রাজধানীতে পরিবহন সঙ্কট, চিরচেনা রূপে ফিরতে শুরু করেছে ঢাকা মহসীন আহমেদ স্বপন : ঈদুল ফিতরের নির্ধারিত ছুটি শেষ হয়েছে বৃহস্পতিবার (৬ জুন)। সঙ্গে বোনাস হিসেবে শুক্র ও শনিবারও শেষ। ছুটি শেষ হওয়ায় প্রিয়জনের সান্নিধ্য ছেড়ে আবারো ‘যান্ত্রিক’ ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন চাকরিজীবীরা। ফলে আবার সরব হয়ে উঠেছে ঢাকায় প্রবেশের সবকটি টার্মিনাল। রোববার এসব টার্মিনালে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। কয়েক দিন ফাঁকা থাকা রাজধানীতে বেড়েছে যানবাহন চলাচল, চিরচেনা রূপে ফিরতে শুরু করেছে ঢাকা।
বাস, ট্রেন, লঞ্চে করে সপ্তাহের প্রথম এ কর্মদিবসে নগরফেরাদের সংখ্যা ছিলো সবচেয়ে বেশি। লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী চাপসহ দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছার অভিযোগ ছিলো সাধারণ মানুষের।
ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবস। তাই রাতদুপুরে নগরফেরাদের নিয়ে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে একের পর নোঙর করে বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালি ও বরগুনা জেলার বিভিন্ন গন্তব্য থেকে আসা লঞ্চগুলো। দীর্ঘ যাত্রা, পথের ক্লান্তি আর প্রিয়জনের বিচ্ছেদ সবকিছুর পরও এ যাত্রাকে স্বস্তিদায়কই বলেছেন তারা। দূরের কিছু গন্তব্য থেকে ভোর সকালেও সদরঘাটে পৌঁছায় কয়েকটি যাত্রীবাহী লঞ্চ। অতিরিক্ত যাত্রী আর দেরিতে পৌঁছার অভিযোগ ছিল এসব যাত্রীদের।
প্রথম কর্মদিবসে অফিসে আসতে সকাল সকাল ট্রেনে চেপে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছায় দেশের উত্তর, পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। এদিকে, ঈদের ৪র্থ দিনেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সড়ক পথে ঢাকায় ফেরেন কর্মজীবী মানুষেরা।
রোববার সকালে সরেজমিন রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকায় ফেরা মানুষের বেশ ভিড়। নির্ধারিত সময়ের দু-এক ঘণ্টা পর ট্রেন এলেও মধুর স্মৃতি নিয়ে ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের চোখে মুখে ছিল স্বস্তি। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল তাদের অধিকাংশই চাকরিজীবী।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রামের সুবর্ণ এক্সপ্রেস, দিনাজপুরের একতা এক্সপ্রেস, নোয়াখালীর উপকূল এক্সপ্রেস, সিলেট থেকে উপবন এক্সপ্রেস, রংপুরের রংপুর এক্সপ্রেস, মোহনগঞ্জের মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ছাড়াও প্রায় ২০টির বেশি ট্রেন কমলাপুরে পৌঁছেছে।
দিনাজপুর থেকে আসা একতা এক্সপ্রেসের যাত্রী মোহাম্মদ হানিফ শিকদার বলেন, নির্ধারিত ছুটির পর আর কোনো অতিরিক্ত ছুটি পাইনি। তাই কর্মস্থলে যোগ দিতে চলে আসলাম। তিনি বলেন, প্রিয়জনের সঙ্গে কাটানো ঈদের ছুটিগুলো কম মনে হলেও তাদের সুখকর স্মৃতিগুলো কাজের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা বাড়াবে।
সুন্দরবন এক্সপ্রেসে খুলনা থেকে ঢাকায় এসেছেন মো. হাফেজ মোহাম্মদ সেলিম খান বলেন, আমরা চার ভাই একসঙ্গে বাড়ি গিয়েছিলাম। তিনজনই চাকরি করি। এক ভাইয়ের ইসলামপুরে কাপড়ের দোকান। নিজের ব্যবসা বলে সে আরও চার-পাঁচদিন পর আসবে। আমরা অন্যের চাকরি করি তাই আগে চলে আসতে হলো।
একই চিত্র রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে। গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ টার্মিনালগুলোতে ছিল ঢাকায় ফেরাদের ভিড়। গাবতলীতে গাইবান্ধা থেকে আসা এসআর ট্রাভেলসের যাত্রী নুর আলম হোসেন বলেন, যাত্রাটা তেমন খারাপ ছিল না। রাস্তায় তেমন যানজটও ছিল না। তবে কয়েকটি জায়গায় বাস থেমে থেমে চলেছে। যমুনার টোল প্লাজায় সময় একটু বেশি লেগেছে। এ ছাড়া পথে তেমন সমস্যা হয়নি।
ঈদের ছুটি শেষে সবাই ঢাকায় ফিরতে শুরু করলেও অনেককেই আবার ছুটি কাটাতে রাজধানী ছাড়তে দেখা গেছে। যারা ঈদে ছুটি পাননি, তারা ঈদের পঞ্চম দিন ছুটি নিয়ে যাচ্ছেন প্রিয়জনের কাছে। কমলাপুর ও গাবতলীতে এমন অনেককেই অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
রাজধানীতে পরিবহন সঙ্কট : ঈদ ঘিরে লম্বা ছুটি শেষে প্রথম কর্মদিবসে বৃষ্টির মধ্যে পরিবহন সঙ্কটে ভুগতে হয়েছে অফিসগামী যাত্রীদের। রোববার সকালে ঢাকার রাস্তায় গণ পরিবহনের সংখ্যা ছিল স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। ফলে স্টপেজে এসে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। এর মধ্যে সকাল থেকে কয়েক পশলা বৃষ্টি ভোগান্তি বাড়িয়েছে কয়েক গুণ। সকাল পৌনে ৮টায় শান্তিনগর মোড়ে কথা হয় সরকারি চাকুরে টিটু মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, আছি ঝামেলার মধ্যে। এক ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাইনি। রাইড শেয়ারিংয়ের অটোরিকশাও নাই। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মুশফিক শ্যামলী থেকে যাবেন মহাখালী। তিনি জানালেন, বৈশাখী আর মধুমতী পরিবহনের বাস চলছে। কিন্তু আসছে অনেক দেরি করে। আর যেভাবে যাত্রী ভর্তি করে আসছে, তাতে আর ওঠার উপায় থাকছে না। এবার রোজার ঈদের ছুটি ছিল ৪ থেকে ৬ জুন। তার আগে ২ জুন ছিল শবে কদরের ছুটি। মাঝখানে ৩ তারিখ যারা ছুটি নিতে পেরেছেন তারা দুই দিকে শুক্র-শনি মিলিয়ে নয় দিনের ছুটি পেয়ে গেছেন। ঈদের আগে পরে বাড়তি ছুটি থাকায় এবং মহাসড়কে যানজট না থাকায় এবার ঈদযাত্রা হয়েছে তুলনামূলকভাবে স্বস্তিতে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করে গত শনিবার থেকেই ঢাকা ফিরতে শুরু করেছে কর্মজীবী মানুষ। তবে ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসের সকালেও ঢাকা ছিল ছুটির আমেজে। অধিকাংশ দোকানপাট দেখা গেছে বন্ধ। রাজপথেও সেই চিরচেনা ভিড় শুরু হয়নি এখনও। মেরুল বাড্ডা এলাকায় আকাশ পরিবহনের চালক ইদ্রিস আলী বললেন, ঈদের মধ্যে ঢাকার অনেক বাস আশপাশের বিভিন্ন জেলায় গেছে ‘খ্যাপ’ মারতে। তাই রাজধানীতে বাস এখনও তুলনামূলকভাবে কম। তবে ঢাকার বাইরে যাওয়া বাসও ফিরতে শুরু করেছে। দুই-এক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। শ্যামলী মোড়ে বৈশাখী পরিবহনের বাস চালক মাহমুদ বলেন, বাস ছাড়তাছে আস্তে। অনেক ড্রাইভার ঈদের ছুটি কাটাইতাছে। প্যাসেঞ্জারই তো কম.. কাইল-পরশু এইরম থাকব না।