পাথর লুটের তালিকায় ডিসি-এসপি-ইউএনও কোম্পানিগঞ্জ থানা-পুলিশ , জিবিসহ ৪২ জনের নাম

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ সিলেট

#  সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার পরিবর্তে পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক ও রাজনৈতিক নেতাদের অবৈধ স্বার্থরক্ষা করেছেন। লুটপাট ঠেকাতে সদিচ্ছা দেখাননি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও কোম্পানীগঞ্জে উপজেলায় দায়িত্ব পালন করা ৪ নির্বাহী অফিসার আজিজুন্নাহার, মোহাম্মদ আবুল হাছনাত, ঊর্মি রায় ও আবিদা সুলতানা  # 


বিজ্ঞাপন

দায়িত্বগ্রহণের প্রথম দিনে সাদাপাথর পর্যটন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন সিলেটের নতুন জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম।

 

সিলেট ব্যুরো প্রধান  :   সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী সাদাপাথর পর্যটন স্পট থেকে কয়েক মাসে কয়েকশ’ কোটি টাকা মূল্যের পাথর লুট হয়। এই লুটের সঙ্গে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষা সুবিধাভোগি ছিলেন প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর বাহিনীর সদস্যরাও।


বিজ্ঞাপন

পাথর লুটপাটের ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রাথমিক অনুসন্ধানে লুটপাটের নেতৃত্বে ছিলেন বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও আওয়ামী লীগের ৪২ জন নেতা ও ব্যবসায়ী। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ৪ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও বিজিবি সদস্যদের নামও উঠে এসেছে।


বিজ্ঞাপন

দুদকের প্রতিবেদনে বলা হয়, পাথর লুটরোধে ব্যবস্থা নেয়নি খনিজসম্পদ উন্নয়ন ব্যুরো। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষার পরিবর্তে পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, পরিবহন শ্রমিক ও রাজনৈতিক নেতাদের অবৈধ স্বার্থরক্ষা করেছেন।

লুটপাট ঠেকাতে সদিচ্ছা দেখাননি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান ও কোম্পানীগঞ্জে উপজেলায় দায়িত্ব পালন করা ৪ নির্বাহী অফিসার আজিজুন্নাহার, মোহাম্মদ আবুল হাছনাত, ঊর্মি রায় ও আবিদা সুলতানা।

এছাড়াও প্রতিবেদনে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের আল মাহমুদ আদনান ও বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে লুটপাট থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ।

দুদকের সিলেট সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাতের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি টিম গত ১৩ আগস্ট ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর এলাকা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তারা ১৬ আগস্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। দুদক আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ না করলেও প্রতিবেদনের কপি গণমাধ্যমকর্মীদের হাতে এসেছে।

তবে পাথর লুটে নাম আসায় বিষয়টিকে ভূয়া ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত দাবি করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, সিলেট মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. ফখরুল ইসলাম ও এনসিপির সিলেট জেলার প্রধান সমন্বয়কারী নাজিম উদ্দিন।

এদিকে পাথর লুটপাটের ঘটনার প্রেক্ষিতে গত সোমবার দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয় জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার আজিজুন্নাহারকে।

গত  বৃহস্পতিবার জেলা সার্কিট হাউসে বিদায়ী জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদের কাছ থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করেন নতুন জেলা প্রশাসক সারওয়ার আলম। এ সময় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খাঁন মোহাম্মদ রেজাউল নবীসহ প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘প্রকৃতিকন্যা হিসেবে সিলেটে পরিবেশকে ঠিক রেখে উন্নয়ন কাজের জন্য সিলেটের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষিত সমাজের সহযোগিতা প্রয়োজন।’ তবে পাথর লুটের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে প্রথম দিন কথা বলেননি নতুন জেলা প্রশাসক।

বিকালে সাদাপাথর পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, ‘লুণ্ঠিত পাথর উদ্ধার, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং স্থায়িভাবে পাথর চুরি ঠেকাতে কাজ করা হবে। অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে দুদক সিলেটের উপপরিচালক রাফী মো. নাজমুস সাদাৎ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, ‘গত ১৩ আগস্ট এনফোর্সমেন্ট পরিচালনা করে প্রাথমিকভাবে যে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেছে, তা নিয়ে ১৬ আগস্ট প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে গত  বৃহস্পতিবারও লুট হওয়া পাথর উদ্ধার অব্যাহত ছিল। র‌্যাব-৯ এর অভিযানে বিকেলে সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল এলাকা থেকে প্রায় ৩৭ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করা হয়। তবে পাথর জব্দের সময় তার মালিককে পাওয়া যায়নি বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায় র‌্যাব।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *