নিজস্ব প্রতিনিধি : টেকনাফে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র পৃথক অভিযানে ১,২০,৮০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ ৪ জন মাদক পাচারকারী আটক হয়েছে, এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ মহিউদ্দীন আহমেদ, বিজিবিএমএস।

জানা গেছে, বর্তমান সরকারের মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি যথাযথ বাস্তবায়নকল্পে মাঠ পর্যায়ে বিজিবি’র গোয়েন্দা তৎপরতা ও অভিযানিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে।

এরই ধারাবাহিকতায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) কর্তৃক পরিচালিত পৃথক তিনটি অভিযানে ১,২০,৮০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১টি মোটরসাইকেল ও ১টি কাঠের নৌকাসহ ৪ জন মাদক পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে।
শুক্রবার ৫ মে, সকালে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবি’র টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক জানতে পারেন যে, বিজিবি’র টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এর অধীনস্থ উনচিপ্রাং বিওপি’র দায়িত্বপূর্ণ এলাকা দিয়ে মাদকের একটি চালান মায়ানমার হতে বাংলাদেশে আসতে পারে।
উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে বিজিবি’র উনচিপ্রাং বিওপি’র একটি টহলদল উনচিপ্রাং গ্রামের সাইফুলের ঘের এলাকায় গিয়ে ঘেরের আইলের পিছনে আঁড় নিয়ে কৌশলগত অবস্থান করে।
আনুমানিক ৯ টার সময় বিজিবি টহলদল দুইজন ব্যক্তিকে একটি কাঠের নৌকাযোগে মায়ানমার হতে নাফ নদী অতিক্রম করে ২নং বিজিবি পোস্ট সংলগ্ন খাল দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আসতে দেখে তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হওয়ায় বিজিবি টহলদল উক্ত ব্যক্তিদেরকে চ্যালেঞ্জ করে।
বিজিবি’র উপস্থিতি টের পেয়ে তারা নৌকা হতে লাফিয়ে দ্রুত দৌড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বিজিবি টহলদল চারদিক থেকে ঘেরাও করে টেকনাফের রইক্ষ্যং দক্ষিণপাড়া গ্রামের রনো বড়ুয়া (৪০) এবং ২২ নম্বর উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা ক্যাম্প, ব্লক-বি/৫, শেল্টার নং-১৫০৮ এর বাসিন্দা সেলিম (৩৫) নামে ২ জনকে আটক করতে সক্ষম হয়। পরবর্তীতে তাদের ব্যবহৃত নৌকা তল্লাশি করে একটি মাছের ঝুড়ির ভেতর থেকে ১,০০,০০০ (এক লক্ষ) পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়। অবৈধ মাদকদ্রব্য বহনের জন্য ব্যবহৃত নৌকাটিও জব্দ করা হয়।
অপরদিকে,বিজিবি’র নিজস্ব গোয়েন্দা সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, টেকনাফ ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপূর্ণ মেরিন ড্রাইভ অথবা টেকনাফ-কক্সবাজার মহাসড়ক দিয়ে মাদকদ্রব্য পাচার হতে পারে।
উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে দমদমিয়া চেকপোস্ট, হোয়াইক্যং চেকপোস্ট এবং শীলখালী অস্থায়ী চেকপোস্টে তল্লাশী কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়। আনুমানিক সকাল ১১ টা ৫০ মিনিটের সময় টেকনাফ থেকে কক্সবাজারগামী একটি মোটরসাইকেল শীলখালী অস্থায়ী চেকপোস্টের কাছে আসলে কর্তব্যরত বিজিবি সদস্যরা তল্লাশীর জন্য মোটরসাইকেলটি থামায়।
মোটরসাইকেল চালকের আচরণ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় এবং পূর্ব হতেই প্রাপ্ত বর্ণনা অনুযায়ী সন্দেহভাজন মোটরসাইকেল মিলে যাওয়ায় উক্ত মোটরসাইকেলটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তল্লাশী করে মোটরসাইকেলের তেলের ট্যাংকির ভিতর অভিনব পদ্ধতিতে লুকানো অবস্থায় ২০,২০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
অবৈধ মাদকদ্রব্য বহনের জন্য ব্যবহৃত মোটরসাইকেলসহ চালক টেকনাফের সাবরাং কুরা বুইজ্যাপাড়া গ্রামের মৃত কালা মিয়ার ছেলে ওমর ফারুক (২৪)-কে আটক করা হয়। আটককৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে দীর্ঘদিন যাবৎ সড়কপথ ব্যবহার করে টেকনাফ হতে কক্সবাজারে ইয়াবা ট্যাবলেট পাচার করে আসছে।
এছাড়া একই দিনে সকালে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এর অধীনস্থ হোয়াইক্যং চেকপোস্টে বিজিবি কে-৯ এর ডগ এমি (জার্মান শেফার্ড, পুরুষ, মাদকদ্রব্য) ও হ্যান্ডেলার কর্তৃক টেকনাফ হতে কক্সবাজারগামী পালকি পরিবহনের একটি বাসে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
এসময় ডগ এমি বাসের যাত্রী চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার লোহাগাড়া জমিদারপাড়ার শফিকুল আলমের ছেলে বেলাল উদ্দিন (৩৭) এর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ঘ্রাণ শুঁকে যাত্রীর পরিহিত আন্ডার ওয়্যারের ভেতরে অভিনব কায়দায় লুকানো অবস্থায় ৬০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে।
আটককৃত মাদক পাচারকারীদেরকে জব্দকৃত ইয়াবা ট্যাবলেট, মোটরসাইকেল এবং নৌকাসহ নিয়মিত মামলার মাধ্যমে টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তর করার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উক্ত অভিযানের বিষয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ মহিউদ্দীন আহমেদ, বিজিবিএমএস, জানান,
জাতীয় ও জনস্বার্থে বিজিবি’র টেকনাফ ব্যাটালিয়নের এধরণের অভিযান পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।