকিনুল নামক ব্যক্তি, টাকায় কেনা কিছু নামধারী সাংবাদিক? এমন হরেক রকম প্রশ্ন সচেতন এলাকাবাসী ও দেশের সাংবাদিক সমাজের।

এছাড়া আগদিয়া বাজারের মরিচ বিক্রেতা থেক আজকের ভন্ড কবিরাজ-পল্লী চিকিৎসক খোকন হুজুরের অভয়নগরের ভাটপাড়াসহ বহু নারীঘটিত অনৈতিক কর্মকান্ড, অবৈধ আয়ে অর্জিত সম্পদ, ডান হাত তার ভাইয়ের ছেলে বহু অপকর্মের হোতা, নাশকতা মামলার আসামী, বিএনপির ক্যাডার মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী এক সময়ের চোর ইমরান শিকদার কর্তৃক সাংবাদিকদের হত্যার হুমকি ও টাকায় পক্ষে নেয়ার চেষ্টা, ছেলে সাজেদুর চরিত্রের মাদ্রাসার কোমলমতি ছাত্রদের নিজ স্বার্থে ব্যবহার, হরেক রকম প্রশ্ন ও তাদের বিরুদ্ধে একাধিক তথ্য-উপাত্ত প্রমাণ হাতে এসেছে। যা যাচাই-বাছাই শেষে পরবর্তীতে ধারাবাহিক ভাবে প্রচার করা হবে। (চলবে..)


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *