কঠোর বিধিনিষেধ

Uncategorized

অকারণে বের হলেই গ্রেফতার
মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার
গার্মেন্টস খোলা, পায়ে হেঁটে আসবে শ্রমিকরা
চলবে টিকাদান কার্যক্রম, আবারও রেজিস্ট্রেশন শুরু

 

এমএ স্বপন : কঠোর লকডাউন বাস্তবায়ন করতে বৃহস্পতবিার থেকেই সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা মাঠে থাকবেন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি আরো জানিয়েছেন, সব একসঙ্গে বন্ধ করা যাবে না। সবকিছু বিবেচনা নেওয়ার কারণেই পুরোপুরি শাটডাউন করা সম্ভব হয় না। বুধবার সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সবকিছু বিবেচনা নেওয়ার কারণেই পুরোপুরি শাটডাউন করা সম্ভব হয় না। সব একসঙ্গে বন্ধ করা যাবে না। কঠোরতা আরোপ করতে চাই। জনগণের সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রয়োজন ছাড়া কেউ যেন বাইরে বের না হয়।
এর আগে ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপ করে সর্বাত্মক লকডাউনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। বুধবার জারিকৃত প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উপ-সচিব রেজাউল ইসলাম। বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে শুরু হচ্ছে এই লকডাউন। ৭ দিনের এই লকডাউনে কেউ বিনা প্রয়োজনে ঘর থেকে বাইরে বের হলেই কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, লকডাউন চলাকালীন সরকারি, আধা সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ের কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
এতে আরও বলা হয়, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনা-বিজিবি-পুলিশ-র‌্যাব ও আনসার নিয়োগ এবং টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে বিশেষ কোনও কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগসমূহ এই বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।
সব শপিং মল, মার্কেট, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক, পার্টি ইত্যাদি) রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে। খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খাবার বিক্রয় করতে পারবে।
আইনশৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিসেবা, যেমন-কৃষিপণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবে।
পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক/লরি/কাভার্ড ভ্যান/কার্গো ভেসেল এ নিষেধাজ্ঞার আওতা-বহির্ভূত থাকবে। বন্দরসমূহ (বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এ নিষেধাজ্ঞার আওতা-বহির্ভূত থাকবে।
কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে। সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠন/বাজার কর্তৃপক্ষ/স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করবে। অতি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন/সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকিট প্রদর্শন করে গাড়ি ব্যবহারপূর্বক যাতায়াত করতে পারবে। সড়ক, রেল ও নৌ-পথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) ও সকল প্রকার যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।
অকারণে বের হলেই গ্রেফতার: ১ জুলাই থেকে জারি করা সরকারি বিধিনিষেধের সময় অকারণে ঘর থেকে বের হলে তাকে গ্রেফতার করে মামলা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘এমনও হতে পারে প্রথম দিন ডিএমপিতে পাঁচ হাজার মানুষ গ্রেফতার হয়েছে। এবার আমরা অত্যন্ত শক্ত থাকবো।’ বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, সঙ্গত কারণ ছাড়া কেউ যদি ঘর থেকে বের হয় তবে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর গ্রেফতার করা হবে। তার বিরুদ্ধে দ-বিধি ২৬৯ ধারায় মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হবে। আবার আদালতে না পাঠিয়ে মোবাইল কোর্ট দিয়ে তাদের তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এই ধারায় সর্বোচ্চ ৬ মাসের জেল, অর্থদ- ও উভয়দ- হতে পারে বলে জানান কমিশনার।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত মানুষের সার্বিক কার্যাবলী ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে বুধবার।
গার্মেন্টস খোলা, পায়ে হেঁটে আসবে শ্রমিকরা : সারাদেশে বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হচ্ছে। কঠোর এই লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ পূর্বক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গার্মেন্টস কারখানা খোলা থাকবে।
এ প্রসঙ্গে গার্মেন্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, যেহেতু মুভমেন্ট পাস নেই, সেহেতু যেসব শ্রমিক কারখানার পাশে থাকবে কেবল তারাই কারখানা প্রবেশ করতে পারবে।
তিনি বলেন, পায়ে হেঁটে, রিকশা বা সাইকেল চালিয়ে কারখানায় আসা যাবে। মালিকদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। যেসব মালিক কারখানার আশপাশে থাকবে কেবল তারাই কারখানায় প্রবেশ করতে পারবে। দূর থেকে কোনও শ্রমিক বা মালিক কোনও কারখানায় যাওয়া-আসা করবে না। তবে দূর থেকে কেউ আসতে হলে তাকে রিকশা অথবা সাইকেল চালিয়ে অথবা হেঁটে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চাই। একই সঙ্গে আমরা কারখানা চালু রাখতে চাই। যেহেতু রাস্তায় যানবাহন চলবে না, সেহেতু সীমিত আকারে হোক আর পুরোপুরি হোক কারখানার আশপাশের শ্রমিকদের দিয়ে কারখানা চালু রাখতে হবে।
এ প্রসঙ্গে বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, কারখানার ভেতরে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মানা হবে। আর কারখানায় শ্রমিকদের আসা-যাওয়ার জন্য মালিকরা ব্যবস্থা নেবে।
তিনি বলেন, আমাদের অধিকাংশ শ্রমিক পায়ে হেঁটে কারখানায় আসে। ফলে শ্রমিকদের কোনও সমস্যা হওয়ার কথা না। তবে যেসব শ্রমিক দূর থেকে আসে। তারা আপাতত কারখানায় আসবে না। অথবা মালিকদের গাড়িতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানায় প্রবেশ করবে।
তিনি উল্লেখ করেন, সবাই আইডি কার্ড প্রদর্শন করে কারখানায় প্রবেশ করবে। মালিক ও কর্মকর্তারাও সার্বক্ষণিক আইডি কার্ড প্রদর্শন করে পুলিশের সঙ্গে কোমল ব্যবহারের মধ্য দিয়ে কারখানা প্রবেশ করবে। তবে ঢাকা বা গাজীপুর থেকে নারায়ণগঞ্জ যাওয়া আসা অথবা নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা বা গাজীপুর যাওয়া আসা আপাতত বন্ধ থাকবে।
মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘যানবাহন বন্ধ থাকবে এটা মেনেই কারখানা খোলা থাকবে। তিনি বলেন, ‘যেসব শ্রমিক বা কর্মকর্তা অথবা দায়িত্বশীল কারখানার দূরে বসবাস করেন, এই কয়দিনের জন্য তারা কারখানার আশপাশে থাকবেন, অথবা কারখানার ভেতরে অবস্থান করবেন।
চলবে টিকাদান কার্যক্রম, আবারও রেজিস্ট্রেশন শুরু : লকডাউনেও করোনা ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচি চালু থাকবে। এজন্য টিকার রেজিস্ট্রেশন (নিবন্ধন) কার্যক্রম আবারও খুলে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতর আয়োজিত ভার্চুলায় বুলেটিনে এ তথ্য জানান ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সদস্য সচিব ডা. শামসুল হক।
তিনি বলেন, বুধবার থেকে টিকা নিতে বন্ধ থাকা রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম খুলে দেওয়া হচ্ছে।
ডা. শামসুল হক বলেন, অনেকেই জানতে চেয়েছেন চলমান লকডাউনে টিকা কার্যক্রম চালু থাকবে কিনা এবং রাস্তায় বের হলে কেউ সমস্যায় পরবেন কিনা। তাদের জন্য বলছি, চলমান লকডাউনে টিকাদান কর্মসূচি চালু থাকবে তবে তাদেরকে অবশ্যই টিকাকার্ড নিয়ে বের হতে হবে। রাস্তায় যদি আইনশৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনীর মুখোমুখি হতে হয় তাহলে টিকাকার্ড দেখালেই তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হবে।
ডা. শামসুল হক বলেন, টিকার জন্য নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করা হচ্ছে। নিবন্ধনের পর মোবাইল ফোনে এসএমএস গেলে নির্দিষ্ট টিকাদান কেন্দ্রে এসে টিকা নেওয়া যাবে।


বিজ্ঞাপন