স্ব স্ব দেশে রাজনীতি, দুর্নীতি ও মানবাধিকার বিষয়ে সাংবাদিকতা করতে গিয়ে ক্ষমতাসীনদের রোষানলে পড়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৩৩ জন নারী সাংবাদিক। কারারুদ্ধ থাকা ৩৩ নারী পেশাজীবীর মধ্যে একজন ছাড়া পেয়েছেন গত মাসে। ৩২ জন বন্দি রয়েছেন এখনো। লড়াকু এসব নারী সাংবাদিকের কারাবন্দি হওয়ার তথ্য প্রকাশ করেছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)।
শুক্রবার বিশ্বব্যাপী উদযাপন হয়েছে নারী দিবস। নারী দিবসকে সামনে রেখে নিপীড়িত নারী সাংবাদিকদের দুরবস্থার বিষয়টি প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।
সিপিজের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৫১ জন কারাবরণ করা সাংবাদিকের মধ্যে নারী রয়েছেন ৩৩ জন। সাংবাদিকতার কারণেই কারাগারে যেতে হয়েছে তাদের। অধিকাংশ সাংবাদিক তুরস্ক ও চীনের। তুরস্কের ১৪ জন, চীনের ৭ জন, সৌদি আরবের ৪ জন, ভিয়েতনামের ২ জন, ইসরায়েল অধিকৃত ফিলিস্তিনের ২ জন, মিসরের ২ জন ও সিরিয়ার ১ জন।
তুরস্কের সাংবাদিক জেহরা দোগান রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতার অভিযোগে সাজা ভোগের পর গত মাস ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পান। বর্তমানে কারাবন্দি ৩২ নারী সাংবাদিকের মধ্যে ২৬ জন রাজনৈতিক নানা ইস্যুতে লেখালেখি করতেন। এ সাংবাদিকদের কেউ কেউ দুর্নীতি, মানবাধিকার ও রাজনীতি নিয়ে লেখার কারণে এবং কেউ কেউ সমঅধিকার নিয়ে কাজ করতে গিয়ে সাজা ভোগ করছেন। নারীদের গাড়ি চালনার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ায় চার নারী সাংবাদিককে বন্দি করেছে সৌদি আরব।
এর বাইরে কয়েকজন নারী সাংবাদিক আটকাবস্থায় যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। কারাভোগের পর মুক্তি পাওয়া নারীরা গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছেন অথবা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তাদের।
সিপিজের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের’ অভিযোগে তুরস্কের আয়সে নাজলি উলুজ্যাক ও হাতিজে দুমান এবং চীনের গুলমায়ের ইমিন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। তুরস্ক মোট ৬৮ জন সাংবাদিককে কারাগারে পাঠিয়েছে। এর মধ্যে দুমান যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। তিনি সবচেয়ে বেশি সময় যাবৎ আটক রয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, দুমান নিষিদ্ধ ঘোষিত মার্ক্সিস্ট লেনিনিস্ট কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। তিনি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর পাশাপাশি ‘সাংবিধানিক পরিবর্তনের চেষ্টা করেছিলেন’।
২০১৬ সালে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর তুরস্ক সরকার ব্যাপক ধরপাকড় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় আটক হন সাংবাদিক নাজলি। তিনি এখন যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করছেন। তুরস্ক জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করে জঙ্গি সংগঠনগুলোর মুখপত্রের অভিযোগে বন্ধ করে দেয় শতাধিক সংবাদ সংস্থা। চীনের গুলমায়ের ইমিন রাষ্ট্রের গোপন তথ্য ফাঁসের অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।