সিলেটের সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ে খেয়ালখুশি মত চলছে দৈনন্দিন কার্যক্রম  : টাকা না দিলে মিলছেনা সেবা

Uncategorized অনিয়ম-দুর্নীতি অপরাধ আইন ও আদালত গ্রাম বাংলার খবর জাতীয় বিশেষ প্রতিবেদন সারাদেশ সিলেট

জগন্নাথপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি   :  সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল থেকে পর্যাপ্ত সেবা না পাওয়ায় এলাকার খামারীরা দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। জনবল সংকট ও নানান অজুহাতে অফিসে কর্মরত প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ও অফিস সহকারীরা পকেট ভারিতে ব্যাস্ত থাকায় কৃষকদের গবাদি পশু নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে ফলে সরকারি সেবা থেকে অত্র অঞ্চলের খামারিরা বঞ্চিত হচ্ছেন।


বিজ্ঞাপন

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জগন্নাথপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে আসা লোকজনের কাছ থেকে নানা অজুহাতে নেয়া হচ্ছে হাজার হাজার টাকা। সরকারের তেমন কোন বরাদ্দ নেই সচরাচর এমন অজুহাত দেখিয়ে ঔষধ সংকট সৃষ্টি করে ব্যাক্তিস্বার্থে তাদের মনোনীত খামারিদের কাছে সরকারি ঔষধ গুলো বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। খমারীদের ঘর নির্মানে সরকারি আর্থিক সহায়তা ও সরকারীভাবে বরাদ্ধকৃত পশুদের দানাদার খাদ্য নিয়েও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ।


বিজ্ঞাপন

হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রাইভেট কলে গিয়ে এসব সরকারি ঔষধ বিক্রি করছেন ফলে বঞ্চিত হয়ে পড়ছেন সাধারণরা।
আবার প্রেসক্রিপসনে লিখছেন বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির নিম্ন মানের ঔষধ। এসব কোম্পানির ঔষধ লিখে রিপ্রেজেনটেটিভ এর মাধ্যমে কমিশন সহ পাচ্ছেন দামি দামি নানান উপহার।


বিজ্ঞাপন

সরকারীভাবে আসা পশুর টিকা বিক্রির অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা খালেদ সাইফুল্লাহ গ্রামে-গঞ্জে না গেলেও অফিসের অদক্ষ পিওন ও স্টাফদের দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে থাকেন ফলে খামারী ও কৃষকদের গরু-ছাগল ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়ারও ঘটনা ঘটেছে।

একই কর্মস্থলে ৩ বছরের অধিক সময় থাকার নিয়ম না থাকলেও কর্মকর্তা খালেদ সাইফুল্লাহ রয়েছেন প্রায় ৫ বছর ধরে। তিনি দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে থাকার সুবাদে অফিসে ও তার বাইরে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। তার বিরুদ্ধে কেউ কোন অভিযোগ করলে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নানা ষড়যন্ত্র করে থাকেন তিনি। সরকার কর্তৃক বরাদ্ধকৃত ঔষধগুলো সরকারি মূল্যের চেয়ে অধিক মূল্যে বিক্রয়ের অভিযোগ করেছেন গবাদি পশু পালন করা কৃষকেরা।

অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালে নিয়ে আসা গবাদিপশু চিকিৎসা করাতে হলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে টাকা দিতে হয়, টাকা না দিলে অসুস্থ পশুগুলোকে ফেলে রাখা হয়। চিকিৎসা করাতে হলে টাকার বিষয় আগে দফারফা করতে হয় না হলে কাজে হাত দেয়া হয় না। বিশেষকরে গাভী নিরাপদে প্রসব করাতে হলে ডাক্তারকে কল করলে বাধ্যতামূলক দিতে হয় টাকা। অনেক সময় কল দিয়েও পাওয়া যায়না চিকিৎসককে।

যেখানে কথামতো পাওয়া যাবেনা টাকা সেখানে নানা অজুহাতে না যাওয়ারও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তাদের কথামতো ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা না দিলে কাজ না করার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। অফিসে কর্মরত কর্মচারীদের বিরুদ্ধে রয়েছে অশোভন আচরণের অভিযোগ। তাছাড়া অফিস চলাকালীন সময়ে প্রাইভেট কল নিয়ে ব্যাস্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ খালেদ সাইফুল্লাহ’র বিরুদ্ধে রয়েছে অফিস ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ। তিনি অফিস ফাঁকি দিয়ে সহকারিদের মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছেন রমরমা বাণিজ্য।তবে তিনি বলছেন উপজেলায় প্রশাসনিক মিটিং নিয়ে তিনি ব্যাস্থ থাকায় অনেক সময় ফিল্ডে যেতে পারেন না।

অভিযোগ রয়েছে, সরকারি বিভিন্ন প্রদর্শনী ও কর্মশালায় নিজের মনোনীত ব্যক্তিকে নেয়া হলেও নামে মাত্র সেমিনারের নামে টাকা আত্মসাৎ করা হয়। বিভিন্ন সময়ে সরকারের দেয়া নানান বরাদ্ধ ও সুযোগ সুবিধা থেকেই যায় খামারীদের অজানা। সম্প্রতি ছাগল হাস মুরগ বিতরণের নামে অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

এছাড়া পশুপাখি অফিসে নিয়ে গেলে সাধারণ ঔষধ দিলেও রাখা হয় সরকার নির্ধারিত অতিরিক্ত টাকা। যার কোন রসিদ দেয়া হয়না। খেয়ালখুশি মতো চলছে অফিসের দৈনন্দিন কার্যক্রম। ফলে জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে পাটলী ইউনিয়নের কবিরপুর গ্রামের খামারী ফয়জুল হক, পাইলগাও ইউনিয়নের পাইলগাও গ্রামের দিনাছ মিয়া, হবিবনগর গ্রামের কলমধর আলী, ফুল মিয়া, জগন্নাথপুর গ্রামের ক্ষুদ্র খামারী আবুল কালাম, হবিবপুর গ্রামের খামারী শফিউল ও সুহেল মিয়া, ভবানীপুর গ্রামের শিবলু মিয়া, রানীগঞ্জ ইউনিয়নের নারিকেলতলা গ্রামের সাহাব উদ্দীন সহ অনেকেই বলেন আমরা সরকারি কোন ঔষধ বা অফিসের পক্ষ থেকে কোন রকম সহযোগিতা পাচ্ছিনা। সরকারি ঔষধ নাকি পর্যাপ্তভাবে এখন আর আসেনা। অফিসে কর্মরত ডাক্তার ও পিয়নকে নেয়া হলে চাহিদামত টাকা দিতে হয়। এই অফিসের ড্রেসারও ডাক্তার।

এছাড়া তাদের দেয়া ব্যবস্থাপত্রে বিভিন্ন নিম্নমানের ঔষধও ধরিয়ে দেয়া হয় এ এলাকার সহজ সরল মানুষকে ।
তাছাড়া কর্মরতরা টাকা কম হলে জনসাধারণের সাথে অশোভন আচরণ করা হয়।

ডাক্তার খালেদ সাইফুল্লাহকে কয়জন খামারি চেনেন আমাদের জানা নেই। তাকে অফিসে পাওয়া যায়না। দীর্ঘদিন থেকে তিনি একই কর্মস্থলে থাকার সুবাধে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। অফিস থেকে সাধারণ ঔষধ নিতে হলে অতিরিক্ত টাকা দিতে হয়, না হলে সরকারি ঔষধ সাপ্লাই নেই বলে বিদায় করে দেয়া হয়।

অভিযোগ রয়েছে, অফিসের অদক্ষ লোক দিয়ে কাজ করানো হয় বোবা পশুদের ফলে প্রায়ই ভূল চিকিৎসার শিকার হয়ে খামার বা কৃষকের পালিত পশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।
বিশেষকরে এ উপজেলায় এ সেক্টরে উদ্যােক্তা সৃষ্টি হওয়ার ব্যাপক সুযোগ থাকলেও কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও অসহযোগিতার কারণে দিন দিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন অনেকেই।

ক্ষুদ্র অনেক খামারী তাদের শখের গরু-ছাগল বিক্রি করে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন বলেও অনুসন্ধানে উঠে আসে। সচেতন মহল মনে করছেন, উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসের নানা অনিয়ম-দুর্ণীতির বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করা হলে অনেক অজানা রহস্য বেরিয়ে আসবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ খালেদ সাইফুল্লাহ মুঠোফোনে বলেন এই সেক্টরে সরকারের তেমন কোন বরাদ্দ নেই তাই চাহিদা অনুযায়ী ঔষধ দিতে পারছিনা। আপনার কি লাগবে বলেন।

তিনি বলেন, চিকিৎসকরা সরকার নির্ধারিত ফি’ বা নির্ধারিত ঔষধ মূল্যের চেয়ে বেশি নেওয়ার কথা না। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ গুলো সুষ্ঠ তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হলে বোঝা যাবে আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ কতটা সত্য।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *