নিজস্ব প্রতিনিধি : পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ দক্ষিণ বাতাবাড়ীয়া ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এর সাবেক সভাপতি মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনকে ধারালো চাপাতি ও চাইনিজ কুড়াল দিয়ে নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে ১০জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৮জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন কুমিল্লার আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ২৯ ফেব্রুয়ারী দুপুরবেলা কুমিল্লার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইবুনাল এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোছাঃ মরিয়ম-মুন-মুঞ্জুরী এ রায় দেন।
মৃত্যু দণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন কুমিল্লা মনোহরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বাতা বাড়ীয়া গ্রামের তাজুল ইসলাম এর ছেলে মোঃ রিয়াদ হোসেন (পলাতক), মৃত আবুল বসর এর ছেলে মীর হোসেন ও আনোয়ার হোসেন, সামু @ সামছুল হক পাটোয়ারীর ছেলে মোঃ ইউসুফ (পলাতক), ছালেহ আহম্মদ এর ছেলে মিশু (পলাতক), শহীদ উল্লাহ মেম্বার এর ছেলে মোঃ রাজন (পলাতক), তাজুল ইসলাম এর ছেলে মানিক মিয়া (পলাতক), আবুল হোসেনের ছেলে মোঃ মিজানুর রহমান (পলাতক), সামু @ সামছুল হক পাটোয়ারীর ছেলে মোঃ ইসমাইল হোসেন ও মৃত সুলতান আহমদ এর ছেলে মোঃ রাশেদ (পলাতক)।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত আসামিরা হলেন কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলার বাতা বাড়ীয়া গ্রামের তাজুল ইসলাম এর ছেলে নোমান (পলাতক), সিরাজুল ইসলাম এর ছেলে সালাহ উদ্দিন এবং একই উপজেলার ভাউপুর গ্রামের হাজী আঃ সামাদ এর ছেলে আবুল কাশেম @ পিচ্চি কাশেম এবং দক্ষিণ বাতা বাড়ীয়া গ্রামের মৃত মৌলভী আলী আকবর এর ছেলে মোঃ শহীদ উল্লাহ মেম্বার এবং একই উপজেলার বাইশগাঁও গ্রামের নূুর আহম্মদ এর ছেলে মোঃ সালেহ আহম্মদ এবং একই উপজেলার বড় চাঁদপুর গ্রামের মৃত মন্তাজ @ মন্তাজুর রহমানের ছেলে স্বপন এবং একই উপজেলার বাইশগাঁও গ্রামের মোঃ সোহাগ (পলাতক)।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ২০১৬ সালের ১২ মে সন্ধ্যায় কুমিল্লা মনোহরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বাতা বাড়ীয়ার ফয়েজ এর চা দোকানে একা পাইয়া ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলম (৩৩) কে মারধর করিলে এলাকাবাসী আপোষ মীমাংসা করে দিলেও পরদিন ১৩ মে সকালে দন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হইয়া পূর্ব পরিকল্পিতভাবে বেআইনি জনতাবন্ধ হইয়া অনধিকারভাবে ঘরে প্রবেশ করিয়া বাড়ী-ঘর ভাংচুরসহ ভিকটিম জাহাঙ্গীর আলমকে চাপাতি ও চাইনিজ কুড়াল দিয়ে এলোপাথাড়ি ভাবে কোপাই রক্তাক্ত জখম করিলে স্থানীয়রা উদ্ধার করে সিএনজি যোগে উপজেলার লক্ষ্মণপুর বাজারস্থ সামছুল আলম জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় নিহতের ভাই কুমিল্লা মনোহরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ বাতা বাড়ীয়া গ্রামের মৃত আহসান উল্লাহ’র ছেলে আলমগীর হোসেন (৩০) বাদী হয়ে একই উপজেলার মোঃ ইউসুফসহ ১০জনের নাম উল্লেখ্যে অজ্ঞাতনামা ৮/১০জনকে আসামি করে মনোহরগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করিলে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ নাছির উদ্দিন ঘটনার তদন্তপূর্বক আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৭ সালের ৮ জুন আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
তৎপর মামলাটি বিচারে আসিলে ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর আসামিগণের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট ধারায় অভিযোগ গঠন করে রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে যুক্তিতর্ক শুনানি অন্তে দুইজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনাক্রমে উল্লেখিত আসামিগণের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারার বিধানমতে আসামি মোঃ রিয়াদ হোসেনসহ ১০জনকে মৃত্যুদণ্ড; সেই সাথে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড এবং আসামি সালাহ উদ্দিনসহ ৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড; সেই সাথে প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করেন আদালত।