সংসদ সদস্য মো. আবদুস সোবহান মিয়ার বিরুদ্ধে দুদককে অনুসন্ধান করার নির্দেশ হাইকোর্টের

Uncategorized আইন ও আদালত



!! আবদুস সোবহান ২০১৪ সালে প্রথম নিউ ইয়র্কে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই বছর নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় একটি সুউচ্চ ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন তিনি। পরের পাঁচ বছরে তিনি নিউ ইয়র্কে মোট ৯টি ফ্ল্যাটের মালিক হন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে পাঁচটি কনডোমিনিয়াম কিনেছিলেন আবদুস সোবহান। সে সময় ওই সম্পত্তির মূল্য ছিল প্রায় ২৪ লাখ ডলার। এ ছাড়া আশপাশের ভবনগুলোতে ৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার মূল্যের তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন তিনি, বলা হয় প্রতিবেদনে !!


কোর্ট রিপোর্টার : যুক্তরাষ্ট্রে কোনো প্রকাশ্য আয় না থাকার পরও দেশটির নিউ ইয়র্ক সিটিতে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে নয়টি অ্যাপার্টমেন্ট কেনার অভিযোগে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো. আবদুস সোবহান মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

অভিযোগ উঠেছে, ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার সময় হলফনামায় নিউ ইয়র্কে থাকা এসব সম্পদের তথ্য নির্বাচনী হলফনামায় গোপন করেছেন মাদারীপুর-৩ আসন থেকে নির্বাচিত আবদুস সোবহান।
গত সোমবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন বলে গণমাধ্যম কে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন।

তিনি জানান, গত রোববার দায়ের করা রিটের ওপর সোমবার শুনানিতে আদালত আগামী চার মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে জানাতে নির্দেশ দিয়েছে দুদকের প্রতি। “বাংলাদেশে ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে নির্দেশনা দিয়েছে যাতে এই প্রতিষ্ঠানগুলো দুদককে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করে,” বলেন সুমন।
তিনি বলেন, অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ (ওসিসিআরপি) গত জানুয়ারি মাসে তাদের ওয়েবসাইটে সোবহানের নিউ ইয়র্কে ৯টি অ্যাপার্টমেন্ট ক্রয় সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
সেই প্রতিবেদনের আলোকেই আদালতে বিষয়টি অনুসন্ধান চেয়ে রিট করেন তিনি।
নিউ ইয়র্কের সম্পত্তি এবং আদালতের নির্দেশনা সম্পর্কে বক্তব্য জানতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বিশেষ সহকারী আবদুস সোবহানের সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে আদালতের নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে চাইলে দুদক কমিশনার মো. জহুরুল হক গণমাধ্যম কে বলেন, “আদালতের নির্দেশনা মানতে আমরা সাংবিধানিকভাবে বাধ্য। অবশ্যই আদালতের নির্দেশের কপি হাতে পেলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

যা করেছেন সোবহান : গত ১৩ জানুয়ারি ওসিসিআরপি’র প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবদুস সোবহান মিয়া, যিনি স্থানীয়ভাবে গোলাপ নামে পরিচিত, যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছেন।
বিষয়টি নির্বাচনী হলফনামায় তিনি এই সম্পত্তি সম্পর্কে কিছু উল্লেখ করেননি। আবদুস সোবহান ২০১৪ সালে প্রথম নিউ ইয়র্কে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই বছর নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় একটি সুউচ্চ ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন তিনি।
পরের পাঁচ বছরে তিনি নিউ ইয়র্কে মোট ৯টি ফ্ল্যাটের মালিক হন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নিউ ইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে পাঁচটি কনডোমিনিয়াম কিনেছিলেন আবদুস সোবহান। সে সময় ওই সম্পত্তির মূল্য ছিল প্রায় ২৪ লাখ ডলার। এ ছাড়া আশপাশের ভবনগুলোতে ৬ লাখ ৮০ হাজার ডলার মূল্যের তিনটি অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন তিনি, বলা হয় প্রতিবেদনে।

নিউ ইয়র্কে কেনা এসব সম্পত্তির নথিপত্র বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সোবহান তাঁর সম্পত্তিগুলো নগদ অর্থে কেনেন এবং এগুলোর মালিকানায় রয়েছেন তাঁর স্ত্রী গুলশান আরাও।

আবদুস সোবহানের সম্পত্তি সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়, সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি জ্যাকসন হাইটসে আরো একটি সম্পত্তি ক্রয় করেন। ওই সম্পত্তির মূল্য ছিল প্রায় ১২ লাখ ডলার। এতে বলা হয়, ২০১৯ সালের ১৫ আগস্ট তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব ত্যাগ করার সাত মাস আগে তিনি বাংলাদেশে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

প্রতিবেদনটি বলছে, নিউইয়র্কে স্বল্প বেতনে কাজ করার সময় আবদুস সোবহান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। ২০০৯ সালে আবদুস সোবহানকে প্রধানমন্ত্রীর ‘বিশেষ সহকারী’ হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার পাঁচ বছর পরই তিনি নিউ ইয়র্ক সিটির কুইন্সে রিয়েল এস্টেট অধিগ্রহণ শুরু করেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এক সময় নিউ ইয়র্কে ক্যাব চালক থাকলেও ২০১৪ সালে আবদুস সোবহান নিউ ইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে একটি বহুতল ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট কেনা শুরু করেন। সম্পদ ক্রয়ের এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকে পরবর্তী পাঁচ বছরজুড়ে।
আশির দশকে বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর তিনি কম বেতনের নানা রকম কাজ করেছেন জানিয়ে প্রতিবেদনটি বলছে, এক সময় পিজ্জা তৈরি করা এবং ওষুধের দোকানের সহকারী হিসাবেও কাজ করেছেন বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান এই নেতা।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *