মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নহাটা রানী পতিত পাবনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি নিয়োগকে কেন্দ্র করে চরম অনিয়ম ও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের এ ধরনের কালোথাবা আমাদের জাতীয় মূল্যবোধ, স্বাধীনতার চেতনা এবং গণতান্ত্রিক নীতিমালার উপর সরাসরি আঘাত বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।

একাধিক সুত্রে জানাগেছে, এ অভিযোগের কেন্দ্রে রয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাদিউজ্জামান। যিনি অতীতের স্বৈরাচারী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো: সাইফুজ্জামান শিখরের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়।

অভিযোগ অনুসারে, তিনি অতীতের কুকর্ম ও দুর্নীতিকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য বর্তমান রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি পদটি নিজের মনোনীত ব্যক্তির হাতে রেখে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোকে কুক্ষিগত করার অপচেষ্টা করছেন।
শহীদের রক্তের দাগ শুকানোর আগেই স্বৈরাচারী শাসনের পদধ্বনি: ১৯৭১ এ ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে যে দেশ স্বাধীন হয়েছে এবং ২০২৪ সালে জুলাই আগষ্ট বিপ্লবে প্রায় ২ হাজার ছাত্র জনতা শহীদ হয়ে দেশকে ফ্যাসিষ্ট শাসক মুক্ত করেছে সেখানে স্বৈরাচারী শাসনের পদধ্বনি শোনা গেলে তা হবে জাতির জন্য চরম অমর্যাদাকর।
নহাটা রাণী পতিত পাবনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি বিগত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রভাবের অধীনে ছিল। যেখানে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার চরম আকার ধারণ করেছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাদিউজ্জামান ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদ্যালয়ের সম্পদ লুটপাট করেছেন এবং রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে নিজেকে সুরক্ষিত রেখেছেন। রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্নীতির কারণে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ভেঙে পড়েছে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অশনি সংকেত।
আওয়ামী লীগ আমলে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনে প্রধান শিক্ষক স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করেছেন যা জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করে একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের নিকৃষ্ট নজির। শিক্ষার মানের অবনতি এবং রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারের দিকে ধাবিত হারাচ্ছে । এই বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় শুরু থেকেই চরম অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে।
এডহক কমিটির সভাপতি পদে একাধিক যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র যুবদল নেতা নয়নের স্ত্রী শাম্মী আকতারের নাম জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে। যা স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার পরিপন্থী এই শাম্মী আকতার একজন শিক্ষক। তিনি ঢাকায় বসবাস করেন। একমাত্র বিএনপি নেতারা ছাড়া এলাকার কোন মানুষই চান না যে, এই বিদ্যালয়ে কোন নারী এডহক কমিটির সভাপতি হোক।
আরো জানাগেছে, জেলা প্রশাসক ও শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই যুবদল নেতা নয়নের স্ত্রীকে সভাপতি হিসেবে আমন্ত্রণপত্র বিতরণ করা হয়েছে এবং বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে সভাপতির চেয়ারে বসিয়ে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়েছে। যা আইনের চরম লংঘন। নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্ব”ছতা ও গণতান্ত্রিক নীতিমালা অনুসরণ না করে ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে চরম ধৃষ্ঠতা প্রদর্শনে। রাজনৈতিক দলের প্রভাব খাঁটিয়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রভাবিত করা হয়েছে, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পরিপন্থী এবং ফ্যাসিষ্ট আচরণ। শিক্ষাঙ্গনকে রাজনীতির আখড়ায় পরিণত করা ও প্রধান শিক্ষক তার ক্ষমতা ধরে রাখতে এবং দুর্নীতির আড়াল করে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে যুবদল নেতা নয়নের স্ত্রী শাম্মী আকতারকে এডহক কমিটির সভাপতি পদে বসানোর পেছনে সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র করেছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে
বিএনপির রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে তিনি বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদটি একক সিদ্ধান্তে বাস্তবায়ন করেছেন যা বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্র¯’ করেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার ও রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে বিদ্যালয়ের প্রশাসনকে দুর্নীতির জালে আবদ্ধ করা হয়েছে।
নহাটা তথা মহম্মাদপুর উপজেলায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে একটি নতুন ধরনের নেতার উত্থান ঘটেছে। যারা সাহসী নেতা হিসেবে পরিচিত হতে চাইলেও তাদের কাজের মধ্যে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ,ব্যাংক ডাকাতি, খুন, মাস্তানি,যাকে তাকে গুলি করা এবং শতাধিক মামলার আসামী থাকার অভিযোগ রয়েছে।
