নিজস্ব প্রতিবেদক : বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর যশোর ও রংপুর রিজিয়নের রিজিয়ন কমান্ডার এবং ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এর সাউথ বেঙ্গল, নর্থ বেঙ্গল ও গৌহাটি ফ্রন্টিয়ারের ফ্রন্টিয়ার আইজি পর্যায়ে ৪ দিনব্যাপী (০২-০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩) সীমান্ত সম্মেলন আজ দুপুরে শেষ হয়েছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি’র রংপুর রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ মোরশেদ আলম এর নেতৃত্বে ২১ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিজিবি’র যশোর রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ, এসজিপি, এসপিপি, সহ উভয় রিজিয়নের অধীনস্থ সংশ্লিষ্ট সেক্টর কমান্ডারগণ, বিজিবি’র স্টাফ অফিসারবৃন্দ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর এবং যৌথ নদী কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে, বিএসএফ সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের আইজি শ্রী আয়্যুষ মানি তিওয়ারি, আইপিএস এর নেতৃত্বে ০৭ সদস্যের ভারতীয় প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ভারতীয় প্রতিনিধিদলে বিএসএফ নর্থ বেঙ্গল ও গৌহাটি ফ্রন্টিয়ারের আইজিগণ ছাড়াও সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের নোডাল অফিসার, ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দও অন্তর্ভূক্ত ছিলেন।
গত ২ সেপ্টেম্বর, যশোরে সীমান্ত সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। সম্মেলনে সীমান্ত হত্যা নিরসন, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মাদক পাচার, মানব পাচার রোধ, স্বর্ণ ও অস্ত্র চোরাচালান রোধসহ বিভিন্ন ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ এবং পারস্পরিক সম্প্রীতি ও আস্থা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়। ৪ দিনব্যাপী অত্যন্ত ফলপ্রসু আলোচনা শেষে মঙ্গলবার ৫ সেপ্টেম্বর, যৌথ আলোচনার দলিল স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে সম্মেলনটি শেষ হয়।
এ বারের সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্ত সমূহের সারসংক্ষেপ যথাক্রমে নিম্নরূপঃ
বিজিবি সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নিরস্ত্র বাংলাদেশী নাগরিকদের হত্যা/আহতের ঘটনা জোরালো ভাবে তুলে ধরে। এ প্রসঙ্গে বিজিবি বিএসএফকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ বিবৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় আনার জন্য আহ্বান জানায়। সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে বিএসএফের পক্ষ থেকে নন-লেথাল নীতি অনুসরণের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করা হয়।
উভয়পক্ষ সীমান্তে পেশাদারিত্বের সাথে যৌথভাবে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে রাত্রিকালীন যৌথটহল বৃদ্ধি, সীমান্তবর্তী এলাকার জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, জনসচেতনতা ও জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ, অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদানের ব্যাপারে সম্মত হয়।
আন্তঃ সীমান্ত অপরাধ যেমন- মাদক পাচার, অবৈধ অনুপ্রবেশ, মানব পাচার, স্বর্ণ, অস্ত্র, জাল মুদ্রার নোট প্রভৃতি চোরাচালান রোধে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা কার্যকরভাবে বাস্তবায়নের ওপর উভয় পক্ষ হতে গুরুত্বারোপ করা হয়। সীমান্ত অপরাধের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদান এবং তাদের সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে মাঠ পর্যায়ে শেয়ার করতেও উভয়পক্ষ সম্মত হয়।
আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘন করে উভয় দেশের নাগরিকদের অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম রোধকল্পে সীমান্তবর্তী এলাকায় জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রাখার ব্যাপারে উভয় পক্ষ কর্তৃক গুরুত্বারোপ করা হয়।
উভয়পক্ষ পারস্পরিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও আস্থা বৃদ্ধির জন্য গৃহীত নানামুখী উদ্যোগ বাস্তবায়নে পারস্পরিক সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে একমত হন। উভয়পক্ষ আগামী দিনে যৌথ খেলাধুলা, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি বিনিময়সহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক কর্মকান্ড পরিচালনা করতে সম্মত হয়েছেন।
উভয়পক্ষ পূর্বানুমতি ব্যতীত সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ না করার ব্যাপারে পারস্পরিক সম্মতি জ্ঞাপন করেন। এছাড়া সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বন্ধ থাকা উন্নয়নমূলক কাজসমূহ জয়েন্ট ভেরিভিকেশনের মাধ্যমে দ্রুত সমাধানের ব্যাপারে সম্মত হন এবং উভয়পক্ষ পরবর্তী সীমান্ত সম্মেলন সুবিধাজনক সময়ে ভারতে অনুষ্ঠানের ব্যাপারে একমত পোষণ করেন।
উল্লেখ্য, সম্মেলন শেষে আজ বিকেলে ভারতীয় প্রতিনিধিদল ভারতের উদ্দেশ্যে প্রত্যাবর্তন করে।