এই রিটে স্পেশাল ব্যাচ ১ এর ১৭৭ জনের সিডিসি প্রাপ্তিসহ পরবর্তী ২০৫ জনের স্পেশাল ব্যাচ কোর্টের মাধ্যমে অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার টার্গেট করা হয়েছে। রিটের মূল বক্তব্য যথাক্রমে, সংসদীয় কমিটি বেশি বেশি প্রশিক্ষন দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছেন তাই সংসদীয় কমিটি দায়ী। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে তাই নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় দায়ী। নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক যেহেতু লিখেছেন স্পেশাল ব্যাচে প্রশিক্ষন দিতে সমস্যা নেই, এবং ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামকে প্রশিক্ষন করাতে নির্দেশ দিয়েছেন তাই মহাপরিচালকই দায়ী। ন্যাশনাল মেরিটাইম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম প্রশিক্ষন করিয়েছে তাই প্রিন্সিপাল দায়ী । শিপিং মাস্টার সরকারি শিপিং অফিস চট্টগ্রাম যেনো সকল স্পেশাল ব্যাচকে সিডিসি দেয় তার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
বিশেষ প্রতিবেদক : নিজেকে বাঁচাতে সংসদীয় কমিটি, মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও মেরিটাইম প্রশিক্ষন প্রতিষ্ঠানের উপর দায় চাপিয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই হাইকোর্টে রীট পিটিশন দায়ের করেছেন নৌপরিবহন অধিদপ্তরের সিএনএস ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন আহমেদ।
তার এই কর্মকাণ্ড চাকুরী শৃংখলা বিধির পরিপন্থি হলেও তিন স্বজ্ঞানেই সেটি করেছেন। রীটে যাদের বিবাদী করা হয়েছে তারা হলেন, মোঃ শফিকুর রহমান (অভিযোগকারী)। সচিব, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়। মহাপরিচালক, নৌপরিবহণ অধিদপ্তর। প্রিন্সিপাল, ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম ও শিপিং মাস্টার, সরকারি শিপিং অফিস, চট্টগ্রাম।
এই রিটে স্পেশাল ব্যাচ ১ এর ১৭৭ জনের সিডিসি প্রাপ্তিসহ পরবর্তী ২০৫ জনের স্পেশাল ব্যাচ কোর্টের মাধ্যমে অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার টার্গেট করা হয়েছে।
রিটের মূল বক্তব্য যথাক্রমে, সংসদীয় কমিটি বেশি বেশি প্রশিক্ষন দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছেন তাই সংসদীয় কমিটি দায়ী। নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে তাই নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় দায়ী। নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক যেহেতু লিখেছেন স্পেশাল ব্যাচে প্রশিক্ষন দিতে সমস্যা নেই, এবং ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট চট্টগ্রামকে প্রশিক্ষন করাতে নির্দেশ দিয়েছেন তাই মহাপরিচালকই দায়ী। ন্যাশনাল মেরিটাইম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম প্রশিক্ষন করিয়েছে তাই প্রিন্সিপাল দায়ী । শিপিং মাস্টার সরকারি শিপিং অফিস চট্টগ্রাম যেনো সকল স্পেশাল ব্যাচকে সিডিসি দেয় তার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
এক কথায় সবাইকে দোষি করে ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন নিজেকে নির্দোশ প্রমাণের জন্যই এই রীট দায়ের করেছেন। অথচঃ এই সিডিসি কেলেংকারীর তিনিই মুখ্য নায়ক।
উল্লেখ্য যে, জন প্রতি ১০ লক্ষ টাকা করে ঘুস নিয়ে ৬২ জনকে ভূয়া পানামা সিডিসি প্রদান এবং জন প্রতি ৮ লক্ষ টাকা করে ঘুস নিয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পাশ কাটিয়ে অবৈধ ভাবে ২০০ জনকে ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণের বিষয়ে নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রেজিনা বেগমকে আহবায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি তদন্তের খাতিরে এ সংক্রান্ত ফাইল গুলো ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিনের কাছে চাইলে তিনি ফাইল গুলো দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। উল্টো কমিটির সভাপতিকে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার হুমকি প্রদান করেছেন।
সুত্রমতে, পূর্বের মহাপরিচালককে বোকা বানিয়ে প্রতিষ্ঠিত আইন কানুন ও বিধিবিধানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে টাকা উড়িয়ে তিনি এইসব অবৈধ পানামা সিডিসি ধারীদের বাংলাদেশী সিডিসি এবং ২০০ জনকে স্পেশাল ব্যাচের নামে অবৈধ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন।
রেটিং ভর্তির জন্য সমন্বিত নাবিক ভর্তি নীতিমালা রয়েছে যেখানে নাবিকদের বয়স, শিক্ষাগত যোগ্যতা, শারীরিক সামর্থ্যসহ ভর্তি পরীক্ষায় বিষয়গুলো উল্লেখ রয়েছে।
প্রথমবার সরকারি ও বেসরকারি সকল মেরিটাইম প্রশিক্ষন প্রতিষ্ঠানে ৫০০ আসনের বিপরীতে ১২ হাজার আবেদন করে এবং স্বচ্ছতার ভিত্তিতে ভর্তি করা হয়।
অপরদিকে গেজেটে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া অন্য কোন উপায়ে ভর্তি কার্যক্রমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভিন্নধাতুতে গড়া ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন সারাজীবন দূর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ অর্থ আয় করে অভ্যস্ত বিধায় এখানেও তার কালোথাবা পড়েছে। প্রিন্সিপাল অফিসার, মার্কেন্টাইল মেরিন অফিস চট্টগ্রামে ডেপুটেশনে তিন বছর থেকে অবৈধভাবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা কমিয়েছেন তিনি।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা খরচ করে নৌপরিবহণ অধিদপ্তর, ঢাকায় চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার (সিএনএস)পদে যোগদানের পর থেকেই অবৈধ আয়ের জন্য সিডিসিতে তার কালোথাবা বিস্তৃত করেন।
তবে নজরুল ইসলাম নামক একজন নাবিক এবং বাংলাদেশ সিমেন্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শফিকুর রহমান তাদের ও তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের রুটি রুজির উৎসের উপর ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিনের এই কালোথাবার বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন। ক্যাপ্টেন গিয়াস হাইকোর্টে বহুমূল্য তারকা আইনজীবী নিয়োগ করেও কোর্টকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হন নাই।
মহামান্য হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ গত ২৭ মে ২০২৪ তারিখে স্পেশাল ব্যাচের মাধ্যমে প্রশিক্ষন প্রদানকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুলনিশি জারি করে এবং এদের সিডিসি প্রদানে নিষেধাজ্ঞা দেয়।
তবে গিয়াস হাইকোর্টের ভ্যাকেশন চলাকালীন গঠিত একটি একক বেঞ্চে এই রুল নিশির বিরুদ্ধে মহাপরিচালকের অনুমোদন ছাড়াই রিট করেন।
এই রিটের এফিডেভিট বিশ্লেষণ করে দেখা যায়,তিনি নৌপরিবহণ অধিদপ্তরকে ডিফেন্ড না করে স্পেশাল ব্যাচের ২০০ জনের পক্ষে আবেদন করেছেন এবং এই ২০০ জনের প্রশিক্ষন অনুমোদনের সকল দায়ভার দাখিল করা ডকুমেন্টের মাধ্যমে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয়ের পিএস উপসচিব আমিনুর রহমান ও জাহাজ শাখার উপসচিব আলী আহসান, নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের সাবেক ও বর্তমান মহাপরিচালক এবং সংসদীয় কমিটির উপর চাপিয়েছেন।
অথচ তিনি নৌ বাণিজ্য দপ্তর চট্টগ্রাম থেকে নৌপরিবহণ অধিদপ্তর, ঢাকায় যোগদানের পূর্ব থেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসতে থাকে যে ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন ভূয়া সিডিসি প্রদানের সিন্ডিকেটের সাথে জড়িয়েছেন এবং এর মাধ্যমে কয়েকশ কোটি টাকা কামানোর ধান্দা করছেন।
সকল কিছু সত্ত্বেও পূর্বতন মহাপরিচালককে স্বপ্ন দেখিয়ে বিভিন্ন উঁচু মহলের মাধ্যমে তদবির করে প্রাথমিকভাবে নিজেই মুরাদ হোসেন নামে আবেদন করেন আবার নিজেই যাচাই বাছাই কমিটির সভাপতি হয়ে ইঞ্জিনিয়ার শিপ সার্ভেয়ার এণ্ড এক্সামিনার আবুল বাশার ও কো-অর্ডিনেটর মিঠুন কুমার চাকীকে কমিটির সদস্য করেন। তবে এই প্রক্রিয়া আইন বিরুদ্ধ হওয়ায় এবং টাকার লেনদেনের বিষয়গুলো ফাঁস হয়ে যাওয়ায় কমিটির দুই সদস্য রিপোর্টে সই প্রদান করেন নাই।
তবে ক্ষমতা ও টাকার মোহে অন্ধ ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দিন একাই স্বাক্ষর করে রিপোর্ট প্রদান করেন। কিন্তু তিনি রিটে এইসব অবৈধ প্রশিক্ষন প্রদানের জন্য সবাইকে দায়ি করলেও তিনিই যে এই অবৈধ প্রশিক্ষণের উদ্যোক্তা এবং একক স্বাক্ষরে কমিটি রিপোর্ট প্রদান করেছেন এবং সবাইকে অবৈধ কাজে সায় দিতে বাধ্য করেছেন তা কখনোই উল্লেখ করেন নি।
বর্তমান সরকার দূর্নীতির বিরুদ্ধে যে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে সেটা নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে পূর্ণতা প্যাবে বলে সচেতন দেশবাসী আশা করছেন।