নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) গাজীপুর অফিসের সব সেবা ঘুস, দুর্নীতি ও দালালচক্রে আটকা পড়েছে। দালাল পরিবেষ্টিত এ অফিসে দীর্ঘদিন ধরে থাকা কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের ‘বিশ্বস্ত দালালচক্র’ তৈরি করেছেন। তাদের কাছেই জিম্মি হয়ে পড়েছেন এই অফিসের সেবাপ্রার্থীরা। ঘুষ ও দালাল ছাড়া মিলে না কোন সেবা। অন্যথায় হতে হয় হয়রানির শিকার। কেউ ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে আবেদনে ও সাপোর্টিং ডকুমেন্টে নানা রকম ভুল ধরে করা হয় হয়রানি। ফলে হয়রানি এড়াতে দালালের শরণাপন্ন হতেই হয়।
কয়েকজন সেবাপ্রার্থীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, টাকা ছাড়া কোনো সেবা পাওয়া এখানে অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার। গাজীপুর বিআরটিএ অফিসে ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন থেকে সব কিছুই দালালদের নির্দিষ্ট করা হারে ঘুস দিয়ে কাজ করাতে হয়। সেবার বিষয়ে কর্মকর্তারা বরাবরই থাকেন নীরব। বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে দালালদের সাজা দেওয়া হলেও প্রকৃত দালালরা অধরাই থেকে যায়।
চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি গাজীপুর বিআরটিএ অফিসের চিহ্নিত দুই দালাল শান্ত ও ছাত্তারকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেন গাজীপুর জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম)। এরপরও থামেনি দালালদের উৎপাত। মোটরযান পরিদর্শক অহিদুর রহমানের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া দালাল শান্তকে আটকের পর পালটে যায় গাজীপুর বিআরটিএ অফিসের ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার চিত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুর বিআরটিএ কার্যালয়ে সেবা গ্রহীতাদের হয়রানি আর অবৈধ ঘুষ বাণিজ্যের হোতা মোটরযান পরিদর্শক সাইদুল ইসলাম সুমন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, তাকওয়া পরিবহনের হিউম্যান হলার গাড়ির ফিটনেস সনদ নিতে নির্ধারিত সরকারি ফি ব্যাংকে জমা দেওয়ার পরেও ২ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় ঘুষ হিসেবে। সিএনজিচালিত অটোরিকশার ফিটনেস সনদ নিতে নির্ধারিত সরকারি ফি ব্যাংকে জমা দেওয়ার পরেও ১ হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা করে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় ঘুষ হিসেবে। কাভার্ড ভ্যান, ট্রাক ও বাস গাড়ির ফিটনেস সনদ নিতে নির্ধারিত সরকারি ফি ব্যাংকে জমা দেওয়ার পরেও ৩ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় ঘুষ হিসেবে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার রেজিস্ট্রেশন করতে নির্ধারিত সরকারি ফি ব্যাংকে জমা দেওয়ার পরেও ৮ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় ঘুষ হিসেবে। সিএনজিচালিত অটোরিকশার মালিকানা পরিবর্তন করতে নির্ধারিত সরকারি ফি ব্যাংকে জমা দেওয়ার পরেও ৩ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় ঘুষ হিসেবে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা পাশ করতে নির্ধারিত সরকারি ফি ব্যাংকে জমা দেওয়ার পরেও ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় ঘুষ হিসেবে। এসব অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। তারা বলছেন, গাজীপুর বিআরটিএতে অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে, এবং দীর্ঘদিনেও এসবের কোনও পরিবর্তণ নেই।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, সিএনজিচালিত অটো রিকশার মালিকানাসহ সব ধরনের গাড়ির রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস সনদের ঘুষের টাকা দালালদের মাধ্যমে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘুষের সব টাকাই দিন শেষে মোটরযান পরিদর্শক সাইদুল ইসলাম সুমনের কাছে যায়। সেখান থেকে পদ অনুযায়ী ভাগ-বাটোয়ারা হয়। বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালকসহ একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলি হয়ে গেলেও এই মোটরযান পরিদর্শক সাইদুল ইসলাম সুমন অদৃশ্য খুঁটির জোরে এই গাজীপুর জেলায় একই অফিসে বহাল তবিয়তে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পরিবর্তন হলেও অভিযুক্ত মোটরযান পরিদর্শক সাইদুল ইসলাম সুমনের চরিত্র বদলায়নি।
এ বিষয়ে মোটরযান পরিদর্শক সাইদুল ইসলাম সুমনের কাছে জানতে চাইলে তিনি পরে যোগাযোগ করতে বলেন। পরে তাকে বেশ কয়েক দিন ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। বিআরটিএ গাজীপুরের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশিদের সঙ্গে তার অফিসে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বক্তব্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া বক্তব্য দিতে পারবো না। পরবর্তীতে আবারো যোগাযোগ করলে ফোনে তিনি জানান মোটরযান পরিদর্শক সাইদুল ইসলাম সুমনের সাথে যোগাযোগ করার জন্য বলেন।