বিপ্লব নিয়োগী তন্ময় (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় নৌবাহিনীর এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওয়ারেন্টভূক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মামলার ১ নম্বর আসামি স্বপন কর (৪৭) ও ৪ নম্বর আসামি দুলাল দেব (৫০)। উভয়ের বাড়ি উপজেলার শ্যামগ্রামে।
বুধবার গভীর রাতে ধৃতদেরকে স্ব স্ব বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে আজ বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকালে এদেরকে আদালতে চালান করা হয়েছে।নবীনগর থানার ওসি মাহবুব আলম সংবাদ মাধ্যমের কাছে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বিবরণ ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শ্যামগ্রামের বাসিন্দা, নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ‘অনারারি লেফট্যানেন্ট’ প্রদীপ কুমার দেবনাথ চাকরি থেকে অবসর নিয়ে শ্যামগ্রামে এসে ‘বনলতা বিপিন বস্ত্রালয়’ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালু করে। পাশাপাশি জাহাজ তৈরী ও মেরামতের (শিপ বিল্ডিং) ঠিকাদার হিসেবেও বিভিন্ন দরপত্রে অংশ নেন।
মামলার বিবরণে অভিযোগ করা হয়, ঘটনার দিন গত বছরের (২০২৩) ১৮ আগস্ট সন্ধ্যা আনুমানিক সাতটার দিকে শ্যামগ্রামের বাসিন্দা লিটন নাগ ও স্বপন করের নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী বনলতা বিপিন বস্ত্রালয়ে আকস্মিকভাবে হামলা চালায়। হামলাকারীরা দোকান মালিক প্রদীপ দেবনাথকে প্রচন্ড মারধর করে।
এ সময় হামলাকারীরা বাদীর বুকে অস্ত্র,ঠেকিয়ে তার প্যান্টের পকেট থেকে নগদ ৫৫ হাজার ও দোকানের ক্যাশবাক্স থেকে নগদ ৪৭ হাজারসহ মোট ৯৭ হাজার টাকা জোরপূর্বক নিয়ে যায়।তবে যাওয়ার আগে দোকান মালিকের কাছে নগদ আরও ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে বলে,’সর্বোচ্চ ১০ দিনের মধ্যে ৫ লাখ টাকা চাঁদা না দিলে, নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপকে (বাদী) প্রাণে মেরে ফেলার হুমকী দেয়।
ঘটনার পর প্রদীপ দেবনাথ (৬৫) বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চাঁদাবাজীর অভিযোগে স্বপন কর ও লিটন নাগসহ মোট ১২ জনের নাম উল্লেখ করে একটি চাঁদাবাজির মামলা করেন। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে সিআইডিকে মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন। পরে আদালতের নির্দেশে সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক আক্তার হোসেন মামলাটি দীর্ঘ ৭ মাস তদন্ত করে এ মামলায় অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা খুঁজে পান।
সম্প্রতি তদন্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দেয়ার পর বিজ্ঞ আদালত ১২ আসামির বিরুদ্ধে ‘গ্রেপ্তারী পরোয়ানা’ জারি করে। ১২ জনের সেই গ্রেপ্তারী পরোয়ানার কাগজ গতকাল মঙ্গলবার নবীনগর থানায় এসে পৌঁছলে, নবীনগর থানার পুলিশ ২ জনকে রাতে গ্রেপ্তার করে আজ সকালে আদালতে চালান করে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী প্রদীপ দেবনাথ বলেন,’ঘটনার পর চাঁদাবাজ ও হামলাকারীদের ভয়ে আমি গত আটমাস ধরে আমার বনলতা বিপিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে রেখেছি। হামলাকারীদের সবাই গ্রেপ্তার না হলে এবং এদের দৃষ্টান্তমূলক কঠোর বিচার করা না গেলে, আমাকে ওরা হত্যা করতে পারে!’ এ বিষয়ে লিটন নাগসহ একাধিক আসামির সঙ্গে বারবার চেষ্টা করেও এ ঘটনা নিয়ে কথা বলা যায়নি।
তবে নবীনগর থানার ওসি মাহবুব আলম প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন,’ গতকাল মঙ্গলবার আদালত থেকে ১২ জনের নামে ওয়ারেন্টের কাগজপত্র পাই। এরপর পুলিশ আসামিদের ধরতে রাতে অভিযান চালায়। অভিযানে ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকীদের ধরতে পুলিশী অভিযান অব্যাহত আছে।’