নিজস্ব প্রতিবেদক : বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর ৯৯তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র জনসংযোগ কর্মকর্তা মো: শরিফুল ইসলাম, (পিবিজিএমএস) স্বাক্ষরিত এক পত্র অনুযায়ী এ খবর পাওয়া গেছে।
রবিবার ৭ মে, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর ঐতিহ্যবাহী প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ (বিজিটিসিএন্ডসি)-এর বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর ৯৯তম রিক্রুট ব্যাচের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এমপি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে নবীন সৈনিকদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন।
অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম নাজমুল হাসান, বিএএম, এনডিসি, পিএসসি এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, বিপিএএ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এসময় বিজিবি’র উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার অঞ্চলের সেনাবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসন ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
রবিবার ৭ মে, সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সশস্ত্র সালাম প্রদানের মধ্য দিয়ে নবীন সৈনিকদের শপথ গ্রহণ ও প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজে অভিবাদন গ্রহণ শেষে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনামূলক ভাষণ প্রদান করেন।
ভাষণের শুরুতে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একইসাথে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী বিজিবি’র ২ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ৮ জন বীরউত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম এবং ৭৭ জন বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত বীরসহ ৮১৭ জন অকুতোভয় বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কিংবদন্তির মহানায়ক বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই বাহিনী তাঁরই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী দিকনির্দেশনায় আজ একটি সুসংগঠিত, চৌকস, সুশৃঙ্খল ও পেশাদার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
বিজিবি ‘সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী’ হিসেবে বাংলাদেশের ৪,৪২৭ কি.মি. দীর্ঘ সীমান্ত সুরক্ষা, সীমান্ত ভূমি ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি সীমান্তে চোরাচালান ও মাদক পাচাররোধ, নারী ও শিশু পাচারসহ যেকোনো আন্ত:সীমান্ত অপরাধ দমন, বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় অত্যন্ত দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করে সকলের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিজিবিকে একটি অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বিজিবি’র সাংগঠনিক কাঠামোতে ব্যাপক পরিবর্তন এনে বিজিবিকে একটি ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে উন্নীত করা হয়েছে।
বিজিবি এখন জল, স্থল ও আকাশপথে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনে সক্ষম। স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্ট এর অংশ হিসেবে অত্যাধুনিক সার্ভেইলেন্স ইকুইপমেন্ট স্থাপন, অত্যাধুনিক যুগোপযোগী ও কার্যকর এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন্স, এটিভি, এপিসি, রায়ট কন্ট্রোল ভেহিক্যাল এবং এয়ার বোটসহ দ্রুতগামী জলযান সংযোজন করা হয়েছে।
এছাড়াও বিজিবি’র প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ডের কলেবর বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ (বিজিটিসিএন্ডসি), বায়তুল ইজ্জত, সাতকানিয়ার পাশাপাশি চুয়াডাঙ্গায় আরও একটি আধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধা সম্বলিত ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
নবীন সৈনিকদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “শৃঙ্খলা হচ্ছে সৈনিকের মূল পরিচিতি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না সে-ই প্রকৃত সৈনিক। সততা, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভরযোগ্যতা, আনুগত্য, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাঠি।’ নবীন সৈনিকরা এসব গুণাবলির প্রতিফলন ঘটিয়ে বাহিনীর ঐতিহ্যকে সমুন্নত রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র চারটি মূলনীতি-‘মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও দক্ষতা’-এ উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হয়ে বিজিবি’র উপর অর্পিত যেকোন দায়িত্ব সুশৃঙ্খল ও সুচারুরূপে পালন করে দেশের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষার সুমহান দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ১৯৭৪ সালের ০৫ ডিসেম্বর তৎকালীন বিডিআর-এর ৩য় ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত চোরাচালান বিরোধী ও প্রেষণামূলক বক্তব্যের কথা স্মরণ করে চোরাচালান রোধে নবীন সৈনিকদেরকে পেশাগত দক্ষতা অর্জনসহ ব্যক্তিগতভাবে সুদৃঢ়, সুশৃঙ্খল, নির্ভীক ও নির্লোভ চরিত্রের অধিকারী হয়ে নিজেদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সবর্দা সচেষ্ট থাকার আহ্বান জানান।
তিনি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র নবীন সৈনিকদের প্রদর্শিত তেজোদীপ্ত কুচকাওয়াজের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন এবং নবীন সৈনিকদের নতুন জীবনে পদার্পনের শুভলগ্নে তাদের স্বাগত জানান।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, এমপি প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে ৯৯তম রিক্রুট ব্যাচের সেরা চৌকস রিক্রুট হিসেবে ১ম স্থান অধিকারী বক্ষ নম্বর-৪৬৬ রিক্রুট (জিডি) মোঃ সুহেল মিয়া এবং অন্যান্য বিষয়ে সেরা সৈনিকদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন।
এরপর নবীন সৈনিকদের চৌকসদল কর্তৃক মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আবারও সশস্ত্র সালাম প্রদানের মাধ্যমে কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। পরিশেষে বিজিবি’র প্রশিক্ষিত সদস্যদের অংশগ্রহণে আকর্ষণীয় ট্রিক ড্রিল এবং বিজিবি’র সুসজ্জিত বাদকদল কর্তৃক মনোজ্ঞ ব্যান্ড ডিসপ্লে প্রদর্শন করা হয়।
উল্লেখ্য, ৯৯তম রিক্রুট ব্যাচের মৌলিক প্রশিক্ষণ গত ২০ নভেম্বর ২০২২ তারিখে বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ (বিজিটিসিএন্ডসি)-তে শুরু হয়। প্রশিক্ষণ ভেন্যুতে সর্বমোট ৫৩৯ জন রিক্রুটের মধ্যে ৫০২ জন পুরুষ এবং ৩৭ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছে।
দীর্ঘ ২৪ সপ্তাহের অত্যন্ত কঠোর ও কষ্টসাধ্য এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ করে আজ আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ও সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে তাদের সৈনিক জীবনের শুভ সূচনা হলো।