কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : মামলার আসামি হয়েও চাকরিতে বহাল তবিয়তে ভূমি অফিসের নায়েব আব্দুল্লাহ আল হাদী। তিনি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে একটি-দুটি নয় চারটি মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে একটি মামলায় তাকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে কিশোরগঞ্জ মডেল থানা। বাড়ি দখল, মারামারি ও প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে হাদির বিরুদ্ধে। শুধু হাদী নয় তার স্ত্রী ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে রয়েছে এরকম অভিযোগ।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, ভূমি অফিসের নায়েব হাদী শহরের আলোর মেলা নতুন স্টেডিয়াম এলাকায় প্রায় ৪ কোটি টাকা মূল্যের একটি বাড়ি কম মূল্যে রেজিস্ট্রি বায়না করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে সবার চোখ ফাঁকি দিতে হাদী নিজের নামে বায়নাকৃত বাড়িটি তার শাশুড়ির নামে রেজিস্ট্রি করে নেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বাড়িটির মালিক বেলজিয়াম প্রবাসী মাজেদুল হক শিকদার।
বেলজিয়াম প্রবাসী মাজেদুল হক শিকদার ও মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০৭ সালে তার বড় বোনকে তখনকার সময় খালি জমি আমমোক্তারনামা (পাওয়ার অব অ্যাটর্নি) ১২০ দিনের জন্য দিয়েছিলেন। এ সময় তার বোন জমিটি বিক্রি করার পায়তারা করলে, কিশোরগঞ্জ ডিসি অফিসে বাতিলের আবেদন করে উক্ত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বাতিল ও না মঞ্জুর করান। অতঃপর ২০১৫ সালে প্রবাসী মাজেদুল হক শিকদার দেশে ফিরে নিজ নামে জমিটি খারিজ করে কিশোরগঞ্জ পৌরসভা থেকে বিল্ডিং নির্মাণের জন্য পাঁচতলার প্ল্যান পাস করিয়ে একতলা পর্যন্ত কাজ সম্পন্ন করেন। ২০১৬ সালে তিনি বেলজিয়াম চলে গেলে তার বাবা তার জায়গা বিল্ডিং দেখাশুনা করে আসছিলেন।
ইতোমধ্যে তার বড় বোন মনোয়ারা আক্তার ২০০৭ সালের বাতিলকৃত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ডিসি অফিসের আবু বকর সিদ্দিক নামক একজন অসাধু ক্লার্কের সহযোগিতায় বাতিল হওয়ার বিষয়টি গোপন করে ২০১৭ সালে রি স্ট্যাম্প করে নেয় যা; বিধিবহির্ভূত। অতঃপর মনোয়ারা নিজের নামে ভুয়া দলিল তৈরি করে প্রথমে তার স্বামীর নিকট বিক্রির একটি দলিল তৈরি করে এবং পুনরায় নিজ নামে হেবাসূত্রে ফিরিয়ে আনে এবং মাজেদুলের জায়গা বিল্ডিংসহ বিক্রির চেষ্টা শুরু করে। এ সব ঘটনা তিনি ২০২১ সালে জানতে পারেন। অনুসন্ধান করে তিনি ঘটনার সত্যতা পান।
তখনই তিনি দলিল বাতিলের মামলা করেন এবং সব ডকুমেন্ট দেখে, এ সময় কোর্ট স্থিতাবস্থা জারি করে।কিন্তু কোর্টের আদেশ অমান্য করে বিভিন্ন অসাধু মহলের সহায়তায় যশোদল ভূমি অফিসের নাজির আব্দুল্লাহ আল হাদী নাম মাত্র মূল্যে জমিটি রেজিস্ট্রি বায়না করে।
এক পর্যায়ে বিষয়টি জানাজানি হলে হাদী সবার চোখ ফাঁকি দিতে তার নিজ নামের পরিবর্তে তার শাশুড়ির নামে বাড়িটি রেজিস্ট্রি করে নেয়। ২০২৩ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি মাজেদুলের বাংলাদেশে আসার খবর শুনে ২০ ফেব্রুয়ারি তার অধীনে থাকা বাড়িটি যশোদলের নায়েব হাদী জোর করে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় রাতারাতি দখল করে নেয়।
মাজেদুল আরও জানান, তিনি কোনো মারামারি হানাহানি চান না বলেই কোনো জোরজবরদস্তিতে না গিয়ে নিজের বাড়ি রেখে ভাড়া বাসায় অবস্থান করছেন এবং মনোয়ারা, হাদী, আবু বক্করের মত অসাধু প্রতারকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে কোর্টের রায়ের আশায় দিন যাপন করছেন।
অভিযুক্ত যশোদল ভূমি অফিসের নায়েব আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, কেও যদি আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করে আমার কিছু বলার নাই। তবে বাড়ির মালিক আমার শাশুড়ি।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমের এক কর্মীকে জানান,, ‘মামলার বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। আপনার কাছ থেকে এখন জানলাম। এমন হলে আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’