নড়াইলে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী পালিত
মো:রফিকুল ইসলাম,নড়াইলঃ
নড়াইলে নানা কর্মসুচির মধ্যে দিয়ে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখে এর (৮৭তম) জন্মবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে র্যালি,কোরআনখানি, স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পমাল্য অর্পণ,পুলিশ কর্তৃক সশস্ত্র সালাম, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা। (২৬ ফেব্রুয়ারি) রবিবার সকালে নড়াইল সদরের নূর মোহাম্মদ নগরে জেলা প্রশাসন ও বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ট্রাস্টের আয়োজনে এ সব কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময়,জেলা প্রশাসক মো.হাবিবুর রহমান,অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো.ফকরুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. রিয়াজুল ইসলাম,নড়াইল সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া ইসলাম,বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ট্রাস্টের সদস্য সচিব আজিজুর রহমান ভূঁইয়া,বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ছেলে মো. মোস্তফা কামাল শেখসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য,১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল সদর উপজেলার অজপাড়া গাঁয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মহিষখোলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন,নূর মোহাম্মদ শেখ। তার গ্রামের নাম পরিবর্তন করে ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ মাসে ‘নূর মোহাম্মদ নগর’ করা হয়। বাবা মোহাম্মদ আমানত শেখ ও মা জেন্নাতুন্নেছা মতান্তরে জেন্নাতা খানম।বাল্যকালেই বাবা-মাকে হারান জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তান, লেখাপড়া করেছেন,সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত। ১৯৫৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে (ইপিআর, বর্তমানে বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশ-বিজিবি) যোগদান করেন। দিনাজপুর সীমান্তে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই বদলি হন যশোর সেক্টরে।
পরবর্তীতে তিনি ল্যান্স নায়েক পদোন্নতি পান। মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত ৮নং সেক্টরে অংশগ্রহণ করে যুদ্ধ করেন তিনি। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ক্যাপ্টেন নাজমুল হুদার নেতৃত্বে যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর সীমান্তের বয়রা অঞ্চলে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন নড়াইলের এ সাহসী সন্তান (নূর মোহাম্মদ)। এসময় এপ্রিল থেকে আগস্ট পর্যন্ত ৮নং সেক্টর কমান্ডার ছিলেন,কর্নেল (অব.) আবু ওসমান চৌধুরী এবং সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কমান্ডার ছিলেন, মেজর এস এ মঞ্জুর। এদের নেতৃত্বে প্রাণ-পণ লড়েছেন নূর মোহাম্মদ। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যশোর জেলার গোয়ালহাটি ও ছুটিপুরে পাকবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেন এই বীর। এদিন পাকবাহিনীর গুলিতে সহযোদ্ধা নান্নু মিয়া গুরুতর আহত হন। হাতে এলএমজি এবং আহত নান্নুকে কাঁধে নিয়ে শত্রু পক্ষের দিকে গুলি ছুঁড়তে থাকেন নূর মোহাম্মদ। হঠাৎ পাকবাহিনীর মর্টারের আঘাতে তার হাঁটু ভেঙ্গে যায়। তবুও গুলি চালাতে থাকেন তিনি। এক সময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন,নূর মোহাম্মদ শেখ।
যশোরের শার্শা উপজেলার কাশিপুর গ্রামে তাকে সমাহিত করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত হন তিনি। লাল-সবুজের মাঝে স্বাধীন সার্বভৌমত্ব বাংলাদেশে প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে আজও বেঁচে আছেন,নড়াইল জেলার কৃতি সন্তান বীর শ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ।