লাখ টাকায় হোল্ডিং ট্যাক্স কমিয়ে দেন দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে কর অঞ্চল-১-এ হিসাব সহকারী পদে থাকা সোহেল রানা

Uncategorized অন্যান্য



!! মো. সোহেল রানার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৬ সালে সিটি করপোরেশনে নিয়োগ পান রানা। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে অঞ্চল-১-এ হিসাব সহকারী (রাজস্ব শাখা) হিসেবে কর্মরত। তিনি উত্তরা ৭ ও ১০ নম্বর সেক্টরের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন ১২ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের। অনেকে দাবি করেছেন, একই জায়গায় দীর্ঘ সময় থাকার সুবাদে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা !!

নিজস্ব প্রতিবেদক : এক ব্যক্তিকে হোল্ডিং ট্যাক্স কমিয়ে দিতে চাইছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের এক রাজস্ব কর্মকর্তা। বিনিময়ে গ্রাহকের কাছে এক লাখ টাকা দাবি করেন। গ্রাহক ৭০ হাজার টাকা দিতে রাজি হলেও কাজটি করতে পারবেন না বলে জানান ওই কর্মকর্তা। সম্প্রতি কর অঞ্চল-১ উত্তরার রাজস্ব শাখার কর্মকর্তার রুমে এমন চিত্র দেখা যায়। দেখা যায়, উত্তরা অঞ্চল-১-এর হিসাব সহকারী (রাজস্ব শাখা) মো. সোহেল রানা উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের এক বাড়ির মালিকের প্রতিনিধির সঙ্গে হোল্ডিং ট্যাক্স বিষয়ে কথা বলছিলেন। ট্যাক্সে ফাইলটি কয়েক দিন আগে দিয়ে গেছেন তিনি। সোহেল রানা বলছিলেন, ‘আপনার ফাইলটিতে বছরে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আসবে। আর যদি আপনার আপিল করেন, তাহলে ১ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ট্যাক্স করতে পারবেন। আর যদি ১৫ পার্সেন্ট ডিসকাউন্ট দেয়, তাহলে ১ লাখ ২০ হতে পারে। আর যদি আপনি সেগুনবাগিচা গিয়ে করেন, তাহলে ১ লাখ ১০ হাজার করতে পারবেন। প্রতি বছরের জন্য ফিক্সড হয়ে যাবে এই টাকা। আর যদি আমার এখানে করেন, তাহলে ট্যাক্সটা আরও কমে যাবে। সর্বমোট বছরে ট্যাক্স আসবে মাত্র ৬৮ হাজার টাকা। এ কাজটি সম্পূর্ণ করতে ১ লাখ টাকা দিতে হবে।’

বাড়ির মালিকের প্রতিনিধি সোহেল রানার কাছে জানতে চান, ‘পরে কোনো রকম হয়রানির বা ঝাই-ঝামেলার শিকার হতে হবে কি না? তখন সোহেল রানা বলেন, ‘কিসের ঝাই-ঝামেলা, সব অফিসারের সিগনেচার থাকবে, ডকুমেন্ট থাকবে, তদন্ত রিপোর্ট দেখবে। আর আপনারা যদি বলেন, আমরা টাকার বিনিময়ে হোল্ডিং ট্যাক্স করে দিয়েছি, তাহলে ঝামেলায় পড়তে পারি।’
এ সময় সোহেল রানা একটি কৌশল শিখিয়ে দিয়ে বলেন, কেউ যদি তদন্তে যায়, তখন বলবেন এ বাসায় আগে নিজেরা বসবাস করতেন, এখন ভাড়া দিয়েছেন। আর কেউ যদি না যায়, তাহলে কিছুই না। আর এ ফাইল তো আমার কাছে থাকবে, তেমন কেউ খুঁজবে না।’

সোহেল রানা ১ লাখ টাকা কেন, কোথায় দিতে হবে, সে ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, ‘সেগুনবাগিচার অফিসে সারা দেশের আপিল শুনানি করা হয়। আমি নাম বলে দেব তাকে ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে। এই আপিল শুনানি একবার হয়; যা করার এখনই করতে হবে, পরে আর কমানোর সুযোগ নেই। আর এখানে কিছু কর্মকর্তা আছে তাদেরও ২০ হাজার টাকার মতো দিতে হবে। আমার হাতে ১৫ পার্সেন্ট কমিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আছে। আর আমি কাজ করে দেব, আমার কিছু টাকা না থাকলে আমি কেন কাজ করব?’

তিনি বলেন, ‘এই মালিকের এখন টাকাপয়সা থাকতে পারে, কিন্তু ১০ বছর পর ১০ হাজার টাকা অনেক কিছু। তাই বিপদ-আপদের কথা চিন্তা করেই ট্যাক্সের টাকা কমিয়ে নেওয়া ভালো। এখানে অনেক ইন্সপেক্টর আছে, যারা এখন এক কথা বলে, পরে অন্য কাজ করে। কিন্তু আমার কাছে এ রকম কিছু পাবেন না। কারণ আজকের সম্পর্ক হয়েছে ১০ বছর, ২০ বছর পর দেখা হলে বলবেন, কী অবস্থা। এমনভাবে কাজ করব সবাই জানবে এটা আমার আত্মীয়ের ফাইল। আমি যে এত টাকা নিয়েছি, কাউকে বলব না। যত কম টাকা দিয়ে করতে পারি, আমি করব। আর আপনি যখন কাজ করবেন, এটা আপনার বেপার, আমি আপনাকে সহায়তা করব। কত কমাতে পারবেন, সেটা আপনার বিষয়।’

এ সময় তিনি অপ্রত্যাশিত একটি ফাইলের কাজ সমাপ্ত করার উদাহরণ দেন। এ ছাড়া টাকা কম-বেশি দিলে কী কী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তারও উদাহরণ দেন এই কর্মকর্তা। ৭০ হাজার টাকায় কাজটি করার কথা বলে চলে যেতে চাইলে সোহেল রানা অট্টহাসি দিয়ে বলেন, ‘আমি আটকিয়ে যাব। না না না, ৭০ হাজার টাকায় করলে আমি ওই খানে আটকিয়ে যাব। দেখেন আমি আপনাকে কিছু বলব না। এই অফিস, ওই অফিস ঘুরতে ঘুরতে স্যান্ডেলের তলা ক্ষয় হয়ে যাবে, আপনি একটু শব্দও করতে পারবেন না। বলব, আপনার ফাইল তৈরি আছে কিন্তু অন্য জনের কাছে পাঠিয়েছি টাকা দেন এমন কোনো কিছু করতে চাই না। কীভাবে কাজ করবেন, আমাকে জানান আমি আছি।’
মো. সোহেল রানার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৬ সালে সিটি করপোরেশনে নিয়োগ পান রানা। দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে অঞ্চল-১-এ হিসাব সহকারী (রাজস্ব শাখা) হিসেবে কর্মরত। তিনি উত্তরা ৭ ও ১০ নম্বর সেক্টরের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন ১২ ও ১৩ নম্বর সেক্টরের। অনেকে দাবি করেছেন, একই জায়গায় দীর্ঘ সময় থাকার সুবাদে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা।
অঞ্চল-১ কর কর্মকর্তা, রাজস্ব বিভাগ মো. মনোয়ার হোসেন গণমাধ্যম কে বলেন, ‘কেউ যদি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে এ দায় তার। শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য আমাদের অথরিটির কাছে জানাই তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করে। অন্যদিকে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. জুলকার নায়ন গণমাধ্যম কে জানান, ট্যাক্সের কার্যক্রম অনলাইনকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। এখানে দুর্নীতি করার সুযোগ নেই। ট্যাক্সের জন্য বোর্ড গঠন করা হয়েছে। যে বোর্ডে একজন কাউন্সিলর চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনয়ন পান। একজন গ্রাহককে ট্যাক্সের কাগজ পেতে হলে চারটি ধাপ পার করতে হয়। কিন্তু আপনি যে কথা বলেন, কেউ যদি আমাদের কাছে অভিযোগ দেয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব। এমন কিছু হলে সেই ক্ষেত্রে হেড অফিসে আমরা চিঠি দিই। তখন তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণ করে অথারিটি।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *