বিসিক চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক।
বিশেষ প্রতিবেদক : বিসিক চেয়ারম্যান পদে আসীন হওয়ার পর থেকেই সঞ্জয় কুমার ভৌমিক কর্মচারীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছেন। দেশের সংসদীয় আইন, সরকারের নির্বাহী আদেশ, প্রচলিত শ্রম আইন এবং শ্রম অধিকার মানতে তিনি কোন মতেই রাজী নয়। যা তার কাজে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ বহন করে চলেছে। এম, এ পাশ করে তিনি করছেন সরকারের শীর্ষ পদের চাকরি আর তার অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান বিসিকের একজন ক্যাটালগার মোঃ হুমায়ুন করির এম, এ পাশ করে দৈনিক কামলাগিরি করে তার সংসার চালাচ্ছেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস দীর্ঘ ৪ বছরের অধিক সময় ধরে বেতন ভাতা বন্ধ রেখে হুমায়ুনের সাথে করে চলেছেন অমানবিক আচরণ!
সর্বোচ্চ আদালতের রায় উপেক্ষা করে তিনি তার পূর্বসূরীদের দেখানো পথেই অটল থেকে হুমায়ুন এবং হুমায়ুনের পরিবারকে বাধ্য করছেন মানবেতর জীবন যাপন করতে! আমলাতন্ত্রের কারসাজিতে হুমায়ুন এবং হুমায়ুনের পরিবার দিশেহারা এবং অস্তিত্ব সংকটে পতিত! সবিস্তারে সংবাদ প্রকাশের পরও হুমায়ুনের আইনগত অধিকার ফিরিয়ে দেয়া হয়নি।
বিসিকের ক্যাটালগার হুমায়ুন কবির এবং শারমিন আহমেদ নামক অন্য একজন বিসিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন পদোন্নতি পাওয়ার জন্য। মামলার গতি প্রকৃতি এক এবং অভিন্ন হওয়া স্বত্তেও শারমিন আহমেদ এর চাকুরী বহাল আছে, চালু আছে তার বেতন ভাতা। হুমায়ুনের ক্ষেত্রে ভিন্ন নীতি গ্রহণ করে পদোন্নতির জন্য মামলা করার কারণে বন্ধ রাখা হয়েছে তার বেতন ভাতা।
আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে উচ্চমান সহকারীদের গ্রেডেশান তালিকায় হুমায়ুনকে প্রতিবারই দেখানো হচ্ছে কর্মরত অবস্থায়। একই অঙ্গে কত রূপ? কোথায় আছে মানবিক মূল্যবোধ এবং মানবতাবোধ- এটি একটি অমানবিক আচরণের উজ্জল নজির। তিনি নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন তিনি মহাক্ষমতাবান একজন আমলা।
বিসিক চেয়ারম্যানের কর্মচারীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণের অন্যতম নিদর্শন তৈরী করেছেন ৩রা এপ্রিল ২০২৪ তারিখে ৯২৭৭ নং স্মারকের মাধ্যমে তেজগাওস্থ বিসিক ভবনে ক্যান্টিন চালুকরণ এবং পরিচালনার জন্য কমিটি গঠনের মাধ্যমে। যেখানে উপদেষ্টা কমিটির ০৭ জনের মধ্যে তিনি ১ জন এবং উক্ত কমিটির ৭ জনের মধ্যে কর্মকর্তা রাখা হয়েছে ০৬ জনকে। রাখা হয়েছে কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতিকে উক্ত কমিটির ৭ নম্বর সদস্য হিসাবে। ১০ সদস্য বিশিষ্ট ক্যান্টিন পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়েছে মোঃ আব্দুল মতিন, পরিচালক (প্রকৌশল ও প্রকল্প বাস্তবায়ন) নামক সরকারের উপ-সচিব পদ মর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে আহবায়ক করে।
আর সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তার বিশেষ পছন্দের লোক মোঃ সরোয়ার হোসেনকে। যেখানে একজন কর্মচারীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। কর্মচারী বিদ্বেষী মনোভাব প্রদর্শন এবং কর্মচারীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণের আর কোন জোরালো প্রমানের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। কর্মচারীদের স্বার্থ নষ্ট করে কর্মকর্তাদের স্বার্থ সিদ্ধির উজ্জল দৃষ্টান্ত আর কি হতে পারে?
ক্যান্টিন পরিচালনা বিষয়ে বাংলাদেশের নজিরবিহীন এ ধরনের কমিটি দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ সচিবালয়সহ দেশের বিভিন্ন দপ্তরে স্থাপিত ও পরিচালিত ক্যান্টিন পরিচালনার বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে ভিন্ন আংগিকে পরিচালনা হয়ে আসছে। যার পরিচালনার সাথে এত ব্যাপক কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে মতিন-সরোয়ারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত ক্যান্টিনটি পরিচালনায় বিসিক চেয়ারম্যান এবং কতিপয় কর্মকর্তার খাবারের আয়োজন এর জন্য বিপুল পরিমাণ সরকারী অর্থ ব্যয় করা হয়েছে।
যেটি ভিআইপি ক্যান্টিন নামে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে সুখ্যাতি অর্জন করেছে। ক্যান্টিন স্থাপন, পরিচালনায় সরকারী নিয়ম নীতি একেবারেই অনুসরণ করা হয়নি। ক্যন্টিনটি স্থাপন করা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে এবং অনিরাপদ স্থানে। ক্যান্টিনটি বিসিকের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সুবিধা লাভের উদ্দ্যেশ্যে করা হয়নি। খাবারের চড়া মূল্য বলে দেয় এটি কার স্বার্থে বা উদ্দ্যেশ্যে পরিচালনা করা হচ্ছে।
সংবাদ প্রকাশের পূর্ব দিন পর্যন্ত মিল রেট ১২০-১৫০ এর মধ্যে, যা সাধারণ কর্মচারীদের নাগালের বাইরে। খাবারের মূল্য অবশ্যই সাধারণ কর্মচারীদের নাগালের মধ্যে অর্থাৎ ৫০-৬০ টাকার মধ্যে হওয়া বাঞ্চনীয়।
ঢাকা শহরের বেশ কয়েকটি ক্যান্টিন এ খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে যে, এ সকল ক্যান্টিনে কর্মচারীরা ৫০-৬০ টাকার মধ্যে খাবার খাওয়ার চমৎকার ব্যবস্থা বিদ্যমান আছে।
যা মতিন-সরোয়ার পরিচালিত বিসিক ক্যান্টিনে নেই।
বিসিকের ক্যান্টিন পরিচালনার ক্ষেত্রে তারা লংঘন করেছে বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা ২০১৫ এর ধারা নং-৮৭, ৮৮, ৮৯ ও ৯০ এর বিধান। শ্রম আইন এবং শ্রম বিধিমালা লংঘনের অভিযোগে যে কোন সময় বিসিক চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক, বিসিকের পরিচালক আব্দুল মতিন এবং জাতীয় শ্লোগান জয় বাংলা, জাতির পিতার স্মরণে জয় বঙ্গবন্ধু লিখা খচিত ব্যানার ভাংচুর করেও শুদ্ধাচার পুরষ্কারপ্রাপ্ত, সম্মাণী ভাতা প্রদানের অন্যতম ডিলার বিসিকের ছায়া চেয়ারম্যান উপাধিপ্রাপ্ত মোঃ সরোয়ার হোসেন এর বিরুদ্ধে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু খচিত ব্যানার ভাংচুর এর দায়ে যে কেউ মামলা করতে পারেন।
দায়িত্ব পালনে অবহেলা প্রদর্শন করে জনবল নিয়োগের মতো একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ কাজে যুক্ত কর্মকর্তাদেরকে জবাবদিহীতার আওতায় না এনে বিভিন্ন উপায়ে তাদের পুরষ্কৃত করা এবং তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সুবিধা গ্রহনের বিষয়টি ওপেন সিক্রেট একটি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিভাগীয় নিয়োগ ও পদোন্নতি কমিটি-২ এর সদস্য না হওয়া স্বত্তেও তিনি যথারীতি সম্মানী ভাতা গ্রহণ করেছেন সম্মানীভাতার ডিলার মোঃ নাজমূল হোসেন এবং মোঃ আরিফ হোসেনের নিকট হতে।
অপরাধ সংঘটিত করে বা বে-আইনী কাজ করে অপরাধি ব্যক্তি বা বে-আইনী কাজের সাথে যুক্ত ব্যক্তি কিছু না কিছু নমুনা রেখে যান। যা করেছেন বিসিক চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক।
আমাদের হাতে থাকা তথ্য মতে ২৪ মার্চ ২০২৪ তারিখে অনুষ্ঠিত বিসিকের সিপিএফ (কন্ট্রিবিউটরী প্রভিডেন্ট ফান্ড) ট্রাষ্টি বোর্ডের ১০০-তম সভার সদস্যদের সম্মানী বিল হতে দেখা যায় তিনি ৪,০০০/- (চার হাজার) টাকার সম্মানী ভাতার বিল গ্রহণ করেছেন। সুকৌশলে উক্ত সম্মানী ভাতা জায়েজ করার জন্য কমিটিতে অবস্থান দেখানো হয়েছে উপদেষ্টা হিসাবে।
যা বিসিকের ইতিহাসে বিসিকের জন্মলগ্ন থেকে এ ধরনের নজির দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবেনা। প্রকারান্তরে এটি কৌশলে সরকারী অর্থ আত্মসাতের সামিল বলে মনে করেন বিসিকের হিসাব ও অর্থ বিভাগ সংশ্লিষ্ট নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তাগন। তাছাড়া এটি নীতি নৈতিকতার বাইরে গিয়ে বিসিক চেয়ারম্যানের অর্থলিপ্সার অন্যতম নমুনা বলেই ধারণা করা যায়।
সরকারী কার্য সম্পাদনে বিসিক চেয়ারম্যান এর অবহেলা, উদাসীনতা প্রদর্শন এবং কর্মচারী পর্যায়ে বৈষম্যমূলক আচরণ, কর্মচারীর সাথে মানবতাবিরোধী আচরণকারী, কর্মচারীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণকারী, সরকারী অফিসে বিদ্বেষ ছড়ানো, কর্মচারীদের মাঝে ক্রমাগতভাবে অসন্তোষ সৃষ্টিকারী, কর্মচারীদের স্বার্থ বিনষ্টকারী, সরকারের বিদ্যমান নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে একদিকে আউটসোর্সিং, একই সময়ে দৈনিক ভিত্তিক কর্মচারী নিয়োগদানকারী, কর্মকর্তাদের পক্ষ অবলম্বন করে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণকারী এবং ক্ষমতার অপ-ব্যবহার করে সুকৌশলে সম্মানী ভাতার নামে সরকারী অর্থ আত্মসাতকারী বিসিক চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার ভৌমিক এর বিষয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবী তুলেছেন বিসিকের সকল স্তরের কর্মচারীবৃন্দ।