নয়নকে বর্তমানে রাজনৈতিক ময়দানে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে যুক্ত এক বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে দেখছেন এলাকাবাসী। তিনি নানা অপরাধমূলক কার্যকলাপে লিপ্ত, যার মধ্যে রয়েছে চাঁদাবাজি, খুন, মাস্তানী, রাজনৈতিকভাবে মানুষদের ভয় দেখানো, এবং তার প্রভাব বিস্তারের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া। এমনকি, তিনি বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে গিয়ে সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের হুমকি প্রদান করেছেন।
যুবদল নেতা নয়নের এই কর্মকান্ডগুলো সাধারণ জনগণের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করেছে এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ব্যাবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি শুধু রাজনৈতিক নেতা হিসেবেই নয়, একাধারে একজন সন্ত্রাসী গ্যাং লিডার হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছেন ।
যুবদল নেতা নয়নের বাবা নিজেও বিভিন্ন অভিযোগে জড়িত রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অবৈধ ব্যবসা এবং নিরীহ জনগণের সঙ্গে নানা ধরনের প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে, নয়নের বাবা রাজনৈতিক প্রভাবের মাধ্যমে নির্বাচনী এলাকায় তার অবস্থান শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছেন।
এই ধরনের অভিযোগ ও রাজনৈতিক প্রভাব শুধু নয়নের উত্থানকেই জটিল করেছে না বরং এই সন্ত্রাসী মনোভাবের মাধ্যমে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং বিএনপি জনগণের আস্থা হারাচ্ছে।
নহাটা রাণী পতিত পাবণী বিদ্যালয়ে এডহক কমিটির সভাপতির পদে নিযােগের ঘটনার মাধ্যমে একটি বড় ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব এবং অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। যেখানে স্থানীয় রাজনৈতিক দল ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা শাসক হিসেবে কাজ করছেন। তাদের কার্যক্রমে শিক্ষাব্যাবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তার ব্যক্তিগত স্বার্থে একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে চলেছেন।
এতে, শিক্ষা ব্যাবস্থার মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে এবং ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন । এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় জনগণ ভয় পাচ্ছেন তাদের মৌলিক অধিকার কিংবা রাজনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষা করা সম্ভব নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে, প্রশাসনের পক্ষে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন। যাতে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এর সুষ্ঠু সমাধান নিশ্চিত করা যায়।
যুবদল নেতা নয়নের রাজনৈতিক কার্যকলাপ ও সন্ত্রাসী মনোভাবের কারণে এলাকার জনগণ একটি ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পতিত হয়েছেন। বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের কিছু মানুষ এখন চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের শিকার। স্থানীয়রা জানান, তারা এখন নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। কারণ তারা জানে যে, নয়নের বাবার রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে তারা যে কোন সময় চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের শিকার হতে পারেন।
প্রশ্ন হচ্ছে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও যদি আমরা এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে আবদ্ধ হই, যেখানে শহীদদের রক্তের দাম দিয়ে অর্জিত গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার মর্যাদা প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হয়। তবে আমাদের জাতীয় অর্জনগুলো ক্ষতিগ্র¯’ হবে। এখন রাজনীতিকে ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখলের বিরুদ্ধে রুঁখে দাঁড়ানো সকলের নৈতিক দায়িত্ব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নহাটা রাণী পতিত পাবনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাদিউজ্জামান মুঠোফোনে বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয় এডহক কমিটির সভাপতি নিযোগের জন্য এলাকার ৩ জন শিক্ষানুরাগীর (সুশিক্ষিত এবং নির্দলীয়) ব্যাক্তির নাম পাঠাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন কিš‘ এই এলাকার বিএনপি নেতারা যুবদল নেতা নয়নের স্ত্রী শাম্মি আকতারের একক নাম পাঠাতে আমাকে বাধ্য করেছেন। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারবো না।
এ দিকে একাধিক সুত্রের দাবী: জেলা বিএনপির আহবায়ক আলী আহমেদ বিশ^াস মাগুরা জেলা প্রশাসককে ফোন করে নয়নের স্ত্রীকে এডহক কমিটির সভাপতি নিয়োগ দানের বেআইনী সুপারিশ করেছেন।
এ বিষয়ে অন্তরবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টা,শিক্ষা সচিব, শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক,যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, মাগুরা জেলা প্রশাসক, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও মহম্মাদপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।