মো:রফিকুল ইসলাম,নড়াইলঃ
নড়াইলে বিশ্ব বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ২৮তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আজ (১০ অক্টোবর) সোমবার সকালে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়েছে। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়র মৃত্যু বরণ করেন। শিল্পীর মৃত্যু বার্ষিকীকে ঘিরে জেলা প্রশাসন, এস এম সুলতান ফাউন্ডেশন, সুলতান স্মৃতি সংগ্রহশালা দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করেছে। তবে চির কুমার এস এম সুলতানকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যে মানুষটি আদর, স্নেহ, মায়া-মমতা দিয়ে আগলে রেখেছিলেন কেমন আছেন সেই নিহার বালা ? এক কথায় না মোটেও ভালো নেই সুলতানের পালিত কণ্যা নিহার বালা। অন্ধত্ত। বরন করে রোগ, শোকে জীবন এখন আর চলেনা। সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে জীবন-মৃত্যুর ক্ষন গুনছেন তিনি। নিহারবালার মেয়ের ছেলে নয়ন বলেন, বোহেমিয়ান ভবঘুরে সুলতানকে শিল্পকর্মে মনোনিবেশ করার জন্য যে মানুষটি তার পাশে ছায়ার মত ছিলেন তিনিই তার পালিত কন্যা নিহার বালা। তার জন্যই আমরা পেয়েছিলাম সুলতানের বিশ্ব মানের সব চিত্র কর্ম। সুলতান ভক্ত শেখ হানিফ বলেন,সুলতানের জন্ম বার্ষিকী,মৃত্যু বার্ষিকীতে লাখ-লাখ টাকা খরচ করে অনুষ্ঠান করা হয়। অথচ শিল্পকলা একাডেমি থেকে নিহার বালার জন্য ৫হাজার টাকা এবং জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে দেয়া হয় আরও ৫ হাজার টাকাা এই ১০ হাজার টাকায় চলে নিহার বালার ওষুধসহ অন্যান্য খরচ,যা খুবই সামান্য। এস এম সুলতান ফাউন্ডেশনের কিউরেটর তন্দ্রা মুখার্জী বলেন,এস এম সুলতানের সকল বিষয়ে আমার চেয়ে বেশি আর কেউ জানেন না। সুলতানকে জানতে হলে নিহার বালাকে অবশ্যই জানতে হবে,নিহার বালা মায়ের মত করে সুলতানকে আগলে রেখেছিলেন। তার উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়,বিশ্ব বরেণ্য চিত্রশিল্পী এসএম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট জন্ম গ্রহন করেন,নড়াইলের মাছিমদিয়ায় বাবা মেছের আলী ও মা মাজু বিবির ঘরে। চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের মৃত্যুর পর স্মৃতিসংগ্রহশালা,শিশুস্বর্গ নির্মাণ,আর্ট কলেজসহ বেশ উন্নয়ন হয়েছে। তিনি নড়াইলবাসীর কাছে ‘লাল মিয়া’ নামে পরিচিত ছিলেন। বরেণ্য এই শিল্পীর মৃত্যুর পর তার বাসভবন ঘিরে গড়ে উঠেছে সুলতান স্মৃতিসংগ্রহশালা,শিশুস্বর্গ,কলেজসহ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড যেমন,ধানকাটা,বিভিন্ন ধান ঝাড়া,জলকে চলা,চর দখল,গ্রামের খাল,মৎস শিকার,গ্রামের দুপুর, নদী পারাপার,ধান মাড়াই,জমি কর্ষনে যাত্রা,মাছ ধরা, নদীর ঘাট,ধান ভানা,গুন টানা,ফসল কাটার ক্ষনে, শরতের গ্রামীন জীবন,শাপলা তোলাসহ বিখ্যাত সব ছবি রয়েছে। চিত্রশিল্পের অন্নান্য অবদানের জন্য এস এম সুলতান ১৯৮২ সালে পেয়েছেন,একুশে পদক,১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন,১৯৮৪ সালে রেসিডেন্ট আর্টিস্ট স্বীকৃতি পেয়েছেন,১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননাসহ ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যান অব দ্য ইয়ার,নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ম্যান অব এশিয়া পুরস্কার পেয়েছেন। এদিকে,২০০১ সাল থেকে সুলতান ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একজন গুণী চিত্রশিল্পীকে সুলতান পদক দেয়া হচ্ছে। বরেণ্য এই শিল্পী অসুস্থ অবস্থায় ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রিয় জন্মভূমি নড়াইলের কুড়িগ্রাম এলাকায় সংগ্রহশালা চত্বরে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন,এসএম সুলতান।