১৫ আগস্ট, ‘জঙ্গির’ আত্মঘাতীর’ নাটক ও শেখ হাসিনার বক্তব্য

Uncategorized আইন ও আদালত জাতীয় ঢাকা বিশেষ প্রতিবেদন রাজধানী রাজনীতি

বিশেষ প্রতিবেদন  : ২০১৭ সালের ১৪ আগস্ট, শেখ মুজিবের শাহাদাৎবার্ষিকীর আগের দিন। ঢাকার পান্থপথের ‘হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে’ (৩২ ধানমন্ডির কাছাকাছি) কথিত ‘জঙ্গি’ সাইফুল ইসলাম ‘আত্মঘাতী বোমায় নিহত’ হন। খুলনার সাইফুলকে ওই দিনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ঢাকার সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ধরে আনে। তাদের দাবি ছিলো, সাইফুল ‘হিজরতের উদ্দেশ্যে’ ঢাকায় আসেন।


বিজ্ঞাপন

তখনের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বিষয়টিকে উল্লেখ করেন ‘জঙ্গি অপারেশনের নাটক’ হিসেবে। সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত আইনশৃঙ্খলাওয়ালাদের ভাষ্য পড়ে, খোঁজখবর নিয়ে ফেসবুকে তখন লিখেছিলাম, ‘বিষয়টি দুর্বল স্ক্রিপ্টে সংঘটিত বলে মনে হচ্ছে।’ কয়েকটি প্রশ্ন সামনে এনেছিলাম। এমন ‘নিখুঁত বিষয়ে’ কেন প্রশ্ন তুললাম, এ ‘অপরাধে’ ফেসবুকে আমাকে ‘জঙ্গি’ বলে গালাগালি করে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে একটা শ্রেণি।


বিজ্ঞাপন

ওই ঘটনাকে শেখ হাসিনার ‘জঙ্গি অপারেশনের নাটক’ হিসেবে বর্ননা করার তথ্য আমরা জানতে পারি, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকের লেখা বই থেকে। ইউপিএল থেকে বের হওয়া ওই বইয়ের নাম ‘পুলিশ জীবনের স্মৃতি: স্বৈরাচার পতন থেকে জঙ্গি দমন’। বইটিতে ‘১৫ আগস্ট ২০১৭: জঙ্গি হামলার আশঙ্কা’ শিরোনামের অংশে তিনি লেখেন, ‘…১৫ আগস্ট ২০১৭ তারিখের অভিযানের পরদিন গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) সাথে দেখা করি। আমাকে দেখে তিনি বললেন, এতো কাছাকাছি জঙ্গি এনে অপারেশনের নাটক না করলেই পারতে।’ শহীদুল হক রাষ্ট্রীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বোচ্চ পদাধীকারী ছিলেন। তাঁর বইয়ের বক্তব্য উপেক্ষার কোনো সুযোগ নেই। বইটি হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনামলেই প্রকাশিত হয়।

পেশা হিসেবে সাংবাদিকতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, প্রশ্ন করা। জিজ্ঞেস করার স্বাধীনতাও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা। প্রশ্ন করা মানে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠীর বা জঙ্গিবাদ দমনের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বিরোধিতা নয়। সব প্রশ্নের মানে পরিকল্পিত বিভ্রান্তি ছড়ানো নয়।

সত্যকে গণমানুষের কাছে উপস্থাপনের জন্য সততা, নৈতিকতার ওপর নির্ভর করে জানতে চাইয়াই হচ্ছে সাংবাদিকতা। ‘দ্য পলিটিকস অব টেররিজম এন্ড কাউন্টার টেররিজম ইন বাংলাদেশ’ বইয়ে দেশি–বিদেশি একাধিক গবেষক দাবি করেন, ‘বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারের আমলে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে জঙ্গিবাদ ইস্যুকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা হয়েছে। এর ফলে এ ধরনের অনেক ঘটনা নিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি, অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে।’ বিদেশি গবেষকদের কেউ এ দেশের ধর্মীয় জঙ্গিবাদ দমনের বিরোধিতা করে ওই বই লেখেননি।

সবকিছু তাৎক্ষণিকতা, নিজের কাছে থাকা ‘তথ্য’ দিয়ে বিচার করে অন্যকে ‘মূর্খ’ অ্যাখ্যা দেয়ার চর্চাটা সাংঘাতিক অশোভন। অনেক প্রশ্নের উত্তরে সত্যতার প্রমাণ পেতে সময়ের দরকার। সেই সময়টুকু পর্যন্ত অপেক্ষা না করে অন্যকে ‘গাঁধা, মুর্খ’ বলে নিজের চিন্তার সীমাবদ্ধতা লোকসমাজে উন্মুক্ত করা হাস্যকর।

জঙ্গিবিরোধী অভিযান নিয়ে সাবেক পুলিশপ্রধান শহীদুল হক নিজের বইয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথোপকথনের যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা আমাদের পুরনো প্রশ্নগুলোর একটা উত্তর। আমাদের প্রশ্ন হোক সত্যকে বের করার।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকারের কাছে আবেদন, আওয়ামী লীগের আমলের জঙ্গি দমনের সন্দেহজনক ঘটনাগুলোর তদন্ত হোক। এতে নির্দোষ সাইফুলদের আত্মা অপবাদ থেকে মুক্তি পাবে। আর জঙ্গিবাদের মামলায় উদ্দেশ্যমূলক কাউকে পুলিশ জড়িয়ে রাখলে, তিনি, বা তারা এর থেকে রেহাই পাবেন।

 লেখক : সিনিয়র  সাংবাদিক হাসান শান্তনু। 


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *