এমদাদুর রহমান চৌধুরী জিয়া (সিলেট) : শুরু হয়েছে সন্ধ্যায় মহা ষষ্ঠী। গতকাল পঞ্চমীর পর আজ মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে সারাদেশের মতো দূর্গা পূজা উপলক্ষে হিন্দু ধর্মালম্বীদের উৎসবশুরু হচ্ছে সিলেটে। লোকজনের উপস্থিতি কিছুটা কম থাকলেও অনুভব করা হচ্ছে এটি তাদের বড় পূজা হওয়ার কারণে প্রত্যেক বাসা বাড়িতেই রয়েছেন বেড়াতে আসা আত্মীয়-স্বজন আর স্বজনদের বাসায় রেখে বাসার সবাই একসাথে আসতে না পারায়। মন্ডপ গুলোতে উপস্থিত সরকার কম উপলব্ধি করা যাচ্ছে কেউ কেউ বলছেন আজ রাত থেকেই বেড়া যাবে উপচে পড়া ভীড়।পূজা উপলক্ষে এখনো সিলেটের কোন জায়গায়
কোন ঘটনা ঘটেনি।
দুর্গাপূজা বড় একটি উৎসব তাই সেটি উৎসাহ উদ্দীপনার সাথেই পালন করে থাকেন হিন্দু ধর্মালম্বীরা। বাংলাদেশ সম্প্রীতির বন্ধন ধরে রাখতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সেই উৎসব সফলভাবে সম্পন্ন করতে সকল ধর্মের করে থাকেন সহযোগিতা।
তবে বর্তমান সরকারের সময় এই প্রথম হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বড়টি অনুষ্ঠান হতে যাচ্ছে আর সে কারণেই সকল ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনায় এ রাতে প্রশাসন। যেহেতু দেশে নির্বাচিত কোন সরকার নেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিন্দু তো কলম্বীদের নিরাপত্তা যেতে ব্যর্থ না হয় সে লোককেই সচেষ্ট রয়েছে প্রশাসন। তবে প্রশাসনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামাতে ইসলামী বাংলাদেশ এর নেতৃবৃন্দ কে পূজা মন্ডপ পরিদর্শন করে হিন্দু ধর্মী নেতাদের ও পূজা পরিষদ এবং পূজা মন্ডপ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা এমন সব লোকদের সহযোগিতার আশ্বাস দিতে দেখা যায়।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ : হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে পালনে সিলেট মহানগর পুলিশ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এ বছর মোট ১৫২ টি পূজাম-পে দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে এসএমপির মোতায়েনকৃত অফিসার ও ফোর্সের ব্রিফিং বুধবার সকাল ১১ টায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ড্রিল শেডে অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ রেজাউল করিম প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে অফিসার ফোর্সদের ব্রিফিং প্রদান করেন।
ব্রিফিং প্যারেডে পুলিশ কমিশনার দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপনের লক্ষে দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের করণীয় ও বর্জনীয়-সংক্রান্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। তিনি বলেন, ডিউটিতে নিয়োজিত ফোর্সদের সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও সতর্কতার সাথে ডিউটি পালন করতে হবে। বিশেষ করে রাতের বেলায় সতর্ক অবস্থায় ডিউটি এবং টহল বাড়াতে হবে। সবার সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন কাজ করা যাবে না।
সিলেট বিভাগীয় কমিশনার ও সিসিক এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে সিলেটে দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে প্রশাসন। পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাব, আনসার-ভিডিপি ও পুলিশ প্রশাসন। পূজাকালীন নিরাপত্তা ও বিভিন্ন বিষয়ে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ রাখছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাবৃন্দ।
পূজা মণ্ডপে অনুদানের চেক বিতরণকালে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার আবু আহমদ ছিদ্দীকী, এনডিসি বলেন, সিলেটে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ রয়েছে। এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে। এবারো সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে শান্তিপূর্ণভাবে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। পূজা উদযাপনে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।
পূজায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, বিভিন্ন সড়ক বিশেষ করে মণ্ডপ এলাকা আলোকিত করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, রাস্তাঘাট প্রয়োজনীয় সংস্কারসহ সংশ্লিষ্টদের নানা নির্দেশনা দেন আবু আহমদ ছিদ্দীকী। কোন ধরনের গুজবে কান না দিয়ে যেকোন প্রয়োজনে প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পূজা মণ্ডপ সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
পূজা উদযাপন পরিষদ সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক চন্দন দাশ বলেন, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, র্যাব, আনসার-ভিডিপি ও পুলিশ প্রশাসন পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজা-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুলিশ বাহিনীর সদস্য, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, র্যাব এবং অন্যান্য বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন। তিনি আরো বলেন, এ বছর নিরাপত্তার কোন ঘাটতি নেই। নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কার কোন তথ্যও নেই। সিলেটবাসীর প্রত্যাশা প্রতি বছরের মতো এবারো দুর্গাপূজা সুন্দর ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হবে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী এ বছর সিলেটে জেলায় ৪৪১টি এবং মহানগরে ১৫৪টি মণ্ডপ তৈরি করা হচ্ছে।
এদিকেসিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ;
সিলেটে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে প্রস্ততিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২৫ সেপ্টেম্বর বুধবার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পূজাকালীন সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, গুজব প্রতিরোধ সেল, ব্যাজ পরিহিত সেচ্ছাসেবক দল ও দশমীর দিন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল নিয়োজিত রাখাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ এতে সভাপতিত্ব করেন। এতে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত দিকনির্দেশনাসমূহ পাঠ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন। সভায় সিলেট জেলার বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক বলেন, পুণ্যভূমি সিলেট সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের শহর। সকল ধর্মাবলম্বী মানুষের।
দুর্গাপূজা ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত এ সভায় সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি, আনসার, ফায়ার সার্ভিস, সিসিক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, কেন্দ্রীয় পূজা কমিটির প্রতিনিধিবৃন্দ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভায় বক্তারা পূজা উপলক্ষ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে তাঁদের অবস্থান ও অভিমত ব্যক্ত করেন।
শারদীয় দুর্গাপূজা ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে কোতোয়ালি, শাহপরান, বিমানবন্দর ও শাহজালাল থানাসমূহে পুলিশের পাশাপাশি সেনবাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন বলে সভায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।