নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে অনিয়ম আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে উপ কর কমিশনারের কার্যালয় (আয়কর অফিস)। দীর্ঘ দিন ধরে এই অফিসে ঘুষ বাণিজ্য ওপেন ক্রিসেন্ট বলে গুরুত্বর অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েকজন গ্রাহকের ফাইল আটকিয়ে ঘুষ দাবী করায় ভুক্তভোগীরা এই অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ডিসি-এসপি, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং প্রধান উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। গত কয়েক দিন ধরে অনুসন্ধান করে এ অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী অসহায় কয়েকজন গ্রাহক বুধবার (২০ নভেম্বর) এ অভিযোগ তুলে ধরেন। মির্জাপুর উপর কর কমিশনার অফিস (আয়কর অফিস) কর অঞ্চল সার্কেল-২০ (গাজীপুর) দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধান উপদেষ্টা, টাঙ্গাইলের ডিসি-এসপি এবং দুর্নীতি দুমন কমিশনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ও হয়রানীর শিকার মির্জাপুর শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের সাবেক ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক মো. শহিদুল্লাহ এবং টিমেক্র জুট মিলস লিমিটেড এর ম্যানেজার মো. মহসীন মিয়াসহ কয়েকজন ভুক্তভোগী।
ভুক্তভোগী ও হয়রানির শিকার অধ্যাপক মো. শহিদুল্লাহ অভিযোগ করেন, ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর তার বাড়ির আয়কর রিটার্ন বাবদ ৯৮ হাজার ৮৯২ টাকা এবং তার আয়ের উপর ১৬ হাজার ৮৮২ টাকা আয়কর রিটার্ন জমা দেন। তিনি নিয়মিত ভাবে ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছর থেকে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছর পর্যন্ত এভাবে আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন।
২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে এলে অফিস থেকে থেকে বলা হয় তার ফাইলে কোন কাগজপত্র জমা নেই। অফিসের উচ্চমান সরকারি আহম্মেদ সুবায়ের তুষার তার নিকট পাঁচ হাজার টাকা ঘুষ দাবী করে বলেন এই টাকা দিলে ফাইল ঠিক হয়ে যাবে। তিনি ঘুষের টাকা দিতে অস্বীকার করলে এই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাকে ঝামেলায় ফেলবে বলে হুমকি দেয় এবং প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ আটকে দেন। শুধু তাই নয় তার বিরুদ্ধে অডিট আপত্তিসহ নোটিশ পাঠিয়েছেন বলে দুঃখ প্রকাশ করেন এই অধ্যাপক।
ঘুষ না দেওয়ায় অধ্যাপক মো. শহিদুল্লাহর মত হয়রানীর শিকার হয়েছেন টিমেক্র জুট মিলস এর মারুফা মাহবুবা, ম্যানেজার মো. মহসীন মিয়া। তার নিকট ঘুষ দাবী করা হয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। তাদের মত হয়রানীর শিকার প্রধান শিক্ষক নিলুফা ইয়াসমিন, মির্জাপুর শহীদ ভাবনী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের প্রাণী বিদ্যা বিভাগের সাবেক সহকারী অধ্যাপক মো. শাহাদত হোসেন এবং ডা. সুমাইয়া জাবীন মিষ্টিসহ আরও অনেকেই। ডা. সুমাইয়া জাবীন মিষ্টি অভিযোগ করেন, তার স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি ডা. মিষ্টি ভিআইপি হাসপাতালের পরিচালক। বিধবা হওয়ার পর একজন সন্তান নিয়ে অনেক কষ্ট করে হাসপাতালটি পরিচালনা করছেন এবং সংসার সামলাচ্ছেন।
আয়কর অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাহিদামত ঘুষ না দেওয়ায় তার ফাইল আটকিয়ে তার নামে দুদকে মিথ্যা ও হয়রান মূলক মামলা দিয়ে মানসিক নির্যাতন ও হয়রানী করা হচ্ছে। তিনি এর প্রতিকার চান। এক ঠিকাদারের নিকট এক লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে তার আড়াই লাখ টাকা মওকুফ করে দিয়েছেন এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাগণ। এদিকে ভুক্তভোগিদের লিখিত অভিযোগ এবং অনুসন্ধানে জানা গেছে, দীর্ঘ দিন ধরেই মির্জাপুর উপকর কমিশনার কার্যালয় কর অঞ্চল সার্কেল-২০ (গাজীপুর) অফিসটি অনিয়ম আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে।
দুর্নীতির মূলহোতা হচ্ছেন অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার মো. নুরুল ইসলাম, উচ্চমান সহকারী আহমেদ সুবায়ের তুষার, স্ট্যানো পলাশ সরকার (১), আতিকুর রহমান ও পলাশ (২) সহ ৮-১০ জনের সিন্ডিকেট চক্র। এই চক্রটি বহিরাগত আরও ৬-৭ জন দালাল তৈরী করে তাদের মাধ্যমেও গ্রাহকদের জিম্মি করে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কেউ হয়রানীর প্রতিবাদ করলেই তাদের নামে দুদকে মামলাসহ বিভিন্ন ভাবে ভয়ভিতি ও হুমকি দেওয়া হয় বলে ভুক্তভোগিরা অভিযোগ।
এই কর অফিসে বিভিন্ন সরকারী অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, বাসাবাড়ির মালিক, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন শিল্পকারখানার কর্মকর্তা-কর্মচারী, চিকিত্সকসহ বিভিন্ন ম্রেণী পেশার মানুষের আয়কর রির্টান জমা দিতে হয়। একটি ফাইলের বিপরীতে বিপুল অংকের টাকা তাদের ঘুষ দিতে হয় বলে ভুক্তভোগি শিক্ষক ও কর্মকর্তাগন অভিযোগ করেন। এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জোর দাবী জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপকর কমিশনার কার্যালয় কর অঞ্চল সার্কেল-২০ (গাজীপুর) অফিসের অতিরিক্ত সহকারী কর কমিশনার মো. নুরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণমাধ্যম কে বলেন, গ্রাহকদের ঝামেলামুক্ত ভাবে কাজ করে দেওয়া হয়। যারা অভিযোগ করেছেন তাদের বাসাবাড়ি এবং কাগজপত্রে ঝামেলা রয়েছে।
সঠিক ভাবে কাজ করতে গেলেই গ্রাহকরা বিভিন্ন অভিযোগ দায়ের করেন আমাদের বিরুদ্ধে। যারা অভিযোগ করেছেন এগুলো সম্পুর্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলেও তিনি দাবী করেন।