অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ভোক্তা অধিদপ্তর কর্তৃক  ইভ্যালির গ্রাহকদের পাওনা টাকা ফেরত 

Uncategorized আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা প্রশাসনিক সংবাদ বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী

নিজস্ব প্রতিবেদক  :  জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ইভ্যালির গ্রাহকদের পাওনা টাকা ফেরত প্রদান অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়,এ খবর সংশ্লিষ্ট সুত্রের।


বিজ্ঞাপন

জানা গেছে,  রবিবার  ৪ ফেব্রুয়ারি,  সকাল সাড়ে  ১০ টায়  জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের নতুন সম্মেলন কক্ষে (১ কারওয়ান বাজার, টিসিবি ভবন ১২ তলা) জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক অভিযোগ নিষ্পত্তির মাধ্যমে ইভ্যালির গ্রাহকদের পাওনা টাকা ফেরত প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। উল্লেখিত  অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার)  ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন, উপপরিচালক (অভিযোগ)  মোঃ মাসুম আরেফিন, ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল, কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া, অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, ইভ্যালির গ্রাহকবৃন্দ এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (অভিযোগ)  মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অভিযোগ) জনাব মোঃ মাসুম আরেফিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বর্তমানে অধিদপ্তরে ইভ্যালির বিরুদ্ধে গ্রাহকদের প্রায় ৭,০০০ অভিযোগ অনিষ্পন্ন রয়েছে। ইভ্যালি সম্প্রতি পুনরায় তাদের ব্যবসা কার্যক্রম চালু করলে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়ে শোকজ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে ইভ্যালির মাধ্যমে আজ ১৫০টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করে তাদের পাওনা টাকা ফেরত প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি অভিযোগগুলো নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে মর্মে তিনি অনুষ্ঠানে অবহিত করেন।

আলোচনায় অধিদপ্তরের পরিচালক (কার্যক্রম ও গবেষণাগার)  ফকির মুহাম্মদ মুনাওয়ার হোসেন বলেন, ই-কমার্স সেক্টরে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল তা থেকে উত্তরণের চেষ্টা চলছে। গ্রাহকদের পাওনা টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে ইভ্যালির এগিয়ে আসা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, আজ ১৫০ জন অভিযোগকারীর পাওনা টাকা ফেরত প্রদানের ব্যবস্থা করা হলেও যে সকল অভিযোগকারীগণ আজ টাকা পাচ্ছেন না তাদের হতাশ হওয়ার কিছুই নেই। অধিদপ্তর কর্তৃক ইভ্যালির সাথে যোগাযোগ করে পর্যায়ক্রমে সব অভিযোগ নিষ্পত্তি করার উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।

সভায় কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া ক্যাবের পক্ষ থেকে অধিদপ্তরের এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, এ উদ্যোগ ই-কমার্স সেক্টরের জন্য শুভ লক্ষণ। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত সকল ভোক্তা তাদের পাওনা টাকা ফেরত পাবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।

আলোচনায় ইভ্যালির সিইও মোহাম্মদ রাসেল তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। তিনি বলেন এই অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তার পাশাপাশি ইভ্যালিও উপকৃত হয়েছে। তিনি জানান ইভ্যালি গত একমাসে ৬৫,০০০ অর্ডার ডেলিভারির মাধ্যমে যাবতীয় ব্যয় ব্যতীত যে লাভ করেছে তা থেকে এই ১৫০ জন গ্রাহকের পাওনা টাকা ফেরত প্রদান করা হচ্ছে। এজন্য তিনি ইভ্যালির মার্চেন্ট ও ক্রেতাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি আরও বলেন, ইভ্যালি ব্যবসা করতে পারলে পর্যায়ক্রমে সকল গ্রাহকদের পাওনা টাকা ফেরত দিতে পারবে। তবে সেটা একসাথে নয়। তিনি এ মাসের শেষ সপ্তাহে আরেকটি ধাপে গ্রাহকদের পাওনা টাকা ফেরত প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে মর্মে আশা প্রকাশ করেন।

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ই-কমার্স সেক্টরের মসৃণ ও সাবলীল সম্প্রসারণ প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে ই-কমার্স সেক্টর অনেকদূর এগিয়ে যাচ্ছে। একটা সময়ে ই-কমার্স সেক্টরে সমস্যার কারণে মানুষ আন্দোলন করেছিল। তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আইআইটি উইং এ কর্মরত অবস্থায় পেমেন্ট গেটওয়েতে আটকে থাকা গ্রাহকদের ৩৮০ কোটি টাকা ফেরত প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয়ে সকলকে অবহিত করেন।

তিনি জানান, সম্প্রতি পুনরায় ব্যবসায় ফিরে আসার শর্তে হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে ইভ্যালির কর্ণধার মোহাম্মদ রাসেল বিগ ব্যাঙ অফার ঘোষণা করেন। এ প্রেক্ষিতে অধিদপ্তরে ইভ্যালির বিরুদ্ধে প্রাপ্ত অভিযোগসমূহ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ইভ্যালিকে শোকজ করা হয়। শোকজের জবাবসহ ইভ্যালির পক্ষ থেকে অধিদপ্তরে একটি পরিকল্পনা সাবমিট করা হয়।

পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের সময় নির্ধারিত ছিল না। তাই অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পুনরায় স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রদানের কথা বলা হয়। এ প্রেক্ষিতে পর্যায়ক্রমে সকল গ্রাহকদের পাওনা টাকা ফেরত প্রদানের অংশ হিসেবে আজকের এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। ইভ্যালি ব্যবসা করতে পারলে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পাওনা টাকা ফেরত পাওয়ার একটি সুযোগ থাকবে বলে তিনি মনে করেন। তবে এক্ষেত্রে ইভ্যালিকে অবশ্যই স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি আইন ও বিধি-বিধান মেনে ব্যবসা করলে ইভ্যালি ব্যবসায়িক সুরক্ষা পাবে। তবে এ ক্ষেত্রে আইনের ব্যত্যয় হলে অধিদপ্তর ভোক্তার স্বার্থে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে মর্মে তিনি জানান। ই-কমার্স সেক্টরে যেন ভোক্তাগণ বিপর্যয়ের সম্মুখীন না হোন সেজন্য সরকার কর্তৃক সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইভ্যালির যাত্রা শুরু হলো। আজ যারা পাওনা টাকা ফেরত পেলেন তারা সৌভাগ্যবান। পর্যায়ক্রমে বাকীদের টাকাও ফেরত প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে।

মুক্ত আলোচনায় মহাপরিচালক অংশগ্রহণকারীবৃন্দের ভোক্তা-অধিকার আইন সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন।মহাপরিচালক প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে তাঁদের অনুসন্ধানি প্রতিবেদনের জন্য ধন্যবাদ জানান এবং ই কমার্স সেক্টরে অস্থিরতা নিরসনে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের আহবান জানান।

তিনি গ্রাহকদের পাওনা টাকা ফেরত প্রদানের ক্ষেত্রে ইভ্যালিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। পরিশেষে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের পাওনা টাকা যত দ্রুত সম্ভব ফেরত প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে আশাবাদ ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *