নিজস্ব প্রতিবেদক : যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ থেকে সম্প্রচারিত জনপ্রিয় স্যাটেলাইট টেলিভিশন বাংলা টিভি দখলের জন্য একটি কুচক্রিমহল ষড়যন্ত্রে নেমেছে। জানাগেছে,যার নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ছেন বঙ্গবন্ধুর খুনির ছেলের ব্যবসায়িক পার্টনার,বর্তমানে আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠে সওয়ার একজন বহুরুপি লন্ডন প্রবাসি। ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দেশের সুশিল সমাজ,সাংবাদিক সংগঠন ও প্রবাসিদের পক্ষ থেকে জনপ্রিয় চ্যানেলটি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি উদাত্ত আহবান জানানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাগেছে,ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে চাপ প্রয়োগ করে কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই চ্যানেলটির শেয়ার দাবি করছে একটি চক্র। কিন্তু চ্যানেলটির প্রকৃত মালিক ও শেয়ারহোল্ডাররা তাতে রাজি না হওয়ায় তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। হুমকি-ধমকিসহ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) এবং দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) চ্যানেলের শেয়ার কেনা-বেচার নামে অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের ভূয়া অভিযোগও দেয়া হয়েছে।
এমতাবস্থায় চ্যানেলের মূল মালিক বৃটেন প্রবাসী সৈয়দ সামাদুল হক চ্যানেলটি টিকিয়ে রাখতে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করেছেন। এ ছাড়া বিষয়টি নিয়ে বৃটেন প্রবাসীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। একজন বৃটেন প্রবাসী অভিজাত জীবনযাপন ছেড়ে দেশকে ভালোবেসে দেশে বিনোয়োগ করে নানাভাবে অপদস্থ হচ্ছেন এমন আলোচনাও রয়েছে প্রবাসে। এই ষড়যন্ত্র রোধ করা না গেলে প্রবাসীরা দেশে বিনিয়োগে নিরুৎসায়িত হবেন বলে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন।
সূত্রমতে, বাংলা টিভি’র সাবেক এক শেয়ারহোল্ডার সরকারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে যোগসাজশ করে চ্যানেলটি কব্জায় নিতে চাইছেন। ১৯৯৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসী সৈয়দ সামাদুল হক লন্ডনে বাংলা টিভির যাত্রা শুরু করেন। তখন চ্যানেলটির শেয়ারহোল্ডার ছিলেন তিনজন। পরে আরও দু’জনকে শেয়ারহোল্ডার হিসেবে নেয়া হয়। শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে গোলাম দস্তগীর নিশাত ২০০১ সালে পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে তিনি আর এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত ছিলেন না। শুরু থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত একটানা চ্যানেলটি সম্প্রচারে ছিল। এরমধ্যে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে চ্যানেলটির অনুমোদন নেন সামাদুল হক।
২০১৭ সালে লন্ডনে বাংলা টিভির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে ২০১৭ সালের মে মাসে দেশে চ্যানেলটির সম্প্রচার শুরু করেন। এ সময় চ্যানেলের ৯০ শতাংশ শেয়ার ছিল সামাদুল হকের আর বাকি ১০ শতাংশ তার ভাগ্নে মীর নুর উস সামস শান্তুনুর। পরে সামাদুল হক তার ৯০ শতাংশ শেয়ার থেকে আকতার গ্রুপের কাছে ৩৭ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দেন। ৩৭ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে আকতার ফার্নিচারের মালিক কে এম আকতারুজ্জমান, কে এম রিফাতুজ্জামান ও মনিরুল ইসলাম নামের একজন রয়েছেন। বতর্মানে আকতারুজ্জামান বাংলা টিভির চেয়ারম্যান, সামাদুল ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মনিরুল ভাইস চেয়ারম্যান, রিফাতুজ্জামান ও নুর উস সামস শান্তুনু পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর বাইরে আর কারও কাছে চ্যানেলটির শেয়ার বিক্রি করেননি সামাদুল হক।
কিন্তু প্রভাবশালী মহলটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে শেয়ার দাবি করে হয়রানি করছে। তারা সামাদুল হক ছাড়া অন্য শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরকে কব্জায় নেয়ার চেষ্টা করেছিল। তাদেরকে বলা হয়েছিল সামাদুল হকের বিরুদ্ধে টাকা দিয়েও শেয়ার বুঝে পায়নি এমন অভিযোগ করার জন্য। কিন্তু অন্য শেয়ারহোল্ডাররা প্রভাবশালী মহলকে জানিয়ে দিয়েছে তারা টাকা বিনিয়োগও করেছেন শেয়ারও বুঝে পেয়েছেন। পরে সুবিধা না পেয়ে কুচক্রি মহলটি দুদক ও এনবিআর-এ উদ্দেশ্য প্রনোদিত মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলা টিভি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ সামাদুল হক বলেন, এটা হাস্যকর একটি বিষয়। টেলিভিশনের মালিক আমি। শেয়ারও বিক্রি করেছি আমি। তাহলে আমার টাকা আমি কীভাবে আত্মসাৎ করলাম? আমার ভাগ্নের কাছে ১০ শতাংশ ও আকতার ফার্নিচারের কাছে ৩৭ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করেছি। বাকি শেয়ারের মালিক আমি। যাদের কাছে শেয়ার বিক্রি করেছি তাদের কোনো অভিযোগ নাই। কারণ তারা জানে শেয়ার বিক্রির টাকা আবার টেলিভিশনে বিনিয়োগ করেছি। সুতরাং সেখানে আত্মসাতের অভিযোগ আসে কীভাবে? তিনি বলেন, একটি প্রভাবশালী মহল আমার কাছে সরাসরি চ্যানেলের শেয়ার দাবি করেছে। কিন্তু আমি তাদেরকে কেন শেয়ার দিবো। তারা বিনিয়োগ করেনি। এ সংক্রান্ত কোনো ডকুমেন্টও কারও কাছে নাই। তারা চাপ প্রয়োগ করে শেয়ার বাগিয়ে নিতে চাইছে। আমি রাজি না হওয়াতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে দুদকে আমার বিরুদ্ধে শেয়ার কেনা-বেচার নামে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ এনেছে। যার কোনো বাস্তবতা ও যৌক্তিকতা নাই। আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা,উদ্দেশ্য প্রনোদিত,মানহানিকর এবং ষড়যন্ত্রমূলক। অনৈতিক সুবিধা নিতে না পেরে কুচক্রি মহল কেবল বাংলা টিভি’র সুনাম ক্ষুন্ন ও হয়রানি করার জন্যে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে মিথ্যা বানোয়াট অভিযোগ দায়ের করেছে।
তিনি আরো বলেন,২০১৭ সালে টেলিভিশনটির যাত্রা শুরু করার পরে অনেক সংগ্রাম করেছি। করোনাভাইরাসের দুই বছরসহ মোট ৪ বছর আমাকে অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছে। চলতি বছরে এসে মোটামুটি একটা পর্যায়ে পৌঁছেছি। আর তখনই শকুনের নজর পড়েছে। আমি একজন প্রবাসী। ৪০ বছর ধরে সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত। বৃটেনেও বাংলা টিভি আমার হাত ধরে চালু হয়েছিল। পরে সেখান থেকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও প্রয়াত সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরীর সহযোগিতায় ও প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় বাংলাদেশে চ্যানেলের অনুমোদন পাই। কিন্তু আমার মতো প্রবাসীর সঙ্গে এ রকম হয়রানিমূলক আচরণ করা হয় তবে যেকোনো প্রবাসী বাংলাদেশে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হবে।