নিখোঁজের ৮ দিন পর শিশু আবেদা সুলতানার মৃতদেহ উদ্ধারসহ ১ জন কে গ্রেফতার করলো পিবিআই চট্টগ্রাম

অপরাধ চট্টগ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক : নিখোঁজের ০৮ দিন পর শিশু আবেদা সুলতানার মৃতদেহ সহ ঘটনা সংশ্লিষ্ট আলামত উদ্ধার এবং ঘটনার সাথে জড়িত আসামী রুবেল কে গ্রেফতার করেছে পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রো।


বিজ্ঞাপন

২৯ মার্চ, রাত্রি অনুমান ১ টা ৩০ মিনিটের সময় পাহাড়তলী থানার কাজিরদিঘী একালায় তার নিজ বসত বাড়ী থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী রুবেল হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকার করে এবং তার দেখানো মতে অপহৃত ভিকটিম আবেদা সুলতানার লাশ উদ্ধার করা হয়।

গত ২১ মার্চ, অনুমান বিকাল ৪ টা ২৪ মিনিটের সময় ভিকটিম আবেদা সুলতানা মহিলা হুজুরের কাছে আরবী পড়তে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয। রাতে বাসায় ফিরে না আসায় ভিকটিমের মাতা সহ পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে ভিকটিমের মাতা পাহাড়তলী থানায় গিয়ে নিখোঁজ ডায়রী করেন। ২৩ মার্চ, সকাল অনুমান ১১ টার সময় ভিকটিমের মাতা নিখোঁজ জিডি’র অনুলিপি নিয়ে পুলিশ সুপার পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো এর কার্যালয়ে আসেন এবং পুলিশ সুপার মহোদয়ের নিকট তাঁর মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে আইনগত সহায়তা প্রার্থানা করেন। তার পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ঘটনার বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করেন।

পিবিআই প্রধান, অ্যাডিশনাল আইজিপি, বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম (বার), পিপিএম এর সঠিক তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা, পিপিএম-সেবা’র নেতৃত্বে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো এর আভিযানিক টীম ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে ঘটনাস্থল রোড সমূহের সিসিটিভি, ভিকটিমের পরিবারের তথ্যাদি বিশ্লেষন করে স্থানীয় তরকারী বিক্রেতা রুবেল‘কে সনাক্ত করে। পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো এর আভিযানিক টীম ঘটনার সহিত জড়িত সন্দেহে ২৯ মার্রা, রত্রি অনুমান ১ টা ৩০ মিনিটের সময় পাহাড়তলী থানার কাজিরদিঘী একালায় তার নিজ বসত বাড়ী থেকে তাকে গ্রেফতার করে।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী রুবেল জানান, বিগত ৩ মাস পূর্বে তরকারী বিক্রয়কালে একটি বিড়াল ছানা ধরতে গিয়ে রিক্সার সাথে ভিকটিম আবেদা সুলতানার ধাক্কা লেগে যাওয়ায় ভিকটিমের সাথে আসামী রুবেল এর পরিচয় হয় এবং বিবি খাদিজার নাতিন হিসেবে জানতে পারেন। মেয়েটি তখন রুবেলের নিকট বিড়াল ছানার আবদার করেছিল এবং রুবেলও তার বোনের বাসা হতে বিড়াল এনে দিবে মর্মে অঙ্গীকার করেছিল। গত ২০ মার্চ, ভিকটিম আবেদা সুলাতানা তার অপর এক বান্ধবীকে নিয়ে রুবেলের বাসায় বিড়াল ছানা খোঁজে যায় কিন্তু রুবেলের সাথে দেখা হয় নাই।

পরবর্তীতে ভিকটিমের বাসার নীচে তরকারী বিক্রয়কালে রুবেলের সাথে বেলা ১১ টার পর ৫ মিনিট কথা হয়। ঐ সময় ভিকটিমকে রুবেল বিকেলে একটি নিদিষ্ট স্থানে বিড়াল ছানা নেওয়ার জন্য আসতে বলে। ভিকটিম আবেদা সুলতানা বিকালে ঐ স্থানে গিয়ে রুবেলের দেখা না পেয়ে চলে আসে। পরবর্তীতে ২১ মার্চ, সকালে ভিকটিম রুবেলকে স্কুলের রাস্তার সামনে বিড়াল ছানার কথা জিজ্ঞেস করে, তখন রুবেল ভিকটিমকে স্কুল শেষে ক্লাবের পাশে নিদিষ্ট স্থানে আসতে বলে।

সে মোতাবেক বিকাল অনুমান সাড়ে ৪ টার পর ভিকটিম আবেদা সুলতানা (১১) স্কুল হতে বাসায় যায় এবং স্কুল ড্রেস চেঞ্জ করে পূনরায় হিজাব পরে বের হয়ে মোঃ রুবেলের কথা মত বিড়াল আনতে যায়। রুবেল তখন বোরখা পরিহিত আবেদা সুলতানাকে চিনতে পারেনি। ভিকটিম নিজ থেকে রুলেবকে ডাকলে রুবেল ভিকটিমকে তার ফুফুর বিল্ডিং এর ৪র্থ তলার খালি বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে ভিকটিমকে ধর্ষন করে এবং তখন ভিকটিম আত্ন-চিৎকার করলে তাকে গলা টিপে এবং বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে।

ঐ দিন রাত্রি অনুমান ৯ টার পর ভিকটিমের লাশ একটি একটি বস্তায় ভর্তি করে তরকারীর গাড়ীতে ত্রিফল দ্বারা আবৃত করে পাহাড়তলী থানাধীন ১১নং দক্ষিন কাট্টলী ওয়ার্ডস্থ মুরগী ফার্ম বাজার সংলগ্ন আলম তারা পুকুরের ডোবায় ফেলে আসে। রাত্রি অনুমান ১০ টার পর আসামী রুবেল ভিকটিমের পরিহিত কাপড়, পায়জামা ও স্যান্ডেল কনকা সিএনজি ষ্টেশনের দক্ষিনপার্শ্বস্থ নালায় ফেলে দেয়। ঘটনার পর হতে প্রতিদিন রুবেল ঐ খানে গিয়ে লাশের অবস্থা দেখত এবং খড় দিয়ে ঐ বস্তাটি লোকজনের দৃষ্টির আড়াল করতে ঢেকে দিত।

বুধবার ২৯ মার্চ, ভোর অনুমান ৫ টা ১৫ মিনিটের সময় আসামী রুবেল এর দেখানো মতে পাহাড়তলী থানাধীন ১১নং দক্ষিন কাট্টলী ওয়ার্ডস্থ মুরগী ফার্ম বাজার সংলগ্ন আলম তারা পুকুরের ডোবা আবর্জনার মধ্যে চটের বস্তায় বাঁধা অবস্থায় অপহৃত ভিকটিম আবেদা সুলতানার এর অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী রুবেল হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকার করায় তাকে ফৌঃ কাঃ বিঃ এর ১৬৪ ধারা মতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্য আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *