কুমিল্লার মেঘনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাইফুলের বিরুদ্ধে কমিশন বানিজ্যের অভিযোগ

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ

মেঘনা (কুমিল্লা) প্রতিনিধি :  কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে কমিশন বানিজ্যসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে জানা গেছে সাইফুল ইসলাম এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্যাকমো পদে চাকরি জীবন প্রায় একযুগ পারি জমিয়ে কাউকে তোয়াক্কা না করে কমিশন বানিজ্য করে যাচ্ছে রীতিমতো। কমিশনের লোভে অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করাচ্ছেন তিনি। এমনকি নিজের পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে রোগীদেরকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে আনতে বাধ্য করা হয় বলে জানা যায়। বেশ কিছুদিন পূর্বে তানহা ও সাবিহা নামের দুইজন রোগীকে মানিকারচর বাজারে অবস্থিত একটি প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিয়ে আসতে বলেন সাইফুল ইসলাম। যা এই পরীক্ষাগুলো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করা যেতো।


বিজ্ঞাপন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ভুক্তভোগী বলেন, আমি কয়েকদিন আগে আমার বাচ্চাকে নিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাইফুল ডাক্তারকে দেখাই। তিনি আমার বাচ্চাকে অনেকগুলো পরীক্ষা দিয়ে ইসলামিয়া জেনারেল হাসপাতাল থেকে করে আনতে বলেন। তখন আমি বললাম স্যার এই জায়গায় হয় না? তিনি উত্তরে বলেন ‘না’! এর আগেও আমার বাচ্চাকে ওনার কাছে দেখিয়েছি, তখনও বাহির থেকে করে আনতে বলেছিলো। আমরা সাধারণ পাবলিক হয়ে খুব বিপদে আছি স্যার!


বিজ্ঞাপন

এদিকে প্রায় কয়েকমাস আগে মো. সাখাওয়াত হোসেন নামের একজন ব্যক্তি তার বোনের বুকের ব্যথা নিয়ে রাত আনুমানিক ১০ বা ১১টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগে নিয়ে যায়। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম তার বোনকে দেখে চারটি পরীক্ষা দিয়ে মানিকারচর থেকে করে নিয়ে আসতে বলে। তখন রোগীর ভাই পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট এনে জরুরী বিভাগে দেখায়। ঠিক ওই সময় তখনই আরেকটি রোগী একজন মেডাম দেখতেছে, আর মেডাম দেখে বলতেছে এই টেস্টগুলো আমাদের এখানে করাবেন। সাখাওয়াত হোসেন বলেন- আমি মিলিয়ে দেখলাম একই টেস্ট। যদি অন্য ডাক্তার টেস্টগুলো এখানেই করতে বলেন তাহলে সাইফুল ডাক্তার আমাকে বাহির থেকে করে নিয়ে আসতে বললো কেন? এই হয়রানির শেষ কোথায়?

এলাকার ভুক্তভোগী আরও কয়েকজন ব্যক্তি জানান, আমাদের মেঘনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাইফুল ইসলাম নামে একজন ডাক্তার জরুরী বিভাগে ডিউটি চলাকালীন সময়ে বেশিরভাগ রোগীকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করানোর জন্য বাহিরে পাঠিয়ে দেয়। সেখান থেকে হয়তো সে কমিশন পাচ্ছে, তা না হলে বাহিরে পাঠাবে কেন? বাহিরে পাঠালে তো লাভবান হবে আশপাশের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকের মালিকেরা। আর আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো আমাদের মতো গরীবরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক একজন চিকিৎসক আমাদের এই প্রতিনিধিকে জানান, সাইফুল ইসলাম এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন যাবত কর্মরত আছেন। তিনি দায়িত্বরত অবস্থায় মেডিকেল অফিসারদের জরুরি বিভাগ থেকে বের করে দিয়ে বলেন- ‘স্যার বাহির থেকে ঘুরে আসেন। তারাও এই সুযোগে বাহিরে গিয়ে ঘুরাঘুরি করেন এবং ভাবেন সাইফুল ইসলাম তাদেরকে কাজে সহযোগিতা করছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শর্ট স্লিপে রোগীদের অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়ে প্রাইভেটে পাঠিয়ে দেন তিনি। যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করা যায় সেগুলোও বাহির থেকে করিয়ে আনতে বলেন সাইফুল ইসলাম।

কয়েকজন সচেতন ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপচারিতায় বসলে তারা জানান, স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রতিবছর চিকিৎসার পেছনে রোগীদের যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়, তাতে অন্য কোনো উপজেলায় এত ব্যয় হতে দেখা যায় না। কারণ তার বড় একটা অংশই চলে যায় রোগ নির্ণয় করতে। এসব রোগ নির্ণয়ে বেশিরভাগই ব্যয় হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে, যেখানে সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি! আর এই অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রধান কারণ হিসেবে তারা দায়ী করছেন বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে সাইফুলের মতো অসাধু সরকারি উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের অনৈতিক সুবিধা গ্রহণকে। সরকারিভাবে এই সমস্ত চিকিৎসক সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করার পরেও ক্রমাগত চালিয়ে যাচ্ছে এসব অনৈতিক চর্চা।

এ অবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসকরা লাভবান হলেও চিকিৎসার উচ্চ ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতি বছর দারিদ্র্যসীমায় পৌঁছেছে এ উপজেলার বাসিন্দারা। তারা আরও জানান- এক শ্রেণির নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত অর্থলোভী চিকিৎসকদের মতো সাইফুল ইসলাম কোনো অংশে কম নয়। তিনি বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে গোপন চুক্তির ভিত্তিতে রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষার ওপর কমিশন গ্রহণ করছে বলে আমরা শুনতে পাচ্ছি। তার এই কমিশন গ্রহণের বিষয়টি এখন সমালোচনায় রূপধারণ করেছে। যা মেঘনাবাসির জন্য লজ্জাজনক!

অভিযুক্ত সাইফুল ইসলামের সঙ্গে এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি ইমোশনাল হয়ে বলেন, আমি কখনোই নাম উল্লেখ করে কোনো প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রোগী পাঠাই না। আমার নামে যা শুনছেন এগুলো মিথ্যা। মাঝেমধ্যে দুই-একটা পাঠিয়ে থাকলেও আর কখনওই নাম বলে পাঠাব না। আমি আজ থেকে নতুন জীবন শুরু করলাম। তাছাড়া আপনি আমার বড় ভাই। আমি কোনো ভুল করে থাকলে আমার বিচার করবেন।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়মা রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, সে শর্ট স্লিপে কিছুই লিখতে পারবে না। তবে প্রেসক্রিপশন করতে পারবে। আর যদি ডাক্তার তাকে অনুমতি দেয় তাহলে সে শর্ট স্লিপেও লিখতে পারবেন। তিনি আরও বলেন- আমি আপনার কাছ থেকে বিষয়টি শুনলাম, আমাকে আপনি প্রমাণ দিন। আমি তার বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো এবং যদি আপনার দেয়া অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধির কাছ থেকে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের গুঞ্জনও শুনা যাচ্ছে।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *