গাজীপুর প্রতিনিধি : গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ থানাধীন বালিগাঁও সাকিনস্থ মৃত খবির উদ্দিনের বাসার ভাড়াটিয়া জনি আক্তার রুপা (২০) নিখোঁজ সংক্রান্তে অনুসন্ধানকালে ০২ মাস ২৪ দিন পর জানা যায় যে, ভিকটিম জনি আক্তার রুপা (২০) পিতা-রবিউল ইসলাম, মাতা-আজামা খাতুন, সাং-ফাজিলপুর, থানা-মাদারগঞ্জ জেলা-জামালপুর, বর্তমানে বালিগাঁও খবির উদ্দিনের বাড়ীর ভাড়াটিয়া, থানা-কালিগঞ্জ, জেলা-গাজীপুর নিখোঁজের পর হত্যা হয়েছে। উক্ত হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ ঘটনায় জড়িত আসামীদের গ্রেফতার করেছে পিবিআই গাজীপুর, এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।
জানা গেছে, মামলার ঘটনার সাথে জড়িত গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ মোজাম্মেল হক (৩২), পিতা-মৃত সোহরাব প্রামানিক, সাং-হিদাগারী, থানা-মাদারগঞ্জ, জেলা-জামালপুর ২। মোঃ জহির আলী (৩৯) পিতা-মৃত সোহরাব প্রামানিক, সাং-চেঙ্গানিয়া, থানা-ইসলামপুর, জেলা-জামালপুরদ্বয়কে গত ৩০ মার্চ ১০ টা ২০ মিনিটের সময় গাজীপুর মহানগর বাসন থানাধীন চাঁন্দনা চৌরাস্তা এলাকা হতে গ্রেফতার করা হয়।
ভিকটিম জনি আক্তার রুপা(২০), স্বামী-মোঃ উজ্জল মিয়া, পিতা-রবিউল ইসলাম, সাং- ফাজিলপুর, থানা-মাদারগঞ্জ, জেলা-জামালপুরকে গত ০৬/০১/২০২৩ তারিখ সকাল অনুমান ০৮.০০ ঘটিকার সময় গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ থানাধীন বালিগাঁও সাকিনস্থ মৃত খবির উদ্দিনের বাসা হতে জনি আক্তার রুপার পূর্বের স্বামী মোঃ মোজাম্মেল হক ফুসলিয়ে অপহরন করে জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ থানার বালিঝুরি বাজারে নিয়ে যায়।
ভিকটিমের বর্তমান স্বামী মোঃ উজ্জল মিয়া, পিতা-মোঃ মনু মিয়া, সাং-চিনাডুলি, থানা-ইসলামপুর, জেলা-জামালপুর তার স্ত্রীর কোন খোঁজ খবর না পেয়ে গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ থানায় লিখিতভাবে অবহিত করলে এ সংক্রান্তে কালিগঞ্জ থানার সাধারন ডায়েরী নং-৬৭৭, তারিখ-২৪/০১/২০২৩ ইং রুজু হয়।
পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবার হতে উল্লেখিত জিডির বিষয়টি পিবিআই গাজীপুর জেলাকে অবহিত করলে পিবিআই গাজীপুর জেলা অনুসন্ধানকালে প্রাথমিকভাবে ভিকটিম জনি আক্তার রুপা (২০) হত্যা হয়েছে মর্মে সাক্ষ্য প্রমাণ পায়। পরবতর্ীতে এই সংক্রান্তে বর্তমান স্বামী মোঃ উজ্জল মিয়া বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করলে গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ থানার মামলা নং ১৯, তারিখ-২৯/০৩/২০২৩ ইং, ধারা ৩৬৪/৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু হয়।
মামলাটি রুজু হওয়ার পূর্বেই নিখোঁজ জিডি সংক্রান্তে পিবিআই গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এর দিক নির্দেশনায় উপ-পুলিশ পরিদর্শক সনজিৎ বিশ্বাস উল্লেখিত জিডির অনুসন্ধান কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন এবং অনুসন্ধানকালে নিখোঁজ জনি আক্তার রুপা হত্যা হয়েছে মর্মে প্রাথমিক সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। মামলাটি রুজুর পর পিবিআই হেডকোয়ার্টার্স ঢাকা মামলাটি অধিগ্রহণ করে পিবিআই গাজীপুর জেলাকে মামলাটি তদন্তের জন্য নির্দেশ প্রদান করে।
অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার) পিপিএম এর সঠিক তত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই গাজীপুর জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বিপিএম-সেবা এঁর সার্বিক সহযোগীতায় মামলাটি তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পুলিশ পরিদর্শক সনজিৎ বিশ্বাস তদন্ত করেন।
তদন্তকালে পিবিআই গাজীপুর জেলার একটি চৌকস টিম আসামীদেরকে গ্রেফতার করে তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক গত ৩০ মার্চ, জামালপুর জেলার ইসলামপুর ও বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি থানা এলাকার যমুনা নদীর চরে ও নদীতে বাদী ও গ্রেফতারকৃত আসামীসহ মামলার ভিকটিমের মৃত দেহ সন্ধানের চেষ্টা করেন। মৃত দেহ সন্ধানের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ভিকটিম জনি আক্তার রুপা (২০) এর সাথে গ্রেফতারকৃত আসামী মোজাম্মেল এর ২০১৫ সালে পারিবারিকভাবে বিবাহ সম্পন্ন হয়। এরপর তাদের দাম্পত্য জীবনে দুটি ছেলে সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। পারিবারিক ও আর্থিক অভাব অনটনের কারণে আসামী মোঃ মোজাম্মেল হক মালেশিয়া চলে যায়।
আসামী মোজাম্মেল দীর্ঘ চার বৎসর মালেশিয়া থাকাকালীন ভিকটিমের মায়ের ব্যাংক একাউন্টে বিভিন্ন সময়ে প্রায় নয় লক্ষ টাকা পাঠিয়ে ছিলেন। গ্রেফতারকৃত আসামী মোজাম্মেল দীর্ঘ চার বৎসর পর দেশে আসার পর তার পাঠানো টাকার বিষয়ে ভিকটিম এবং তার মায়ের কাছে জানতে চাইলে তারা টাকার কোন হিসাব দিতে পারেনি। এরপর পারিবারিক মিমাংসায় আসামী মোজাম্মেলকে ভিকটিমের পরিবার দুই লক্ষ বিশ হাজার টাকা ফেরত দেয়।
এরপর ভিকটিম জনি আক্তার রুপা (২০) গোপনে আসামী মোঃ মোজাম্মেল হকের বোনের সতিনের ছেলে মোঃ উজ্জল মিয়া (২৬), পিতা-মোঃ মনু মিয়া, সাং-চিনাডুলি, থানা-ইসলামপুর, জেলা-জামালপুর, বর্তমানে-সাং- বালুগাঁও থানা-কালিগঞ্জ,জেলা-গাজীপুর এর সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে যেয়ে গ্রেফতারকৃত আসামী মোজাম্মেলের সংসার ত্যাগ করে এবং তার ছোট দুটি সন্তানকে রেখে উজ্জলের সাথে গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার বালিগাঁও গ্রামে বসবাস করতে শুরু করে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামী তার বড় ভাই মোঃ জহির আলী (৩৯) এর সাথে পরিকল্পনা করে যে, ভিকটিম জনি আক্তার রুপা পারিবারিক, সামাজিক এবং আর্থিকভাবে তাদের ব্যাপক ক্ষতি করেছে। তাই যেভাবে হোক তার প্রতিশোধ নিতে হবে। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত আসামী মোজাম্মেল ঘটনার দিন অর্থাৎ গত ৬ জানুয়ারী মোবাইলের মাধ্যমে ভিকটিম জনি আক্তার রুপাকে তাদের দুটি সন্তানদের বিষয়ে আলাপ আলোচনা করার জন্য গ্রামে আসতে অনুরোধ করেন।
সে মোতাবেক ভিকটিম জনি আক্তার রুপা (২০) গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ থেকে গ্রেফতারকৃত আসামী মোজাম্মেলের উদ্দেশ্যে রওনা করে। বিকাল অনুমান ৪ টার সময় ভিকটিম জামালপুরের মাদারগঞ্জ পৌঁছার পর আসামী মোজাম্মেল তাকে বাস ষ্ট্যান্ড হতে গ্রহণ করে এবং তাকে নিয়ে বগুড়া জেলার সারিয়াকান্দি যমুনা নদীর চরে তার এক বন্ধুর বাসায় বসে আলাপ আলোচনা করার জন্য রওনা করে। আসামী মোজাম্মেল পূর্বেই তার বড় ভাই জহির আলীকে একটি নৌকা নিয়ে মাদারগঞ্জ থানার জামথৈল ঘাটে আসতে বলে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গ্রেফতারকৃত আসামী দুই জন ভিকটিমসহ জামথৈল ঘাট হতে নৌকা যোগে যমুনার চরে যাওয়ার পর গ্রেফতারকৃত আসামী দুইজন প্রথমে ভিকটিমকে তার ব্যবহৃত ওড়না দিয়ে হাত পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং আসামী মোজাম্মেল তার সঙ্গে আনা দা দিয়ে জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে মৃত দেহ বালিভর্তি বস্তায় ভরে যমুনা নদীর গভীর পানিতে ফেলে দেয়।
এ বিষয়ে পিবিআই পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বিপিএম-সেবা আজকের দেশ ডটকম কে জানান যে এটা একটা নৃশংস হত্যাকান্ড। নিখোঁজ সংক্রান্ত একটি জিডি অনুসন্ধানকালীন এই হত্যা মামলার রহস্য উম্মোচিত হয়। পরবর্তীতে এই সংক্রান্তে কালিগঞ্জ থানায় উল্লেখিত মামলাটি রুজু হয় এবং পিবিআই গাজীপুর জেলা মামলাটি তাৎক্ষনিকভাবে অধিগ্রহন করে। মামলার ঘটনায় জড়িত দুইজন আসামীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা অত্র মামলার ভিকটিমকে কিভাবে হত্যা করেছে এবং হত্যার পর লাশ কোথায় কিভাবে গোপন করেছে তার বিস্তারিত বর্ণনা দেয়।
গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ মোজাম্মেল হক ও মোঃ জহির আলী অত্র মামলার ঘটনায় নিজেদের জড়িয়ে বিস্তারিত বর্ননা করে গত ৩১ মার্চ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।