অভিযোগের পাহাড় তবুও স্বপদে বহাল অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান সোহাগ !

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক  : বেসরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক কিংবা অধ্যক্ষ হতে স্নাতকোত্তর সহকারে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা কিংবা স্নাতক ডিগ্রি হলে ১৫বছরের অভিজ্ঞতা এবং অবশ্যই বিএড সম্পন্ন করা থাকতে হবে। একই সঙ্গে বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে। এসব নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই আনিসুর রহমান এভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সুবিধা ভোগীদের অন্যতম একজন আনিসুর রহমান সোহাগ, বিগত সরকারের একাধিক এমপি-মন্ত্রী সহ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি বর্গের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল ওপেন সিক্রেট। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এপিএস হাফিজুর রহমান লিকু ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের জামাতা তানভীর রহমানের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আলোচিত পুলিশ কর্মকর্তা সাবেক ডিবি প্ৰধান হারুন-অর-রশিদের বেনামে ব্যবসা থাকার বিষয়ে গুঞ্জন রয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করেই আনিসুর রহমান স্কুলের স্বঘোষিত অধ্যক্ষ হয়েছেন।


বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তনের দুয়েক সপ্তাহ আগে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয় আনিসুর রহমান সোহাগ জাল সনদ ব্যবহার করে চাকরি করছেন। উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর তিনি লেখাপড়া শেষ করতে না পারলেও হয়েছেন ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের অধ্যক্ষ। তার পড়ালেখার বিষয়টি জানাজানি হলে ইবাইস ইউনিভার্সিটি হতে সার্টিফিকেট কিনে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা হয়নি।


বিজ্ঞাপন

সনদ জাল স্বীকার করে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইলে বিষয়টি দেশব্যাপী ভাইরাল হয়। ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষও নড়েচড়ে বসেন। নামকাওয়াস্তে গঠন করেন তদন্ত কমিটি। এখন পর্যন্ত আনিসুর রহমান সোহাগ কিংবা স্কুলের গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এর কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে পাওয়া যায় চমকপ্রদ তথ্য।

আওয়ামী সুবিধাভোগী আনিসুর রহমান সোহাগ ভোল পাল্টে জামাতের লেবাস ধারণ করেছেন। আনিসুর রহমান সোহাগের জাল সনদের বিষয় তদন্ত বন্ধ করতে জামাতের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের দিয়ে ফোন করিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষকে। যা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার নিজেও স্বীকার করেছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান সোহাগের দাখিলকৃত ইবাইস ইউনিভার্সিটির সার্টিফিকেট যাছাই করতে ইউজিসিকে চিঠি দেয়া হয়েছে এবং ইউজিসির লিখিত বক্তব্য অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রতারক আনিসুর রহমান সোহাগের বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই, প্রতারণাই যেন তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য! গ্রামের বহু সাধারণ মানুষ মানুষ আনিসুর রহমান সোহাগের প্রতারণায় নিঃস্ব। জানা গেছে, নিজ এলাকায় যমুনা ব্রিকস নামে ইটভাটা গড়ে তোলেন সোহাগ। অগ্রিম ইট বিক্রির নামে গ্রামের একাধিক মানুষের হাতিয়ে নেন লক্ষ লক্ষ টাকা। এদের মধ্যে কবির মেম্বার পাবেন ৪০লক্ষ টাকা, হালিম মোল্লা পাবেন ৩০লক্ষ টাকা, রফিক মোল্লা পাবেন ২০লক্ষ টাকা, বাবুল ড্রাইভার পাবেন ১০লক্ষ টাকা ও সুমন পাবেন ৮লক্ষ টাকা। এছাড়াও ৫লক্ষ ও ১লক্ষ টাকা করে অনেকেই পাবেন বলে জানা যায়। একটু লাভের আশায় নিজেদের সবটুকু সম্বল বিনিয়োগ অগ্রিম ইট ক্রয় করেছিলেন গ্রামের সাধারণ মানুষ। লাভ তো দূরের আনিসুর রহমান তাদের টাকাই ফেরৎ দিচ্ছেন না, এমনকি তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করছেন না। কেউ নিজ থেকে যোগাযোগ করলে উল্টো তাকে মামলার ভয় দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, অর্থাভাবে একসময় আনিসুর রহমানের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। তখন ঢাকায় এসে গার্মেন্টস সুপারভাইজার হিসেবে ঢাকা ইপিজেডে চাকরি নেন তিনি। এরপর তার বন্ধু জনৈক হাফিজুর রহমান সুমনের সার্টিফিকেট জাল করে অপসোনিন ফার্মাতে মেডিক্যাল প্রমোশন অফিসার হিসেবে চাকরি নেন। সর্বশেষ ধানমন্ডির ম্যারিয়ট কমিনিউটি সেন্টারে ম্যানেজার হিসেবে চাকরি নেন সোহাগ। ২০১৬সাল পর্যন্ত এখানে চাকরি করে ২০১৭সালে হঠাৎ এভেরোজ স্কুলের অধ্যক্ষ(হেড অব স্কুল) হিসেবে আবির্ভূত হন তিনি।

