ডাক্তার ফারহানা : যে নারী তার স্বামীর যৌন দুর্বলতায় পাশে না দাঁড়িয়ে তাকে লজ্জা দেয়, সে কি আদৌ স্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা রাখে? কথাটা শুনেই তোমার কি গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো? রক্ত গরম হয়ে গেল? ভাবছো, এ কেমন নির্লজ্জ কথা! সব দোষ কি নারীর? একজন পুরুষ বিছানায় ব্যর্থ হলে তার দায়ভার কেন স্ত্রীর ঘাড়ে পড়বে?

থামো। একটু দম নাও। পুরোটা পড়ার আগে কোনো সিদ্ধান্তে এসো না। যদি রাগ, ক্ষোভ বা অপমান বোধ করো, তবে বুঝে নিও, এই লেখাটা তোমার জন্যই। কারণ সত্য সবসময় তেতো হয়, আর এই তেতো সত্যের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তোমাদের দাম্পত্যের সবচেয়ে মিষ্টি সমাধান।
তোমার স্বামী কি আজকাল তোমাকে এড়িয়ে চলছে? রাতের বেলা ঘুমানোর ভান করছে? কিংবা কাছে এলেও কি তার মধ্যে সেই আগের আগুনটা নেই? তুমি কি অনুভব করছো যে সে শারীরিক সম্পর্কে আগের মতো সক্ষম নয়?

আর তুমি কী করছো? মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে থাকছো? দীর্ঘশ্বাস ফেলছো? নাকি পরোক্ষভাবে তাকে বুঝিয়ে দিচ্ছো যে, “তোমাকে দিয়ে আর কিছু হবে না”?

যদি এর কোনো একটিও তুমি করে থাকো, তবে জেনে রাখো, তুমি শুধু তার সমস্যা বাড়াচ্ছো না, তুমি নিজের হাতে তোমাদের সম্পর্কটাকে গলা টিপে হত্যা করছো। কারণ পুরুষের যৌন শক্তি যতটা না শারীরিক, তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি মানসিক। তার পুরুষত্ব তার মস্তিষ্কে বাস করে, তার আত্মবিশ্বাসে বাস করে। আর তুমি যখন তাকে লজ্জা দাও, তখন তুমি তার সেই আত্মবিশ্বাসের শেষ অংশটুকুও ধ্বংস করে দাও। তার যদি কিছু করার ক্ষমতা থেকেও থাকে, তোমার অবহেলা আর তাচ্ছিল্য সেই ক্ষমতাটুকুও কেড়ে নেয়।
তুমি কি সত্যিই একজন “স্ত্রী” নাকি শুধুই একজন “রুমমেট”? : একবার নিজেকে প্রশ্ন করো তো। তুমি কি পারো না তার এই কঠিন সময়ে ঢাল হয়ে দাঁড়াতে? তুমি কি জানো, একজন স্ত্রী চাইলেই তার স্বামীকে এই অন্ধকার থেকে টেনে তুলতে পারে? হ্যাঁ, তুমিই পারো। তোমার হাতেই আছে সেই জাদুর কাঠি। কিন্তু তুমি কি সেটা ব্যবহার করতে জানো?
প্রথম ধাপ: রান্নাঘর হোক তোমার ভালোবাসার পরীক্ষাগার : ভালোবাসা শুধু মুখের কথায় হয় না, সেটা প্লেটেও সাজিয়ে দিতে হয়। তার যৌন শক্তি ফিরিয়ে আনার জন্য তোমাকে একজন পুষ্টিবিদের থেকেও বেশি স্মার্ট হতে হবে।
কী খাওয়াবে? তার খাবারের তালিকায় রাখো জিঙ্ক সমৃদ্ধ খাবার। যেমন—কুমড়োর বীজ, ঝিনুক, ডার্ক চকোলেট। এমন খাবার খাওয়াও যা তার শরীরে টেস্টোস্টেরন হরমোন উৎপাদনে ঝড় তুলবে। রসুন, কলা, ডিম, তরমুজ—এগুলো শুধু খাবার নয়, এগুলো তার শরীরের জন্য একেকটা শক্তিশালী ঔষধ।
কী বাদ দেবে? এবার শোনো আসল কথা। ভালোবাসা দেখিয়ে তার প্লেট থেকে কোন জিনিসগুলো সরাবে। অতিরিক্ত তেল, চর্বিযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড—এগুলো তার রক্তনালীকে সংকুচিত করে দেয়, যা সরাসরি তার পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলে। তার সিগারেট বা মদের অভ্যাস থাকলে, সেটা বন্ধ করার দায়িত্বও তোমার। মিষ্টি কথায়, ভালোবাসার আবদারে তাকে বোঝাও—এটা শুধু তার জন্য নয়, “আমাদের” জন্য কতটা জরুরি।
পারবে না তুমি এতটুকু করতে? নাকি বাইরের খাবারের অর্ডার দেওয়াই তোমার কাছে সহজ মনে হয়?
দ্বিতীয় ধাপ: শরীর নয়, আগে তার মন জয় করো : সহবাস মানে কি শুধু কয়েক মিনিটের শারীরিক মিলন? ছি! যদি এটাই ভেবে থাকো, তবে তুমি সম্পর্কের গভীরতাই বোঝোনি। সহবাস ছাড়াও সারাদিন তোমাদের মধ্যে দুষ্টু-মিষ্টি খুনসুটি চলতে হবে।
ইশারার ভাষা: যখনই সুযোগ পাবে, তার সাথে দুষ্টু ইশারা চালাও। চোখের ভাষায় কথা বলো। পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আলতো করে ছুঁয়ে যাও। তার কানের কাছে ফিসফিস করে এমন কিছু বলো যা শুধু তোমরা দুজনই বোঝো। এই ছোট ছোট ইঙ্গিতগুলো তার মস্তিষ্কে যৌনতার এক ইতিবাচক বার্তা পাঠায়।
ডাবল মিনিং কথা: সবসময় গুরুগম্ভীর কথা কেন? তার সাথে এমনভাবে কথা বলো যার দুটো মানে হয়। একটা সাধারণ, আরেকটা শুধুই তোমাদের ব্যক্তিগত। এই বুদ্ধির খেলা পুরুষরা দারুণ উপভোগ করে। এটা তাদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি করে এবং তাদের 느끼 করায় যে তুমি তাকে একজন প্রেমিক হিসেবে দেখো, শুধু স্বামী বা পরিবারের কর্তা হিসেবে নয়।
অনেক নারী ভাবে এগুলো করলে তাকে “নির্লজ্জ” মনে হবে। আর এটাই তোমাদের সবচেয়ে বড় ভুল। পুরুষরা তাদের স্ত্রীর এই আবেদনময়ী রূপ দেখতে ভালোবাসে। তুমি কি সেই ভালোবাসা থেকে তাকে বঞ্চিত করতে চাও?
তৃতীয় ধাপ: অতীতের ভুলগুলো মুছে দাও তোমার ভালোবাসা দিয়ে : অনেক পুরুষই বিয়ের আগে যৌবনের উত্তেজনায় অতিরিক্ত হস্তমৈথুন করে নিজের শরীরের ক্ষতি করে ফেলে। তাদের মধ্যে একটা ভুল ধারণা জন্মায় যে, হস্তমৈথুন আর সহবাস একই রকম। তারা ভাবে, যেভাবে দ্রুত বীর্যপাত করে সে একা চরম আনন্দ পায়, স্ত্রীরও হয়তো তেমনই হয়।
এখানেই তোমার ভূমিকা। তুমি তার শিক্ষক, তার বন্ধু। তাকে ভালোবাসার সাথে বোঝাতে হবে যে সহবাস একটা দ্বিপাক্ষিক যাত্রা। এটা কোনো দৌড় প্রতিযোগিতা নয়। এখানে একে অপরের আনন্দ, ছোঁয়া এবং অনুভূতিই আসল। তাকে শেখাও, নারীর শরীর কীভাবে সাড়া দেয়। তাকে বোঝাও, তোমার আনন্দ কিসে হয়। এই জ্ঞান তুমি ছাড়া আর কে তাকে দেবে?
চতুর্থ ধাপ: বিছানায় হও অভিনেত্রী, হও প্রেমিকা : শারীরিক মিলনের সময় মূর্তির মতো শুয়ে থেকো না। তোমার অনুভূতি প্রকাশ করো।
ভালোবাসার শব্দ: মিলনের সময় আবেগময় শব্দ করো, গঙ্গানির মতো আওয়াজ করো। এটা তাকে невероятно উত্তেজিত করবে। সে বুঝবে যে সে তোমাকে আনন্দ দিতে পারছে। এই অনুভূতি তার আত্মবিশ্বাসকে আকাশে তুলে দেবে।
আদরের ছোঁয়া: তার চুলে হাত বোলাও, তার পিঠে নখ দিয়ে হালকা আঁচড় কাটো, তাকে টেনে নিজের বুকের আরও কাছে নিয়ে আসো। তোমার শরীরের ভাষা দিয়ে তাকে বুঝিয়ে দাও যে তুমি তাকে কতটা চাইছো। এই কাজগুলো তার রক্তে অ্যাড্রেনালিনের প্রবাহ বাড়িয়ে দেবে এবং সে দ্বিগুণ শক্তি ফিরে পাবে।
শেষ কথা: যখন ভালোবাসা যথেষ্ট নয় : এত কিছুর পরেও যদি মনে হয় সমস্যাটা গভীর, তখন ইগোকে প্রশ্রয় দিও না। অনেক পুরুষ ডাক্তারের কাছে যেতে লজ্জা পায়, স্বীকার করতে চায় না।
এখানেই তোমার শেষ এবং সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা। তুমি নিজে উদ্যোগ নাও। তাকে বলো, “চলো, আমরা একসাথে একজন বিশেষজ্ঞের কাছে যাই। এটা শুধু তোমার সমস্যা নয়, এটা ‘আমাদের’ সমস্যা। আমরা একসাথে এর সমাধান করবো।”
যখন তুমি বলবে “আমাদের সমস্যা”, তখন দেখবে তার ভেতরের ভয় আর লজ্জা অর্ধেক কমে গেছে। সে ভরসা পাবে যে এই লড়াইয়ে সে একা নয়, তুমি তার সাথে আছো।
এখন সিদ্ধান্ত তোমার? : তুমি কি সেই লক্ষ লক্ষ নারীর মতো হবে, যারা স্বামীর এই সমস্যায় তাকে দোষারোপ করে, দূরে ঠেলে দেয় এবং নীরবে নিজেদের অতৃপ্তি নিয়ে বেঁচে থাকে?
নাকি তুমি হবে সেই স্মার্ট, সাহসী এবং প্রেমময়ী নারী, যে নিজের জ্ঞান, ভালোবাসা আর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে নিজের পুরুষকে আবার রাজার মতো ফিরিয়ে আনবে? যে নিজের হাতে নিজের সংসারের সুখকে গড়ে তুলবে? মনে রেখো, একজন সত্যিকারের “অর্ধাঙ্গিনী” শুধু সুসময়ে পাশে থাকে না, সে দুঃসময়ে ঢাল হয়ে দাঁড়ায়। এখন বলো, তুমি কে? একজন অভিযোগকারী? নাকি একজন সমাধানকারী? (ফেসবুক থেকে নেওয়া)