নিজস্ব প্রতিবেদক : বায়ু দূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ ৭৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এশিয়ায় এ সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখ। আর বিশ্বজুড়ে প্রতি ৮ জনের মধ্যে ১ জনের মৃত্যুর কারণ এই বায়ু দূষণ। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে গতকাল শনিবার আয়োজিত এক সেমিনারে পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এমনটা জানিয়েছেন। ‘আসুন, বায়ু দূষণ রোধ করি’ স্লোগানে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পরিবেশ অধিদপ্তর মিলনায়তনে ‘বায়ু দূষণ ও করণীয়’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), ওয়াটার কিপার্স বাংলাদেশ, ইকো সোসাইটিসহ ১০টি পরিবেশবাদী সংগঠন এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও পশ্চিম প্যাসিফিক অঞ্চলের তিনজনের মধ্যে দুইজনের মৃত্যু বায়ু দূষণ জনিত কারণে। প্রতি বছর এশিয়ায় মৃত্যু হয় প্রায় ২৬ লাখ মানুষের। বিশ্বে ৮ জনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর কারণও এটি। আর শুধু বাংলাদেশেই প্রতিবছর মারা যায় প্রায় এক লাখ ৭৫ হাজার মানুষ। এছাড়াও যে ১০ টি রোগের কারণে বাংলাদেশে বেশি মানুষের মৃত্যু হয় তার মধ্যে পাঁচটিই বায়ু দূষণ জনিত রোগ। তিনি বলেন, পাকিস্তানের পর সবচেয়ে বায়ু দূষিত দেশ বাংলাদেশ, আর দিল্লির পর দূষিত শহর ঢাকা। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন শহুরে জনগণ এবং শিশু, দারিদ্র্য এবং বয়স্ক নাগরিকেরা। বাপা’র সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. আবদুল মতিন বলেন, চীনের একটি নীতি ছিল যে, আগে উন্নয়ন করি পরে দূষণ সামলাবো। সরকার এমন কোনো নীতিই বাংলাদেশের জন্য নিচ্ছে কিনা সন্দেহ হচ্ছে। উন্নয়ন করতে গিয়ে আমরা পরিবেশকে দূষিত করে ফেলছি। তবে চীন সেটা কাটিয়ে উঠতে পারলেও আমরা পারবো না। তাই এমন নীতি হবে আমাদের জন্য আত্মঘাতী। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পগুলোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে কয়লাকে বলা হয় ‘ডার্টি ফুয়েল’। বিদেশি বিশেষজ্ঞরা গ্রাফ দিয়ে দেখিয়ে গেছেন, রামপালের ফলে যে বায়ু দূষিত হবে সেটি ঢাকা, নরসিংদীসহ কলকাতাও পৌঁছাবে। আমরা সরকারকে দেখিয়েছি যে, আমাদের দেশে কয়লা ও পরমাণুভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দরকার নেই। তবুও সরকার তা শুনছে না। প্রখ্যাত কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদের সভাপতিত্বে বাপা’র সহ সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক বলেন, পরিবেশ রক্ষার দায় সবচেয়ে বেশি সরকারের। কারণ ব্যক্তি পর্যায় থেকে সরকারের পদক্ষেপে অথবা দূষণকারী ব্যক্তি পর্যায়ের কর্মকা-ে সরকারের নির্লিপ্ততার জন্যই পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেলের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তারা ছিলেন না। সেমিনারে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এ কে এম রফিক আহম্মদ পরিবেশ সুরক্ষায় নিজ অধিদপ্তরের নানান পদক্ষেপ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পরিবেশ ও বায়ু দূষণের বিভিন্ন সোর্স আমরা চিহ্নিত করেছি এবং সেগুলোকে আইনের আওতায় এনেছি। আগে বায়ু দূষণের সবচেয়ে বড় সোর্স ছিল ইট ভাটা। এখন সেটি নেই। এখন হচ্ছে যানবাহন ও কারখানা। প্রায় ৭১ শতাংশ ইট ভাটাকে আমরা পরিবেশবান্ধব করেছি অথবা কম দূষণের তালিকায় নামিয়ে আনতে পেরেছি। দেশের ৩৩টি জেলায় এখন পরিবেশ অধিদপ্তরের কার্যালয় আছে, প্রতিটি জেলায় পরিবেশ আদালত আছে। তবে এটা ঠিক যে, আমাদের আরও কাজ করার আছে। সভায় অন্যান্যের মাঝে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। এর আগে অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামানের লেখা ‘সমসাময়িক পরিবেশ ভাবনা’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।