ম্যারিয়ট কমিনিউটি সেন্টারে চাকরিকালেই আনিসুর রহমান শুরু করেন বহুমুখী প্রতারণা। ম্যারিয়ট কর্তৃপক্ষকে নানা ফাঁদে ফেলে সেটি ইজারা নেন। কয়েকজন মিলে এই শুরু করলেও লাভের ভাগ কাউকে না দিয়ে পুরোটাই নিজে ভোগ করছেন সোহাগ। নিজের নাম পর্যন্ত এসময় বদলে ফেলেন তিনি।

মার্ক সোহাগ নামে ফেসবুক আইডি খুলে ভিন দেশী সেজে সবার সঙ্গে ভার্চুয়াল সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সেই ফেসবুক আইডি থাকলেও নিজ নামে ফিরেছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নীতিকথা লিখে পোষ্ট দেন নিয়মিত। অথচ কদিন আগে রাজধানীর ইসিবি চত্বরে দিন-দুপুরে গোলাগুলি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মামলা দায়ের হওয়া মামলায় আনিসুর রহমান আসামি। যার নম্বর-৬(৯)২৪ ও তারিখ-২৩/৯/২৪ইং।

এছাড়াও চেক প্রতারণা সহ নানা অভিযোগে বিভিন্ন থানায় সোহাগের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। আয়কর নথিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গোপন করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কাঁটাবন মার্কেটের একটা আর্ট এন্ড গিফটের দোকানকে বর্তমান ঠিকানা দেখিয়ে গত কয়েক বছর ব্যক্তিগত আয়কর রিটার্ন দাখিল করছেন সোহাগ।

এত অভিযোগের পাহাড় নিয়ে সোহাগ কীভাবে স্কুলের অধ্যক্ষ হিসেবে বহাল তবিয়তে রয়েছেন তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন একাধিক অভিভাবক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চা স্কুলে নিয়ে আসতে লজ্জা লাগে। কিন্তু কী করব? প্রায় ১লক্ষ টাকা দিয়ে বাচ্চাকে ভর্তি করিয়েছি এখানে, এখন আরেক স্কুলে চলে গেলে তো ভর্তির টাকা ফেরৎ দিবে না। তাই বাধ্য হয়েই স্কুলে আসতে হচ্ছে।

অধ্যক্ষ হওয়ার নূন্যতম যোগ্যতা কিংবা অভিজ্ঞতা নেই যার, সেই তিনি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের অধ্যক্ষ আজ। সনদ জাল-জালিয়াতি ও বহুমুখী প্রতারণার অভিযোগ নিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে কোন ক্ষমতা বলে অধ্যক্ষ হিসেবে বহাল আছেন তা ভেবে পাচ্ছেন না অভিভাবকরা। অথচ প্রাইভেট স্কুল অর্ডিন্যান্স ১৯৬২ এর ধারা অনুযায়ী কোনো অবাঞ্ছিত লোক দ্বারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হওয়ার চিন্তাও করা যাবে না।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *