বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করবে ইউনেস্কো

অন্যান্য জাতীয় বিবিধ

এইচ এম মেহেদী হাসান

 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সর্বাধিনায়ক, বাঙালি জাতির পিতা, সারা বিশ্বের নির্যাতিত নিষ্পেষিত জাতির মহান নেতা, মহাকালের মহানায়ক এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু ১৪৪ সালে কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠিত নিখিল বঙ্গ মুসলিম ছাত্রলীগের সম্মেলনে যোগদান করেন। এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি রাজনীতিতে অভিষিক্ত হন। এই বছরই ফরিদপুর ডিস্টিক্ট এসোসিয়েশনের সম্পাদক নিযুক্ত হন।
১৯৪৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কলকাতা ইসলামি কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সহকারী নিযুক্ত হন। এই বছরই প্রাদেশিক নির্বাচনে তিনি মুসলিম লীগের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৭ সালে বঙ্গবন্ধু কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। ১৯৪৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, ঢাকায় গণতান্ত্রিক যুব কর্মীদের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করেন। ১৯৪৮ সালের ২ মার্চ, রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে বঙ্গবন্ধুর প্রস্তাবে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। ১৯৪৮ সালের ৪ মার্চ তিনি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন এবং আন্দোলন সংগ্রামের সূতিকাগার সূচনা করেন। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ, রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সাধারণ ধর্মঘট আহ্বানকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন। ১৯৪৮ সালের ১৫ মার্চ, বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তি পান। মুক্তি লাভের পর ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ছাত্র-জনতার সভার আয়োজন করা হয়। এই সভায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। সভায় পুলিশ হামলা চালায়। পুলিশি হামলার প্রতিবাদ সভা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৭ মার্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানান। ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরের কর্ডন প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আবার গ্রেফতার হন। ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তি পান। ১৯৪৯ সালের ৩ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা তাদের দাবি দাওয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে ধর্মঘট ঘোষণা করলে বঙ্গবন্ধু তার প্রতি সমর্থন জানান। ১৯৪৯ সালের ২৯ মার্চ আন্দোলনে যোগ দেয়ার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুকে অযৌক্তিকভাবে জরিমানা করে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার প্রতি সমর্থন জানান। ১৯৪৮ সালের ২০ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সৃষ্ট আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয় এবং জেলে থাকা অবস্থায় বঙ্গবন্ধু যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কত গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন ওই সময়ই তা বুঝা যায়। ১৯৪৯ সালের ২৭ জুলাই বঙ্গবন্ধু জেল থেকে মুক্তি পান। মুক্তি পেয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে না গিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ১৯৪৯ সালে পূর্ব বাংলায় দুর্ভিক্ষ শুরু হলে খাদ্যের দাবিতে তিনি আন্দোলন শুরু করেন।
১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি এই আন্দোলনের কারণে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৫২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলা রাষ্ট্রভাষার দাবিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কারাগারে অনশন শুরু করেন। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদ মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। শহীদ হন সালাম, রফিক, বরকতসহ অনেকে। জেল থেকে বঙ্গবন্ধু এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেন এবং একটানা ৩ দিন অনশন অব্যাহত রাখেন।
১৯৫২ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি টানা অনশনে অসুস্থ বঙ্গবন্ধুকে স্বাস্থ্যগত কারণে মুক্তি দেয়া হয়। ১৯৫৩ সালের ১৬ নভেম্বর প্রাদেশিক আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রথম সাধারণ নির্বাচনে সব বিরোধী দল মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে। ১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ সাধারণ নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩টি আসনে বিজয়ী হয়। বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের আসনে বিজয়ী হন। ১৯৫৪ সালের ২ এপ্রিল যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। ১৯৫৪ সালের ১৪ মে বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভায় বয়ঃকনিষ্ঠ মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালের ৩০ মে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা বাতিল করেন। বঙ্গবন্ধু এ দিনই করাচি থেকে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন এবং গ্রেফতার হন। ১৯৫৪ সালের ২৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু জামিনে মুক্তি পেলে জেল গেটেই তাঁকে নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৫৪ সালে বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তি পান। ১৯৫৫ সালের ৫ জুন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৫ সালের ১৭ জুন ঢাকার পল্টনের জনসভা থেকে বঙ্গবন্ধু প্রথম পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন দাবি করেন। ১৯৫৫ সালের ২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশন ধর্ম নিরপেক্ষতা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দ প্রত্যাহার করে নতুন নামকরণ করা হয় ‘আওয়ামী লীগ’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পুনরায় দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শাহেদ আলীর ওপর আক্রমণ এবং তার মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করে। ১৯৫৮ সালের ১২ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এসময় তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেয়া হয়। ১৯৫৯ সালের ৫ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান কিন্তু তার গতিবিধির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এ সময় বঙ্গবন্ধু বার বার গ্রেফতার হন এবং ছাড়া পান।
১৯৬২ সালের ২ জুন চার বছরের সামরিক শাসনের অবসান ঘটলে ১৮ জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তি লাভ করেন। ১৯৬৪ সালে ২৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়। ১৯৬৪ সালের ৫ মার্চ ও ১১ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিরোধী ‘দাঙ্গা প্রতিরোধ’ কমিটি গঠিত হয়। ১৯৬৪ সালের ২৬ জুলাই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সম্মিলিত বিরোধী দল কঅপ (কম্বাইন্ড অপজিশন পার্ট গঠিত হয়)। ১৯৬৫ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ১৪ দিন আগে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে ৬ দফা গৃহীত হয়। এরপর তিনি ৬ দফার পক্ষে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেন। এ সময় তাঁকে সিলেট, ময়মনসিংহ ও ঢাকা বার বার গ্রেফতার করা হয়। ৩ মাসে তিনি ৮ বার গ্রেফতার হন। শেষ বার তাঁকে গ্রেফতার করে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়। ১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে এক নম্বর আসামি করে মোট ৩৫ জন বাঙালি সেনা ও সিএসপি অফিসারের বিরুদ্ধে ‘পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার’ অভিযোগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। ১৯৬৮ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতে লিখিত বিবৃতি দেন। এই বিবৃতি পড়ে বঙ্গবন্ধুর মুক্তি ও তাঁর মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ছাত্র সমাজ ছয় দফার সমর্থনে ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করে। ১৯৬৯ সালের ৩০ জানুয়ারি উদ্ভূত পরিস্থিতি ঠেকাতে আলোচনার জন্য বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাব দেয় পাকিস্তান জান্তা সরকার। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সে প্রস্তাব ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৬৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের অভ্যন্তরে মামলার অন্যতম আসামি সার্জেন্ট জহুরুল হককে নির্মমভাবে হত্যা করা হলে বিক্ষুব্ধ জনতা বাঁধ ভাঙা বন্যার মতো রাস্তায় নেমে আসে। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তীব্র গণআন্দোলনের মুখে সরকার ‘রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য’ শিরোনামে মিথ্যা মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ডাকসু এবং ছাত্রলীগ রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমানকে এক বিশাল সংবর্ধনা দেয়ার আয়োজন করে। ওই সভায় শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। ১৯৬৯ সালের ১০ মার্চ রাজনৈতিক সংকট নিরসনে আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেন। গোল টেবিলে ৬ দফার পক্ষে বঙ্গবন্ধু দৃঢ় অবস্থান নেন। তবে ওই বৈঠক ব্যর্থ হয়। ১৯৬৯ সালের ২৫ মার্চ রাওয়ালপিন্ডি গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ হওয়ার প্রেক্ষিতে আইয়ুব খান ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। ইয়াহিয়া সামরিক শাসন জারি করেন। ১৯৬৯ সালের ২৮ নভেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে এক বেতার ভাষণে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ এর ১ জানুয়ারি থেকে রাজনৈতিক কর্মকা-ের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। ওই বছরের শেষ ভাগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথাও ঘোষণা করেন। ১৯৭০ সালের ১ জানুয়ারি; ১৯৫৮ সালের পর প্রথম রাজনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। বঙ্গবন্ধু প্রথম দিন থেকেই ৬ দফার পক্ষে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেন। ১৯৭০ সালের ৪ জুন নির্বাচনকে সামনে রেখে মতিঝিল ইডেন হোটেল প্রাঙ্গণে আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। কাউন্সিলে আওয়ামী লীগ এককভাবে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ১৯৭০ সালের ৫ জুন পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচনী এলাকা বিষয়ে সরকারের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদে ৩১০টি আসন আর জাতীয় পরিষদে ১৬৯টি আসন নির্দিষ্ট করা হয়। ১৯৭০ সালের ১৫ আগস্ট প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন যথাক্রমে ৭ ও ১৭ ডিসেম্বর। ১৯৭০ সালের ৮ অক্টোবর ইসলামাবাদ থেকে ১৯টি রাজনৈতিক দলের প্রতীক ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগকে নৌকা প্রতীক বরাদ্দ করা হয়। স্মরণীয় যে, ১৯৫৪ সালে পূর্ব বাংলার সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রতীক ছিল নৌকা। ১৯৭০ সালের ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু বেতার ও টেলিভিশনে নির্বাচনী ভাষণ দেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দিয়েই আওয়ামী লীগের জন্ম। তার সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে দিয়েই আওয়ামী লীগের বিকাশ’। তিনি দেশবাসীর কাছে ছয় দফার পক্ষে ম্যান্ডেট চান। ১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বর পূর্ব বাংলায় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছ্বাসে ১০-১২ লাখ মানুষ মারা যান। বঙ্গবন্ধু তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা স্থগিত করে ত্রাণ কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তিনি এই অঞ্চলের জনগণের প্রতি চরম উদাসীনতা তুলে ধরেন। এই সময় ‘সোনার বাংলা শশ্মান কেনো’ শিরোনামে তথ্য সম্বলিত একটি পোস্টার জাতিকে নাড়া দেয়। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর বন্যা-দুর্গত এলাকা বাদে জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ ১৬৭টি আসন পেয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। পাকিস্তান পিপলস পার্টি পায় ৮৮টি আসন। ১৯৭০ সালের ১৭ ডিসেম্বর প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তান ২৯৮ আসন লাভ করে। ১৯৭১ সালের ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের সব নির্বাচিত সদস্য ৬ দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন তথা ৬ দফা বাস্তবায়নের শপথ গ্রহণ করেন। ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ এই রবীন্দ্র সংগীতের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হয়। বঙ্গবন্ধু ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে বাঙালি জাতির মুক্তির সংকল্প ব্যক্তি করেন। শপথ অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী সংগীতের পর ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ গানটি পরিবেশিত হয়। ১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তিন দফা বৈঠক করেন। ৪ দিন পর ফিরে আসার সময় তিনি বলেন ‘শেখ মুজিব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন। ১৯৭১ সালের ২৭ জানুয়ারি জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকা এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেন। কিন্তু ভুট্টোর সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হয়। ১৯৭১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এক সরকারি ঘোষণায় বলা হয় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা কর।
সারা বাংলা ক্ষোভে ফেটে পরে। বিক্ষুব্ধ জনসমুদ্র পরিণত হয় রাজপথ। বঙ্গবন্ধু এটাকে শাসকদের আরেকটি চক্রান্ত বলে চিহ্নিত করেন। তিনি ২ মার্চ ঢাকায় এবং ৩ মার্চ সারা পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল আহ্বান করেন। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল পালিত হয়। উত্তাল জনস্রোতে ঢাকা পরিণত হয় এক বিক্ষোভের শহরে। জান্তা সরকার ঢাকা শহরের পৌর এলাকায় সন্ধ্যা থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত কারফিউ জারি করে। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ বিক্ষুব্ধ জনতা কারফিউ উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসে। সামরিক জান্তার গুলিতে মারা যান ৩ জন, আহত হন কমপক্ষে ৬০ জন। এই সময় পুরো দেশ বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক যুগান্তকারী ভাষণে ঘোষণা করেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণে স্পষ্ট হয়ে যায় স্বাধীন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। সারাদেশে শুরু হয় এক অভূতপূর্ব অসহযোগ আন্দোলন। ১৯৭১ সালের ১৬ মার্চ বিস্ফোরণের মুখে বাংলাদেশে আসেন ইয়াহিয়া খান। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার দীর্ঘ আলোচনা শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু তাঁর গাড়িতে কালো পতাকা উড়িয়ে হেয়ার রোডে প্রেসিডেন্ট ভবনে আলোচনার জন্য যান। ১৯৭১ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫১তম জন্মদিন। এই দিন ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনা থেকে ফিরে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন এদেশে জন্ম দিনই বা কি আর মৃত্যু দিনই বা কি, আমার জনগণই আমার জীবন। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ প্রতিরোধ দিবস পালনের ঘোষণা দেন। সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি ভবনে ‘বাংলাদেশের’ জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু এদিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ সার্চ পৃথিবীর ইতিহাসে এক নৃশংসতম কালো রাত্রি ২৫ মার্চ। এদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে মানুষের ঢল নামে। সন্ধ্যায় খবর পাওয়া যায় ইয়াহিয়া ঢাকা ত্যাগ করেছেন। এ সময় বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। রাত সাড়ে এগারোটায় শুরু হয় ‘অপারেশন সার্চ লাইট’। ইতিহাসের জঘণ্যতম গণহত্যা। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ১২টা ৩০ মিনিট, ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হওয়ার আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাবার্তা ওয়ারলেসযোগে চট্টগ্রামের জহুরুল আহমেদ চৌধুরীকে প্রেরণ করেন। চট্টগ্রাম বেতার থেকে আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার বাণী স্বকণ্ঠে প্রচার করেন। পরে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে করাচিতে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার ভবের পাড়ার (বৈদ্যনাথ তলা) আমবাগানে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ঘোষণা করেন আজ থেকে (১৭ এপ্রিল) বৈদ্যনাথ তলার নাম মুজিব নগর এবং অস্থায়ী রাজধানী মুজিব নগর থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনা করা হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং তাঁর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু হয়। এই কেন্দ্রের সিগনেচার টিউন ছিল ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’। কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রচারিত হতে থাকে। এই কেন্দ্র থেকে প্রচারিত শোন একটি মুজিবরের কণ্ঠে…. গানটি বাঙালির উদ্দীপনা বাড়িয়ে দেয়। ১৯৭১ সালের ৩ আগস্ট পাকিস্তান টেলিভিশন থেকে বলা হয় ১১ আগস্ট থেকে সামরিক আদালতে বঙ্গবন্ধুর বিচার শুরু হবে। এই ঘোষণায় বিশ্বব্যাপী প্রতিবাদ এবং উদ্বেগের ঝড় বয়ে যায়। বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রবাসী বাঙালিরা আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন আইনজীবী সন ম্যাকব্রাইডকে ইসলামাবাদে পাঠান। কিন্তু পাকিস্তানি জান্তা সরকার বিদেশি আইনজীবী নিয়োগে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করে। ১৯৭১ সালের ১০ আগস্ট পাকিস্তানি জান্তা সরকার বঙ্গবন্ধুর পক্ষ সমর্থনের জন্য আইনজীবী একে ব্রোহীকে নিয়োগ দেয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে যখন ২৬ মার্চ ইয়াহিয়া খানের ভাষণের টেপ শোনানো হয় তখন তিনি আত্মপক্ষ সমর্থনে অস্বীকার করেন এবং ব্রোহীকে অব্যাহতি দেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের পক্ষে ব্যাপক জনমত তৈরি হয়। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবতা স্পর্শ করতে থাকে। ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর বঙ্গবন্ধুকে ইয়াহিয়া খানের সামনে হাজির করা হয়। ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে ছিল ভুট্টো এবং জেনারেল আকবর। ইয়াহিয়া করমর্দনের জন্য হাত বাড়ালে বঙ্গবন্ধু বলে দুঃখিত ও হাতে বাঙালির রক্ত লেগে আছে, ও হাত আমি স্পর্শ করব না। এ সময় অনিবার্য বিজয়ের দিকে এগুতে থাকে আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের মুক্তির সংগ্রাম যখন বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে তখন লায়ালাপুর কারাগারে ইয়াহিয়া বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সমঝোতার প্রস্তাব দেন। কিন্তু ওই সমঝোতা প্রস্তাব বঙ্গবন্ধু ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিজয়ের মাত্র দুই দিন আগে বেছে বেছে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে পাকিস্তানি হায়েনা ও তাদের দোসরেরা। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ত্রিশ লক্ষ শহীদ এবং দুই লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আসে আমাদের বিজয়। বাঙালি জাতি মুক্ত হয় পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে। কিন্তু মুক্তির অপূর্ণতা রয়ে যায় স্বাধীনতার স্থপতি তখন নির্জন কারাগারে। ১৯৭২ সালের ৩ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচিতে ঘোষণা করেন শেখ মুজিবকে বিনা শর্তে মুক্তি দেয়া হবে। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তি পান। পিআইয়ের একটি বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনে পাঠানো হয়। ৮ জানুয়ারি ভোরে বঙ্গবন্ধু লন্ডনে পৌঁছেন। তাঁর হোটেলের সামনে এক জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণা করেন আমি আমার জনগণের কাছে ফিরে যেতে চাই। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি সকালে তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হীর্থের আগ্রহে ব্রিটেনের রাজকীয় বিমান বাহিনীর এক বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধু নয়া দিল্লি পৌঁছলে রাষ্ট্রপতি ভি.ভি গিরি এবং প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানান। বিমান বন্দরে বঙ্গবন্ধু বলেন অশুভের বিরুদ্ধে শুভের বিজয় হয়েছে। ওইদিন বিকেলে ভারতীয় বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে বঙ্গবন্ধু ঢাকা বিমান বন্দরে অবতরণ করেন। লাখো মানুষের জনস্রোত, বাঁধ ভাঙা আবেগে অশ্রুসিক্ত জাতির পিতা বলেন আজ আমার জীবনের স্বাদ পূর্ণ হয়েছে। ওই দিন জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু হৃদয়কাড়া এক ভাষণ দেন। ওই রাতেই তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি দেশে রাষ্ট্রপতি শাসনের পরিবর্তে সংসদীয় শাসন কাঠামো প্রবর্তন করে নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন করে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ১৯৭২ সালের ১২ মার্চ স্বাধীনতার মাত্র ৫০ দিনের মধ্যে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার শুরু হয়। ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ শোষণহীন সমাজ গঠনের অঙ্গীকারের মধ্যে দিয়ে প্রথম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়। ১৯৭২ সালের ২০ এপ্রিল শুরু হয় গণপরিষদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কিত প্রস্তাব উত্থাপন করলে তা সর্বসম্মতিক্রমে পাস হয়। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে বাংলাদেশের খসড়া শাসনতন্ত্র অনুমোদিত হয়। এ উপলক্ষে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন বিজয়ের ৯ মাসের মধ্যে শাসনতন্ত্র দেয়া, মানুষের মৌলিক অধিকার দেয়ার অর্থ হলো জনগণের ওপর বিশ্বাস করি। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর নতুন সংবিধান কার্যকর করা হয়। বাতিল করা হয় গণপরিষদ। ১৯৭২ সালের ৭ মার্চ নতুন সংবিধানের আওতায় বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে জাতির পিতার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৯২টি আসনে বিজয়ী হয়। ১৯৭৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম বাঙালি নেতা হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলা ভাষায় বক্তৃতা দেন। ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি দেশে বিরাজমান পরিস্থিতি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু জাতীয় সংসদে চতুর্থ সংশোধনী বিল পাস করেন। এই বিলের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি এক ডিগ্রির মাধ্যমে সমস্ত রাজনৈতিক দলের সম্মিলনে ‘বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ নামে একটি নতুন একক রাজনৈতিক দল গঠন করেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে। তারা ভেবেছিল যে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে তাঁর স্মৃতি মুছে ফেলা সম্ভব হবে। কিন্তু না, চাঁদ-সুরুজের মতো তিনি আরও বেশি আলোকিত হন এবং সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি রূপে আবির্ভূত হন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান যৌথভাবে উদযাপন করবে জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো এবং বাংলাদেশ। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শুরু হয়ে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হবে। বঙ্গবন্ধুর নামে আগামী বছর থেকে একটি পুরস্কার প্রবর্তন করতে যাচ্ছে ইউনেস্কো। গবেষণা ও সৃজনশীলতার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিকাশে তরুণদের উৎসাহিত করতে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। এর আগে ২০১৭ সালের অক্টোবরে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ইউনেস্কো। আগামী বছরের ১০ জানুয়ারি থেকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের ক্ষণ গণনা শুরু হবে। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ বিকেলে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। ওই অনুষ্ঠানে একাধিক বিশ্বনেতা উপস্থিত হবেন। বছরজুড়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্যে বিশ্বের নানা প্রান্তে সেমিনার ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। নিউইয়র্ক, লন্ডন, দিল্লি, কলকাতা, বার্লিন, টোকিওসহ বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে আন্তজার্তিক গণমাধ্যম, সম্মেলন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ১২টি স্বল্পদৈর্ঘ্য, ১২টি তথ্য চিত্র এবং একটি ওয়েব সিরিজ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতা ও জাতিসত্তার প্রতীক। বঙ্গবন্ধু শুধু একজন ব্যক্তি নন। তিনি একটি প্রতিষ্ঠান। একটি আন্দোলন। একটি বিপ্লব। একটি অভ্যুত্থান। জাতি নির্মাণের কারিগর। একটি ইতিহাস। তিনি অমর, অবিনশ্বর। তিনি বিশ্বের সমগ্র নির্যাতিত-বঞ্চিত মানুষের নেতা।
তাইতো এই মহান নেতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপিত হবে সারা বিশ্বে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর মধ্য দিয়ে আরও একবার বাঙালি জাতিকে বিশ্ব দরবারে মহিমান্বিত করে যাবে। তিনি বাঙালি জাতিকে আজও দিয়েই যাচ্ছেন। তাইতো তিনি ক্ষণজন্মা।
লেখক : কলামিষ্ট, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি।


বিজ্ঞাপন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *