বিশেষ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্র্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) নিয়ে চলছে তথ্য সন্ত্রাস। এক কর্মকর্তা আরেক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মনগড়া অপপ্রচার চালিয়ে ঘোলা জলে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। এতেকরে জনবিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ভাবমুর্তিও ক্ষুন্ন হচ্ছে। অন্যদিকে বিভ্রান্তহীনতায় পড়ছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। এই ধারা চলতে থাকলে প্রতিষ্ঠানটিতে বিশৃংক্ষলা দেখা দিতে পারে। অহেতুক হয়রানীর শিকার হতে পারেন দক্ষ ও নির্দোষ কর্মকর্তারা। সম্প্রতি এ ধরনের একটি ঘটনা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএতে।

কর্মকর্তারাও ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।
এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানাগেছে,বিআইডব্লিউটিএর প্রকৌশল বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী (পুর) মো: মহিদুল ইসলাম এ মাসেই অবসরে যাবেন। তার শুন্য পদে পদন্নোতি ও পদায়নের কার্যক্রম শুরু করেছে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
এই পদের ফিট লিষ্টে রয়েছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পুর) এ এইচ মো: ফরহাদুজ্জামান। অভিজ্ঞতা,দক্ষতা এবং বিভাগীয় যোগ্যতায় তিনিই পদন্নোতি ও পদায়নের তালিকার শীর্ষে রয়েছেন। তাছাড়া এই প্রকৌশলীর নামে কোন প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগও নেই।

কিন্তু তিনি যাতে প্রধান প্রকৌশলী পদে পদন্নোতি ও পদায়ন না পান তজ্জন্য একই বিভাগের আরেকজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো: ছাইদুর রহমান উঠেপড়ে লেগেছেন। তিনি ড্রেজিং বিভাগে থাকাকালীন প্রায় হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করেছেন। গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। তার বিরুদ্ধে দুদকেও অভিযোগ তদন্তাধীন রয়েছে। এই ছাইদুর রহমান নিজে প্রধান প্রকৌশলী পদে পদন্নোতি ও পদায়ন পেতেই নানা পথে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন।

সূত্রমতে, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো: ছাইদুর রহমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের একজন সুবিধভোগি কর্মকর্তা। তিনি সাবেক নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। সেই সুত্রে ড্রেজিং বিভাগের নদী খনন নামে একটি বৃহত্তর প্রকল্পের পিডি পদটি বাগিয়ে নেন। এই প্রকল্পে তিনি সাগর চুরি করেন। তিনি গত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ সভাপতি ও সভাপতি ছিলেন। এ নিয়ে জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলে অনেক সচিত্র সংবাদ প্রচার হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনও তদন্ত শুরু করেছে। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হওয়ায় তিনি প্রধান প্রকৌশলী পদে নিয়োগ বা পদায়নে অযোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। আর এ কারণেই তিনি বাকা পথ বেছে নিয়েছেন।
সুত্রমতে, তিনি ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার একজন পোষ্য রিপোর্টারকে ম্যানেজ করে তার কাছে দালিলিক প্রমাণ ছাড়াই কিছু মনগড়া তথ্য প্রদান করেন। আর সেই সব তথ্য যাচাই বাছাই না করেই ওই পত্রিকাটি পরপর দুটি নিউজ প্রকাশ করে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ এইচ মো: ফরহাদউজ্জামানের বিরুদ্ধে। যার শিরোনাম: “মামলার আসামী হয়েও জেল খাটেনি বিআইডব্লিউটিএর প্রকৌশলী ফরহাদ” তারিখ: ২৪/০৬/২০২৫ এবং “চার্জশীটভুক্ত মামলার আসামী বিআইডব্লিউটিএর দুর্নীতিবাজ ফরহাদ বহাল তবিয়তে” তারিখ: ০৮/০৭/২০২৫। এই দুইটি সংবাদেই ঢালাও ভাবে ড্রেজিংয়ের শতশত কোটি টাকার দুর্নীতি করার তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এ ছাড়া ২০১৯ সালে ১/১১ এর সরকারের সময় দুদকের দায়েরকৃত একটি মামলার উদৃতি দেওয়া হয়েছে। তারা কেবল সংবাদ প্রচার করেই খান্ত হয়নি। পত্রিকার নিউজ কার্টিং সহ মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। ফলে মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্ত করার জন্য বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন যার স্মারক নং-১৮.০০.০০০০.০১৯.২৭.০০২.১৯.৪৭৩, তারিখ:১৮/০৮/২০২৫ ইং।
এ বিষয়ে আমাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে আসল সত্য। প্রকৃতপক্ষে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এ এইচ মো: ফরহাদুজ্জামান যাতে প্রধান প্রকৌশলী পদে পদন্নোতি ও পদায়ন না পান সেজন্যই উল্লিখিত সংবাদ দুইটি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে।
একই সাথে ১/১১ সরকারের সময়ে দুদকের একটি মামলার রেফারেন্স তুলে ধরা হয়েছে। আর এর পেছনে সকল কলকাঠি নাড়ছেন পদন্নোতি প্রত্যাশি আরেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো: ছাইদুর রহমান। তিনি এ খাতে মোটা অংকের অর্থও ব্যয় করেছেন বলে একাধিক সুত্রে নিশ্চিত করেছে। এ প্রসংগে প্রশ্ন করলে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো: ছাইদুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
উল্লিখিত সংবাদ ও তদন্ত কমিটির বিষয়ে প্রশ্ন করলে ভুক্তভোগী অতিরিক্ত প্রকৌশলী এ এইচ মো: ফরহাদুজ্জামান কে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের আওতায় ২০০৫ সালে আরিচা-রাজশাহীর-গোদাগাড়ী-মোহনগঞ্জ নৌপথের আওতায় পাটুরিয়া এলাকায় বেসিক ড্রেজিং কোম্পানীর মাধ্যমে ড্রেজিং এর কাজ করা হয়। কাজ সম্পাদন করে ঠিকাদারকে যথা সময়ে় বিল প্রদান করা হয়।
২০০৮ সালে তত্বাধায়ক সরকারের আমলে উক্ত কোম্পানীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক কাজী জাহাঙ্গীর হোসাইন মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। কাজটির চুক্তি মূল্য ছিল প্রায় ৮.৫ কোটি টাকা। তিনি ১ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা ঘুস গ্রহনের-মামলা দায়ের করেন। এর মধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর নামে ৮২.০০ লক্ষ টাকা, জহিরুল ইসলাম ও তার স্ত্রীর নামে ১৫.৬০ লক্ষ টাকা, আবু বকর সিদ্দিক ও তার স্ত্রীর নামে ১৫.৬০ লক্ষ টাকা এবং আমার ও আমার শাশুড়ীর নামে ১.৩০ লক্ষ টাকা ও ঠিকাদারের নামে ৫.০২ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।
উক্ত সময়ে় মামলাটি জাজ কোর্ট এর মাধ্যমে দুদকে প্রেরণ করা হয়। তখন ট্রুথ কমিশন গঠন হওয়ায়় দুদক মামলাটি ট্রুথ-কমিশনে প্রেরন করে। ট্রুথ কমিশন আমার ও শাশুড়ীর সম্পূর্ণ টাকা সরকারী কোষাগারে জমা দিতে নির্দেশনা দেয়।
আমি উক্ত টাকা জমা দেই। অত:পর ট্রুথ কমিশন উক্ত মামলা হতে মার্জনা করে সার্টিফিকেট প্রদান করে। পাশাপাশি উক্ত মামলা হওয়ায় বিআইডব্লিউটিএ আমাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করে এবং সাময়িক বরখাস্ত করে। উক্ত বিভাগীয় মামলা ও সাময়িক বরখাস্তের বিপক্ষে আমি মহামান্য হাইকোর্টে রীট পিটিশন দাখিল করি।
মহামান্য হাইকোর্টের বিচারপতি মহোদয়গন শুনানী শেষে আমাকে বিভাগীয় মামলা হতে অব্যহতি দেয়় এবং সমস্ত সুযোগ সুবিধা প্রদান করার নির্দেশনা দেয়। হাইকোর্টের রায় দাখিল করে আমি বিআইডব্লিউটিএতে পুনরায়় চাকুরীতে যোগদান করি। কর্তৃপক্ষ আমাকে নিয়ম অনুযায়ী পদখালী সাপেক্ষে অন্যান্য প্রকৌশলীদের মতই পদোন্নতি প্রদান করে।
আমি ২০১৭ সালে সিনিয়রিটির ভিত্তিতে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশনী (পুর) পদে পদোন্নতি পাই। অত:পর ২০১৯ সালে জানতে পারি দুদক নিম্ন আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে। উক্ত মামলাটি জজ কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, মামলার বাদি উক্ত মামলার কাজ চলার সময়ে উক্ত কোম্পানীতে চাকুরীরত ছিলেন না। এছাড়া বাদী হলফনামা দিয়েছেন যে, টাস্কফোর্স ভয় দেখিয়ে জোর করে তার কাছ থেকে মামলায় সাক্ষর নিয়েছিল।
এ ছাড়া উক্ত কোম্পানীর পরিচালক হলফনামা দেন যে, তারা কোন লেনদেন বা উক্ত টাকা বা কোন ঘুস আমাকে দেন নি। তাই এ মামলাটি ওয়ান ইলেভেন সময়ের বিতর্কিত মামলা যা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
একটি দুস্কৃতিকারী চক্র এই মামলাকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করে আমার পদোন্নতি আটকাবার চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা,সচিব মহোদয় ও বিআইডব্লিউটিএর সম্মানিত চেয়ারম্যান স্যার সহ আমি সকল মহলের সুবিচার কামনা করছি।