নতুন ও ভয়ংকর মাদক মাস্কিডাস, ছবি সংগ্রিহীত।
নিজস্ব প্রতিবেদক : ভয়ংকর মাদক মাঙ্কি ডাস্ট নিয়ে চিন্তিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) কর্মকর্তারাই। তাঁদের আশঙ্কা, যুক্তরাজ্যে ল্যাবরেটরিতে তৈরি সিনথেটিক এই মাদক প্রবাসীদের মাধ্যমে দেশে ঢুকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ জন্য বিমান বন্দরসহ সারা দেশে ডিএনসি ও পুলিশের সব ইউনিটকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। যুক্তরাজ্য থেকে আসা সব ফ্লাইট ও যাত্রীদের, বিশেষ করে ঘন ঘন যুক্তরাজ্যে যাতায়াতকারী তরুণদের ওপর নজরদারি করতে বলা হয়েছে।
ডিএনসির পরিচালক (অপারেশন ও ইন্টেলিজেন্স) তানভীর মমতাজের সই করা এক স্মারকে গত সোমবার এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, এই সিনথেটিক মাদকটি দেশের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। জানতে চাইলে তানভীর মমতাজ গতকাল বুধবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নতুন এই মাদকের বিষয়ে আমরা সতর্ক রয়েছি। মাদকের ধরন, সম্ভাব্য সেবনকারী, মাদকটি আসার রুট বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ইউনিটকে জানানো হয়েছে।
ডিএনসির কর্মকর্তাদের সূত্র বলছে, মাঙ্কি ডাস্ট খুবই ভয়ংকর। এটি সেবনে সব বিবেচনা লোপ পায়। সেবনকারীর নিজের প্রতি কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। এটি দামে সস্তা, কিন্তু এর প্রভাব তীব্র ও দীর্ঘস্থায়ী; যা ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এটিতে আসক্ত ব্যক্তি হ্যালুসিনেশন, অস্বাভাবিক ও হিংস্র আচরণ করে থাকে। মাঙ্কি ডাস্ট সেবনে হার্টের সমস্যা ও কিডনি নষ্ট হয়।
ডিএনসির বিশেষ প্রতিবেদন বলছে, যুক্তরাজ্যে মাদকটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় এটির বাংলাদেশে আসাও তেমন কঠিন হবে না। কারণ, বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে লেখাপড়া করেন। সেখানে প্রবাসী বাংলাদেশিও লাখ লাখ। এই শিক্ষার্থী ও প্রবাসীরা বিভিন্ন সময়ে দেশে আসছেন। তাই বিমানবন্দর দিয়ে মাদকটি দেশে ঢুকে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য মাঙ্কি ডাস্টের প্রবেশ ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মাঙ্কি ডাস্ট ক্যাথিনোন থেকে তৈরি হয়। ক্যাথিনোন হলো একধরনের প্রাকৃতিক উত্তেজক, যা উদ্ভিদে পাওয়া যায়। সাধারণত সাদা, হলুদাভ বা বাদামি পাউডারের মতো এই মাদক ম্যাজিক ক্রিস্টাল, মিথানল অথবা পাইরোভালেরোন নামেও পরিচিত। এটি ধূমপানের মাধ্যমে সেবন করা হয়, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইনজেকশনের মাধ্যমেও নেওয়া হয়।
ডিএনসির সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, নতুন এই মাদক যুক্তরাজ্যের স্টোক-অন-ট্রেন্ট এবং স্ট্যাফোর্ডশায়ারে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। ল্যাবে তৈরি সিনথেটিক এই মাদক বহু জীবন ও পরিবার ধ্বংস করে দিয়েছে। গত ১২ মে এই মাদককে ক্ষতির দিক থেকে ‘এ’ ক্লাস (প্রথম সারির) হিসেবে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। ইউএনওডিসির সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরও বিষয়টি আমলে নেয়।
২০ আগস্ট সতর্কবার্তা দেওয়ার কয়েক মাস আগে মাঙ্কি ডাস্টের বিষয়টি অধিদপ্তরের নজরে আনেন অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগের উপ-পরিচালক (গোয়েন্দা) মোহা. জিললুর রহমান। চলতি বছরের ১৫ মে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে তিনি অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানান এবং দেশে প্রবেশ ঠেকাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি গণমাধ্যম কে বলেন, নতুন মাদকের প্রতি মাদকসেবী তরুণদের ঝোঁক থাকে। প্রবেশ পথ গুলোতে নজর রাখতে পারলে এই মাদক ঠেকানো সম্ভব।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে এ পর্যন্ত ২৫ ধরনের মাদক শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ইয়াবা, হেরোইন, কোকেন, আফিম, গাঁজা, ফেনসিডিল ও ইনজেকটিং ড্রাগ অন্যতম। এগুলো গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। গত তিন বছরে মাদকের তালিকায় যোগ হয়েছে ম্যাজিক মাশরুম, নিউ সাইকো অ্যাকটিভ সাবস্টেশন (এনপিএস) বা খাট, ডায়মিথাইলট্রিপ্টামিন (ডিএমটি), লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইইথাইলামাইড (এলএসডি), ক্রিস্টাল মেথ বা আইস বা মেথামফেটামিন। সর্বশেষ যোগ হয়েছে পোল্যান্ড থেকে আসা ডিওবি। নতুন মাদকে আসক্তিও দ্রুত বাড়ছে।
ডিএনসির অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. আজিজুল ইসলাম গণমাধ্যম কে বলেন, দেশের তরুণ সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। নতুন মাদকগুলোর বিস্তার রোধেও কাজ চলছে।