বিশেষ প্রতিবেদক : শুল্ক ফাঁকি দিয়ে হাওরের নৌপথে সীমান্তের ওপার থেকে তিনটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলার বোঝাই ভারতীয় চোরাচালানের কয়লা নিয়ে আসার পথে ট্রলার সহ কয়লার চালান জব্দ করেছে বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ (বিজিবি)’র টহল দল। তিন তিনটি ট্রলার বোঝাই ভারতীয় চোরাচালানের কয়লা জব্দ করলে বরাবরের মতই এসব ট্রলারের মাঝি,সুকানী কিংবা চোরাকারবারি চক্রের সন্ধান পায়নি বিজিবি’র টহল দল।
শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে ২৮-বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ (বিজিবি)’র সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বালিয়াঘাট বিওপির বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডারের নেতৃত্বে তিনটি ইঞ্জিন চালিত ট্রলার বোঝাই ভারতীয় চোরাচালানের কয়লার অবৈধ চালান জব্দ করা হয়।শনিবার বিকেলে বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ (বিজিবি)’র দায়িত্বশীল সুত্র ওই তথ্য নিশ্চিত করেন।
এরপুর্বে শনিবার ভোররাতে উপজেলার বালিয়াঘাট সীমান্তের লালঘাট -লাকমা সীমান্ত গ্রামের একাধিক লোকজন জানান, শুক্রবার দিবাগত রাতে ২৮-বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ (বিজিবি)’র সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বালিয়াঘাট বিওপির বিজিবি ক্যাম্পের রাতে সীমান্তে থাকা টহল দলের কিছু অসৎ সদস্যকে ম্যানেজ করে বিজিবি’র কথিত সোর্স উপজেলার লাকমা গ্রামের মৃত শাহজাহান মিয়ার ছেলে ও (সৌদি প্রবাস ফেরত নারী শ্রমিকের স্বামী) হোসেন মিয়া একাধিক চোরাকারবারি চক্রের সদস্যদের নিকট থেকে প্রতিবস্তা কয়লার বিপরীতে ১৫০ টাকা হারে চাঁদা সেটেল ) আদায় করে ভারতীয় চোরাচালানের কয়লার লাইন (পাস) দেয়।
এরপর শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে নিয়ে আসার পর সীমান্ত গ্রাম লালঘাট-লাকমা’র বিভিন্ন বাড়িতে মজুদকৃত শত শত কয়লা বস্তাগুলো চুনখলার হাওরে দ্বিতীয় দফায় নিয়ে এসে একাধিক ইঞ্জিন চালিত ট্রলারে বোঝাই করে নৌপথে নিরাপদে সড়িয়ে নিয়ে পার্শ্ববর্তী টেকেরঘাট বিওপির বড়ছড়া শুল্ক ষ্টেশনের বিভিন্ন কয়লার ডিপোতে গভীর রাতে মজুদ করে রেখে অন্যত্র বিক্রির উদ্দেশ্যে।
সীমান্ত গ্রামের স্থানীয় লোকজনের দেয়া তথ্যের ভিক্তিত্বে ২৮-বিজিবি ব্যাটালিয়নের তাহিরপুরের বালিয়াঘাট বিওপির ক্যাম্প কমান্ডার বিজিবি টহল দল নিয়ে সীমান্তের মেইন পিলার ১১৯৭ এর টু-এস সাব পিলার হতে প্রায় ৭০০ গজ বাংলাদেশ অভ্যন্তরে চুনখলার হাওর থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে নিয়ে আসা তিনটি ট্রলার বোঝাই প্রায় ৬ হাজার ৩০০ কেজি অবৈধ কয়লার চালান জব্দ করেন। শনিবার সকালে জব্দমুলে এসব ট্রলার ও চোরাচালানের কয়লার সরকারি মূল্য ২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা নির্ধারণ করেন ক্যাম্প কমান্ডার।
এদিকে শনিবার বেলা বাড়ার সাথে সাথে উপজেলার লাকমা সীমান্ত গ্রামের বাসিন্দা ও বালিয়াঘাট বিওপির বিজিবির কথিত সোর্স হোসেন বিওপির গেইটের বাহিরে অবস্থান নিয়ে কয়লা চোরাকারবারি চক্রের সদস্যদের সহায়তার জন্য জব্দকৃত ট্রলার তিনটি ছাড়িয়ে আনতে যান।
শনিবার দুপুরে দিকে জানতে চাইলে উপজেলার লাকমা সীমান্ত গ্রামের বাসিন্দা হোসেন নিজেকে স্বঘোষিত বালিয়াঘাট বিওপির বিজিবির কথিত সোর্স দাবি করে বলেন আমি সব সময় দিনরাত বিজিবির টহল দলকে আমার মোটরসাইকেলে যোগে আনা নেয়া ও সোর্সের কাজ করি, গ্রামের লোকজন (কয়লা চোরাকারবারি চক্রের সদস্যদের চাঁপে) বিওপির গেইটের বাহিরে গেছিলাম (গিয়েছিলাম) ট্রলারগুলো ছাড়িয়ে আনতে।
আটককৃত কয়লার চালান কোন কোন চোরাকারবারি চক্রের, জানতে চাইলে সে বলে শুক্রবার রাতে বালিয়াঘাট বিজিবি টহল দল ভারতীয় কয়লা সহ তিনটি ট্রলার করেছে সেসব কয়লার চালানের মালিক উপজেলার লাকমা নয়াপাড়ার মনা মিয়া শিকদারের এক ছেলের ।
উপজেলার লাকমা নয়াপাড়ার মনা মিয়া শিকদারের নিকট তার কোন ছেলের চোরাচালানের কয়লা ও তিনটি ট্রলার সহ বিজিবি টহল দল শুক্রবার রাতে আটক করেছিলো জানতে চাইলে তিনি বলেন ,আমার চতুর্থ ছেলে মহর উদ্দিন শিকদার টুকটাক ভারতীয় কয়লা কেনা বেচা করে, অন্য ছেলেরা এসব করে না, শুক্রবার রাতে বিজিবি টহল দলের নিকট তিনটি ট্রলার বোঝাই আটককৃত কয়লাগুলো তারই ছেলে (মহর উদ্দিনের ছিল) জানিয়ে তিনি এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য প্রতিবেদককে অনুরোধ করেন।
শনিবার বিকেলে ২৮ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ (বিজিবি)’র সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বালিয়াঘাট বিওপির ক্যাম্প কমান্ডার সুবেদার আনোয়ার হোসেন বলেন,রাতে ট্রলার বোঝাই চোরাচালানের কয়লা আটকের সময় চোরাকারবারি চক্রের সদস্যদের কোন সন্ধান পাইনি।
শুক্রবার দিবাগত রাতে সীমান্তের লালঘাট লাকমায় নিয়মিত বিজিবির টহল দল থাকার পরও কিভাবে চোরাকারবারি চক্রের সদস্যরা একাধিক ট্রলার বোঝাই করে সীমান্তের ওপার ভারত থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আনা চোরাচালানের কয়লার চালান নৌৗপথে সড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছিল?
এসব অবৈধ কয়লার চালান কোন গন্তব্যে পৌছার সম্ভাবন্না ছিল, জানতে চাইলে তিনি বলেন, কই আর যাবে টেকেরঘাটের বড়ছড়া শুল্ক ষ্টেশনে কয়লার চালানগুলো চোরাকারবারিরা নিয়ে যেত বিভিন্ন ডিপোতে মজুদ করার জন্য।
সীমান্তে টহলে থাকা বিজিবির টহল দলকে তিনি রাতে কয়লার চালান আটকের জন্য সীমান্ত থেকে হাওরে ডেকে নিয়ে আসেন বলেও জানিয়ে আরো বলেন , হোসেন আমাদের (বিজিবি)’র কোন সোর্স না, হোসেন শনিবার বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিওপির গেইটের বাহিরে অবস্থান করে জব্দকৃত তিনটি ট্রলার ছাড়িয়ে নিতে আসে এমন এক প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে বিজিবি’র ওই ক্যাম্প কমান্ডার বলেন চোরাচালানের কয়লা, ট্রলার আটক করলে কত জনইতো তদবীর করতে বিজিবির নিকট আসে।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি উপজেলার বালিয়াঘাট বিওপির একটি টহল দল সীমান্তের ওই এলাকায় ভারতীয় চোরাচালানের কয়লার বস্তা জব্দ করতে গিয়ে কয়লা চোরাকারবারিচক্রের সদস্যদের দ্বারা হামলা শিকার হয়ে আহত হন বিজিবি টহল দলের সদস্যরা।
কয়লা বস্তা গুলো যাতে বিজিবি টহল দল জব্দ করতে না পারে সেজন্য হালকা ভাবে পাথর খন্ড দিয়ে ঢিল ছুড়ে ভয় দেখানোর জন্য চোরকারবারি চক্রের সদস্যদের ইন্ধন যোগায় বলেও অভিযোগ রয়েছে কথিত সোর্স হোসেনের বিরুদ্ধে।।