নিজস্ব প্রতিবেদক : বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে গতকাল শনিবার ২ মার্চ সকাল সাড়ে ১০ টায় ঢাকাস্থ বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি)-এ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে প্রযুক্তির ব্যবহারের গুরুত্ব নিয়ে এক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার) ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেনসহ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি ও স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
বাজার ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ করবে ”শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটি ও স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর বিতার্কিকগণ অংশগ্রহণ করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান তাঁর বক্তব্যের শুরুতে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় আয়োজনের জন্য ডিবেট ফর ডেমোক্রেসিকে এবং স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ইতোপূর্বে দেশের স্বনামধন্য ৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে ভোক্তা অধিকার বিষয়ক বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হয়েছে। তিনি জানান এ বছর বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবসকে জাতীয় পর্যায়ে ‘খ’ শ্রেণিভূক্ত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি ১৫ মার্চ বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে অধিদপ্তর কর্তৃক ৪টি ক্যাটাগরিতে ভোক্তা অধিকার বিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতা আয়োজন, ভোক্তা অধিকার বিষয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকর্মীদের ভোক্তা নিউজ রিপোর্টিং অ্যাওয়ার্ড প্রদান এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ যথাযথ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সুষম চর্চার স্বীকৃতিসরুপ ব্যবসায়ী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে বেস্ট প্রাকটিস অ্যাওয়ার্ড প্রদান বিষয়ে সম্যক ধারনা প্রদান করেন।
তিনি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী বিতার্কিকদের বক্তব্য শুনে অভিভূত হয়ে বলেন, আমরা চমৎকার ও প্রাণবন্ত একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতা উপভোগ করলাম এবং আমার মতে আজ এই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় দুই দলই বিজয়ী হয়েছে। মহাপরিচালক বর্তমান সমাজে বিদ্যমান ভোক্তা-অধিকার বিরোধী কাজের স্বরূপ তুলে ধরে তা প্রতিরোধে অধিদপ্তরের গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে সকলকে অবগত করেন। তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নসহ বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হলেও দেশে উৎপাদিত কৃষি পণ্য ডাব, আলু, পেঁয়াজ ইত্যাদির অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি কখনো কাম্য নয়।
মহাপরিচালক বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা। এই সচেতনতার অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে এই বিতর্ক প্রতিযোগিতা। তিনি আরও বলেন, ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ এর অংশ হিসেবে অধিদপ্তর যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ও ভোক্তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছে। অধিদপ্তরের নিজস্ব ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, CCMS(Consumer Complaint Management System) এর মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করা এই পদক্ষেপেরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সহজে স্বল্প সময়ে অধিকসংখ্যক ভোক্তাকে সচেতন করা যাচ্ছে।
তিনি জানান নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষত সয়াবিন তেল ও চিনির মূল্য (যা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঠিক করে দেয়) স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে অধিদপ্তর কর্তৃক রিফাইনারি থেকে পরিবেশক পর্যায় পর্যন্ত তেল ও চিনির মজুদ পরিস্থিতি জানার লক্ষ্যে SCMS(Supply Chain Management Software) শীর্ষক একটি অ্যাপস তৈরির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মাধ্যমে এসকল পণ্যের অবৈধ মজুদ সনাক্ত করা সহজ হবে এবং এর সাথে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অধিদপ্তর কর্তৃক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হবে।
তিনি ক্ষেত্র বিশেষে সময়ে সময়ে দেশে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের পাশাপাশি আমদানিকৃত পণ্যের যৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে সম্যক ধারনা প্রদানসহ পণ্যের অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারের অন্যান্য সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন। তিনি আরও বলেন, সরকার দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষক ও খামারীদের স্বার্থ বিবেচনায় সময়ে সময়ে কিছু পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং ভোক্তা স্বার্থ বিবেচনায় আবার সে সকল পণ্য আমদানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। দেশের বাজার ব্যবস্থার সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার পলিসি গ্রহণ করে।
মহাপরিচালক বলেন, কৃষিজ পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। তিনি ব্যবসায়ীদের সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান এবং সকলের সমন্বিত চেষ্টায় ভোক্তার স্বস্তি মিলবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দুষ্টচক্রের কারণে ন্যায্য দামে পণ্য কিনতে না পারায় ভোক্তারা কষ্টে আছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থাও দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। তাই ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে প্রযুক্তির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে কিনা তা ভাবিয়ে তুলছে ভোক্তাদের। তবে ভ্যাট ট্যাক্স সহনীয় রেখে উন্মুক্ত আমদানি, ডলার সংকট মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণ, ব্যাংকগুলোতে বাড়তি দামে ডলার বিক্রয় বন্ধে উদ্যোগ গ্রহণ, পরিবহণ চাঁদাবাজি বন্ধ করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে ভোক্তারা সঠিক
দামে পণ্য ক্রয় করতে পারবে। তিনি বলেন, পৃথিবীর সকল দেশে উৎসবে দ্রব্যমূল্যের দাম হ্রাস পায়, আমাদের দেশে কেনো উৎসব এলেই বা সুযোগ পেলেই এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী জিনিস পত্রের মূল্য বাড়িয়ে দেয়। কিছু কিছু কর্পোরেট কোম্পানি আছে তারা সবই নিয়ে নিতে চায়। তাই এ সকল অসাধু ব্যবসায়ী ও ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে রাজনৈতিক সদিচ্ছা পোষণ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে নিত্য পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখার প্রচেষ্টা থাকলেও রমজান শুরুর আগেই নিত্য পণ্যের মূল্য আরেক দফা বৃদ্ধি পেয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কবল থেকে বের হতে পারছে না ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস, চিনি, ছোলা, পেঁয়াজ, খেজুরসহ অন্যান্য নিত্যপণ্য। ইতোমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বেড়েছে। যা পরিবহণ ভাড়া বৃদ্ধিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য আরেক দফা বৃদ্ধি পেতে পারে । সরকার অতি প্রয়োজনীয় কিছু পণ্য সামগ্রীর উপর শুল্ক কমালেও দাম কমার কোন আভাস নেই। তিনি সকলের সমন্বিত সহযোগিতায় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
“বাজার ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ করবে” শীর্ষক ছায়া সংসদে সরকারি দল হিসেবে বিষয়ের পক্ষে সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি ও বিরোধী দল হিসেবে বিষয়ের বিপক্ষে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এর বিতার্কিকগণ অংশ গ্রহণ করেন।প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, সাংবাদিক জাকির হোসেন, সাংবাদিক উম্মান নাহার আজমী, সাংবাদিক মো: আলমগীর হোসেন এবং জনাব মো: আতিকুর রহমান।
“বাজার ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ করবে” শীর্ষক ছায়া সংসদ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বিরোধী দল স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ বিতর্ক প্রতিযোগিতার সরকারি দল সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটিকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ী দলকে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।