ডিপিডিসি’র উপসচিব আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে নিয়োগ, বদলী, প্রমোশন বানিজ্য, বিদেশ ভ্রমন ও স্পেশাল ট্রাস্কফোর্সের মাধ্যমে ব্যাপক ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি জাতীয় ঢাকা প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

ডিপিডিসি’র উপসচিব আসাদুজ্জামান।


বিজ্ঞাপন

 

 

নিজস্ব প্রতিবেদক :  ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ডিপিডিসি’র উপসচিব আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে নিয়োগ, বদলী, প্রমোশন বানিজ্য, বিদেশ ভ্রমন ও স্পেশাল ট্রাস্কফোর্সের মাধ্যমে ব্যাপক ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর এ অভিয়োগ দায়ের করা হয়েছে।

অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, উপসচিব আসাদুজ্জামান আসলে কি বিদ্যুৎ সচিব? নাকি কোম্পানির সচিব? তিনি নর্থ সিটি করপোরেশনে থাকা অবস্থায় দুর্নীতির সাম্রাজ্য গড়তে না পেরে তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব ও ডিপিডিসির বোর্ড চেয়ারম্যান সফিক উল্লাহকে ২৫ লক্ষ টাকা ঘুষের বিনিময়ে ডিপিডিসির কোম্পানীর সচিব হিসাবে যোগদান করাতে সহযোগীতা করেন।

তিনি যোগদানের পর থেকেই আসাদুজ্জামান এক শক্তিশালী দুর্নীতির বলয় গড়ে তুলেন। অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভেঙ্গে নিয়ম বহির্ভূতভাবে শফিক উল্লাহকে দিয়ে নিয়োগ, বদলী, প্রমোশন, স্পেশাল টাস্কফোর্সের বিদেশ ভ্রমন সহ সিএসএস ও ডিএসএস এর নিয়োগ প্রক্রিয়ার কমিটিতে জোরপূর্বক তাকে রাখতে বাধ্য করেন। এতে যারা বাঁধা দিয়েছে তাদের সবার সাথেই খারাপ আচরন বা অশালীন ব্যবহার করা হয়েছে।

দীর্ঘদিন ডিপিডিসি’র ডাইরেক্টর এইচআর পদ শুন্য থাকায় তিনি একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার পৃষ্টপোষকতায় শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেন। বর্তমানে তিনি ডিপিডিসির সকল ধরনের কমিটিতেই মেম্বার। এই সব কমিটির মেম্বার হওয়ার পর শক্তিশালী সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রন করে নিয়োগ, বদলী, প্রমোশন, স্পেশাল ট্রাস্কফোর্সের বিদেশ ভ্রমণ, সিএসএস ও ডিএসএস এর মাধ্যমে ঘুষ-দুর্নীতি করে বিগত ৪ বছরে অন্তত ৬২ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। এই দুর্নীতিবাজের দুইজন বন্ধু ও একাধিক মিটার রিডার বিভিন্ন ডিভিশনে নিয়োগসহ বিভিন্ন ধরনের ঘুষ বানিজ্য করে থাকেন।

মো. সালাহউদ্দিন, সহকারী প্রকৌশলী (ডিপিডিসি) শ্যামপুর রিরোলিং মিল থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করে আসাদকে দিচ্ছেন। রিরোলিং মিলের মালিকগণ এই সালাহউদ্দিন, এর বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোন রকম সমাধান পাননি। এ ছাড়া ডিপিডিসির বিভিন্ন প্রজেক্ট এর ঠিকাদার নিয়োগ ও মালামাল ক্রয়সহ ইত্যাদি সব জায়গায় তিনি ঘুষ বানিজ্য করে থাকেন।

এমনকি পাবলিক রিলেশন দপ্তর ও মেডিক্যাল দপ্তর এর বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ক্রয়, ঔষধ ক্রয়, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়া সহ সব জায়গায় তার ঘুষ বানিজ্যের হস্তক্ষেপ রয়েছে।

বিভিন্ন দপ্তরে স্পেশাল ট্রাস্কফোর্স অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেই তার নলেজে আসার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই তার দালাল চক্রের সদস্যরা রফাদফা করে বিদ্যুৎ বিল ৬০/৭০ শতাংশ কমিয়ে জাতীয় রাজস্বসহ ডিপিডিসির রাজস্বের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করছে। গ্রাহক প্রস্তাবে রাজী না হলে তাকে ২/৩ গুণ বেশি বিল করে দেন এবং করিয়ে দেয়ার ভয় দেখান।

এমনও দেখা গেছে, বেশি বিল আসার পর গ্রাহক যখন অফিসে যোগাযোগ করে তখন গ্রাহককে বলা হয় বিল কমানোর জন্য আপনি একটি আবেদন করেন। পরবর্তীতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কমিটি করে প্রভাব খাটিয়ে বিল কমানো হয়ে থাকে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য দপ্তরগুলো হলো- শীতলক্ষ্যা, কাকরাইল, বনশ্রী ও তেজগাঁও। দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তা একাধিকবার দেশের বাহিরে প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশনে গেছেন।

তিনি টেকনিক্যাল পার্সন না হয়েও বিভিন্ন সময় আমেরিকা, মেক্সিকো, ইংল্যান্ড, জার্মানী, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ ভ্রমন (প্রি-শিপমেন্ট) ইন্সপেকশনে গিয়েছেন। এমনকি গত কয়েকদিন পূর্বেও তিনি চীন সফর শেষ করে অতিরিক্ত আরও ৮ দিন ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরেন।

সরকার যেখানে বিনা কারণে বিদেশ ভ্রমণকে নিরুৎসাহিত করেছে এবং দেশবাসীকে কৃচ্ছতা সাধনের পরামর্শ দিয়েছে, সেখানে এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা বারবার বিদেশ যাচ্ছেন কিসের টানে এমন প্রশ্ন উঠে এসেছে। তাছাড়া ডিপিডিসির কোন কর্মকর্তা বিদেশ গেলে আসাদের জন্য আইফোন-১৪ প্রো-ম্যাক্স আনতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তার জন্য ১০/১১টি আইফোন ১৪ প্রো-ম্যাক্স আনা হয়েছে এবং বলা হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের বড় কর্মকর্তাদের দিতে হবে যা ভবিষ্যতে আপনাদের পদোন্নতিতে কাজে লাগবে। দুর্নীতির টাকায় ধানমণ্ডিতে আলিশান বাড়ী, গাজীপুরে রিসোর্ট, পূর্বাচলে নামে বেনামে একাধিক প্লটের মালিক।

গাজীপুরের রিসোর্টে প্রায়ই প্রমোদ পার্টি অরগানাইজ করা হয়। অফিস ফাঁকি দিয়ে অধিকাংশ সময় মন্ত্রণালয়ে ঘুরাঘুরি করেন এবং সকলের নিকট বলে বেড়ান মন্ত্রণালয় তার হাতের মুঠোয়, যখন যা বলবে তখন তাই হবে। ইতিপূর্বে মন্ত্রনালয়ে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দেয়া হয়েছিল যার কোন তদন্ত এখন পর্যন্ত হয়নি। এ সব যেন দেখার কেউ নেই। দুর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তা নিজের স্বার্থে দেশের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছে এবং ডিপিডিসিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

তার অযাচিত ব্যবহারে ডিপিডিসি প্রশাসন নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে। যা প্রশাসনে খোঁজ নিলেই জানা যাবে। চীফ মেডিক্যাল অফিসার মইনুল তার সাথে তাল মিলিয়ে কোন রকম চলছে আর বাকী সবাই অতিষ্ট। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও কোন সুরাহা হচ্ছে না। এসব অভিযোগ দ্রুত আমলে নিয়ে তদন্তে সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন।

এই বিষয়ে দুদকের উপ-পরিচালক জনসংযোগ কর্মকর্তা এ প্রতিবেদককে বলেন, যে কোনো অভিযোগ দাখিল হলে যাছাই-বাছাইয়ের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের ভেতরে যখন ক্ষমতার অপব্যবহারের চিন্তা থাকে তখনই দুর্নীতি হয়। আর দুর্নীতিকে রোধ করতে নিজেদের মনোভাবকে পরিবর্তন করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। না হলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না।

এই বিষয়ে আজ রবিবার ১৭ মার্চ রাত ৯টা ৪৫ মিনিটের সময়  ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ডিপিডিসি’র উপসচিব আসাদুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *