ভোক্তা অধিদপ্তর ও সাজগোজ লিঃ এর অংশগ্রহণে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত 

Uncategorized আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব)  এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান।


বিজ্ঞাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক  : আজ মঙ্গলবার  ২১ নভেম্বর,  সকাল ৯  টায় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে, জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও সাজগোজ লিঃ-এর যৌথ উদ্যোগে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও সাজগোজ লিঃ এর কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব)  এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান।

কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ)  মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান ও পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষনাগার)  ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেনসহ প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালকবৃন্দ এবং সাজগোজ লিঃ এর কর্মকর্তাবৃন্দ ।

কর্মশালার শুরুতেই অধিদপ্তরের মহাপরিচালক উক্ত কর্মশালার প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ সম্পর্কে সম্যকভাবে ধারনা অর্জনের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে তার সফল বাস্তবায়নে লক্ষ্যে সাজগোজ লি: এর পক্ষ থেকে অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করা হয়। অধিদপ্তরের প্রতিনিধির সাথে সাজগোজ লি: এর প্রতিনিধির বর্ণিত বিষয়ে বিশদ আলোচনা হয়। এই আলোচনা ফলপ্রসু করার লক্ষ্যেই আয়োজন করা হয়েছে আজকের এই কর্মশালা।

মহাপরিচালক কর্মশালায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে অধিদপ্তর কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পর্কে সকলকে অবগত করেন। মহাপরিচালক বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে যাচ্ছি কিন্তু এই ক্ষেত্রে সফল হতে হলে প্রয়োজন ভোক্তাদের সচেতনতা ও সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এই সচেতনতার অংশ হিসেবে আয়োজন করা হয়েছে এই কর্মশালা। তিনি আরও বলেন, ভোক্তাদের অধিকার নিশ্চিত করা বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণ এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ এর অংশ হিসেবে অধিদপ্তর যুগোপযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে দিচ্ছে ও ভোক্তাদের সচেতন করার চেষ্টা করছে। অধিদপ্তরের নিজস্ব ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, CCMS (Consumer Complaint Management System) এর মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করা এই পদক্ষেপেরই প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সহজে স্বল্প সময়ে অধিকসংখ্যক ভোক্তাকে সচেতন করা যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ভোক্তাদের এই বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করা দরকার যে, বেশি দামে কোন পণ্য ক্রয় করলেও সেটা গুণগত মানসম্মত নাও হতে পারে।

মহাপরিচালক বলেন, অধিদপ্তরের সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশহিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং ডিপাটমেন্ট এর সাথে অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে মাস্টার্স অব প্রোফেশনাল (MPM) প্রোগ্রাম চালুকরণ ও বর্ণিত প্রোগ্রামসহ মার্কেটিং বিভাগের কারিকুলামে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করা হয়েছে ।

মহাপরিচালক আলোচনায় বলেন, যেকোনো তথ্যর জন্য অধিদপ্তরের হট লাইন নম্বর ১৬১২১ এ ফোন করে ভোক্তাগণ তথ্য জানতে পারছেন। তিনি জানান, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বিশেষত সয়াবিন তেল ও চিনির মূল্য (যা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ঠিক করে দেয়) স্থিতিশীল ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে অধিদপ্তর কর্তৃক রিফাইনারি থেকে পরিবেশক পর্যায় পর্যন্ত তেল ও চিনির মজুদ পরিস্থিতি জানার লক্ষ্যে একটি অ্যাপস তৈরির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর মাধ্যমে এসকল পণ্যের অবৈধ মজুদ সনাক্ত করা সহজ হবে এবং এর সাথে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অধিদপ্তর কর্তৃক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হবে।

আলোচনায় মহাপরিচালক অধিদপ্তর কর্তৃক পরিচালিত অভিযানে কসমেটিকস পণ্যের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত অসঙ্গতি যথা কসমেটিকস পণ্যের মোড়কে আমদানিকারকের তথ্য এবং সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উপাদান, পরিমাণ, ব্যবহারবিধি, উৎপাদনের তারিখ ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ না থাকা, প্রাইসগান মেশিনের সাহায্যে খুচরা বিক্রেতা নিজেই সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য প্রদান করা, আমদানিকারক কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য কেটে অধিক মূল্য লেখা, বিদেশী পণ্য নকল করে দেশের অভ্যন্তরে তৈরি করে বিদেশী পণ্য হিসেবে বিক্রয় করা হয়, নকল কসমেটিকস পণ্যের ক্ষেত্রে সঠিক মানদন্ড না থাকা এবং বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন  (বিএসটিআই) কর্তৃক নিষিদ্ধ/অনুমোদনহীন ১৫ টি বিদেশি ব্রান্ডের  ফেস ক্রিম ও হোয়াইটনেস ক্রিম সহ অন্যান্য কসমেটিকস বিক্রয় ইত্যাদি বিষয় তুলে ধরেন।

সভায় মহাপরিচালক বলেন সকল কসমেটিকস প্যাকেটজাত। সেক্ষেত্রে মোড়কজাতকরণ বিধিমালা অনুসরণ করে পণ্য বিক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বিদেশি কসমেটিকস এর ক্ষেত্রে আমদানীকারকের তথ্য থাকে না এবং আমদানীকারক কর্তৃক এমআরপি প্রদান করা হয় না। এছাড়াও কসমেটিকস পণ্যে বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় যা ভোক্তার ত্বকের ক্ষতি করছে।

ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইনটি ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণে যেভাবে ভূমিকা পালন করছে সে বিষয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক জান্নাতুল ফেরদাউস।

এরপর  ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রামান্যচিত্র এবং কসমেটিকস পণ্যের উপর নির্মিত প্রামান্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষনাগার)  ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সবাইকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, সাজগোজের পক্ষ থেকে এই কর্মশালার আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করায় আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ভোক্তার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে ভোক্তা ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য। ভবিষ্যতেও আমরা এক সাথে কাজ করতে চাই।

সাজগোজ লি: এর চীফ অপারেটিং অফিসার সরদার মোহাম্মদ মিলকী মাহমুদ বলেন, আজকের কর্মশালার মাধ্যমে আমরা অনেক সমৃদ্ধ হয়েছি। এর মাধ্যমে অধিদপ্তরের সাথে আমাদের বন্ধন আরও দৃঢ় হয়েছে। ভোক্তাদের সচেতন করার লক্ষ্যে আমাদের এক সাথে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। ভোক্তা স্বার্থে আমরা এক সাথে কাজ করতে চাই।

আলোচনায় অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ)  মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, আজকের কর্মশালা থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। কর্মজীবনে আমাদের মানবিক হতে হবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক শুদ্ধাচারের চর্চা করতে হবে। তিনি মূল ডিলার থেকে পণ্য সংগ্রহ করার জন্য সাজগোজ লি: কে পরামর্শ দেন। পরিশেষে তিনি ভোক্তাদের সচেতন করার লক্ষ্যে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করার কথা বলেন।

সাজগোজ লি: এর চীফ কনটেন্ট অফিসার সিনথিয়া সারমিন ইসলাম কর্মশালা আয়োজনের জন্য সার্বিক সহযোগিতা করায় সাজগোজ লি: এর পক্ষ থেকে অধিদপ্তরের সকলের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন, আমার জানা মতে সরকারি অধিদপ্তরসমূহের মধ্যে ভোক্তা অধিদপ্তর সর্বাধিক জনপ্রিয়। এটি সকল ভোক্তার আস্থার জায়গা। তিনি বলেন, ২০১৩ সাল থেকে সাজগোজ লি: এর যাত্রা শুরু হয়। ২০১৭ সাল থেকে আমরা ই-কমার্স প্লাটফর্মে যুক্ত হই। আমাদের লক্ষ্য ভোক্তা সন্তুষ্টি। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে অধিদপ্তরের সাথে এক যোগে কাজ করতে চাই। মুক্ত আলোচনায় মহাপরিচালক সাজগোজ লিঃ-এর বিভিন্ন প্রতিনিধিগণ কর্তৃক উত্থাপিত ভোক্তা-অধিকার সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন।

কর্মশালার শেষ পর্যায়ে মহাপরিচালক সাজগোজ লি: এর প্রতি কর্মশালায় প্রদত্ত নির্দেশনা অনুযায়ী আইন মেনে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা বলেন। তিনি বলেন, অধিদপ্তর ভোক্তার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও সুরক্ষা প্রদান করেন। তিনি বলেন, সাজগোজ লি: এর পক্ষ থেকে নকল কসমেটিকসের তথ্য প্রদান করলে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করার মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ভোক্তা স্বার্থ বিবেচনায় জনসচেনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে অধিদপ্তর ও সাজেগোজ লি: এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। ভোক্তা অধিকার রক্ষায় আমরা সাজগোজ লি: কে সাথে নিয়ে কাজ করতে চাই। আজকের কর্মশালার মাধ্যমে অধিদপ্তরের সাথে সাজগোজ লি: এর যে পথ চলা শুরু হলো আগামী দিনে তা আরও মসৃণ হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে সেমিনারে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সেমিনারের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *