নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘদিন কারাবাসের পর ৬ মাসের জন্য মুক্তি পাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে খালেদা জিয়ার সাজার প্রক্রিয়া আগামী ৬ মাসের জন্য স্থগিত করে তার মুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে এই সময়ের মধ্যে খালেদা জিয়া দেশের বাইরে ভ্রমণ করতে পারবেন না।
মঙ্গলবার বিকেলে গুলশানে নিজ বাসায় খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তার মুক্তির বিষয় নিশ্চিত করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস মহামারির প্রেক্ষিতে বয়স ও মানবিক বিবেচনায় ৬ মাসের জন্য খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বাসায় থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
তিনি বলেন, এই সময়ে বেগম জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে দেশের বাইরে পাঠানো মানে তাকে সুইসাইড করতে বলা। অতএব তিনি বাসাতেই থাকবেন। বাসায় থেকেই চিকিৎসা নেবেন। তার সাজা স্থগিত করা হয়েছে ফৌজদারী কার্যবিধির ৪০১/১ ধারা অনুযায়ী।
এদিকে খালেদা জিয়া মুক্তি পেলেও তার নিরাপত্তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। তাকে মুক্তি দিলে নেতা-কর্মীরা তাকে দেখার জন্য ভীড় জমাবে। অন্যদিকে জেল থেকেও ছড়াতে পারে করোনা ভাইরাস। তাই তার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দলের নেতারা।
এদিকে খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুই বছরেরও বেশি সময় পার হয়ে গেছে। এর আগে তার মুক্তির ব্যাপারে বিভিন্ন সময় সংবাদ সম্মেলন, মানবন্ধন করে বরাবরই নেতারা দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপির নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। মহামারী এই ভাইরাস বাংলাদেশকেও ছাড় দেয়নি। বাংলাদেশেও এই ভাইরাস ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে। পুরো দেশবাসি আজ সতর্ক। কিন্তু বিএনপি নেতারা এই ভাইরাসের কারণে তাদের নেত্রীকে নিয়ে খুবই চিন্তিত।
বিএনপির সিনিয়র নেতারা বলছেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে আটক করে রখা হয়েছে। খালেদা জিয়া মুক্তি পেলেও তার নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের বেশ চিন্তা হচ্ছে। আজ এই মহামারী করোনা ভাইরাসে খালেদা জিয়া খুবই খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন। তার যদি মুক্তি হয় তাহলে এই মুহুর্তে আমরা নেতা-কর্মীদের আটকে রাখতে পারবো না। খালেদা জিয়াকে দেখার জন্য সবাই ভীড় জমাবে।
এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, আমরা বারবারই বলে আসছি যে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। কিন্তু শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে আটক করে রাখা হয়েছে। আজ করোনা ভাইরাসের জন্য সরকার তার মুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু মুক্তি পেলেই খালেদা জিয়া নিরাপদ নয়। তার নিরাপত্তা নিয়ে একটি শঙ্কা আমাদের থেকেই যাবে।
এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এই মুহুর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিলেই যে তিনি নিরাপদ তাও কিন্তু নয়। তিনি মুক্তি পেলেও তার নিরাপত্তা নিয়ে রয়েছে বেশ শঙ্কা।
ফখরুল আরো বলেছেন, বেশ কয়েকদিন আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যরা দেখা করেছিলেন। স্বজনরা তখন যেটা বলছিলেন; তা আরো বেশি উদ্বেগজনক ছিল। স্বজনরা বলেছিলেন; খালেদা জিয়াকে আমরা ফিরে পাবো কিনা-এটা নিশ্চিত নয়। আর এই ব্যাপারটা গোটা জাতিকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। আজ শুধু আমাদের দেশেই নয়; বিশ্বব্যাপি মহামারী এই করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। আর এটা নিয়ে গোটা বিশ্ব আজ উদ্বিগ্ন।
এ বিষয়ে বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. আব্দুস সালাম বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একটি মিথ্যা মামলায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে জেলে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমরা বারবারই বলেছি খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন; কিন্তু এই সরকার খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থায় গ্রহণ করেনি। কিন্তু আজ করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার যদিও খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তবুও আমি বলবো, খালেদা জিয়ার মুক্তি হলেই তিনি নিরাপদ তা কিন্তু নয়।