ষাট টাকা হাজিরায় আউটসোর্সিং এ উমেদার সোবহান এখন রাজধানীর জমিদার।

বিশেষ প্রতিবেদক : ষাট টাকা হাজিরায় আউটসোর্সিং এ উমেদার সোবহান রাজধানীর জমিদার বনে গেছেন। দৈনিক ৬০ টাকা মজুরি রাজধানীর মোহাম্মদপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের অস্থায়ী এই পদে চাকরি করে অদৃশ্য শক্তির ইশারায় হঠাৎ ফুলেফেঁপে কলাগাছ হয়ে উঠেছেন । তবে আব্দুস সোবহানের গল্পটা ভিন্ন।

এই মজুরিতে ১০ বছর চাকরি করা সোবহান ও তাঁর পরিবার রাজধানীতে বাড়ি, একাধিক প্লট-ফ্ল্যাট ও গাড়ির মালিক। তাঁর স্ত্রী ও মায়ের আয়কর নথিতে ১৫ কোটি টাকা উল্লেখসহ বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ রয়েছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সোবহান, তাঁর স্ত্রী ও মায়ের নামে ১০টির বেশি বাড়ি-প্লটের তথ্য পাওয়া গেছে। আয়কর নথির বাইরেও রয়েছে বিপুল সম্পদ।
সূত্র বলছে , ‘উমেদার’ পদটিই যেন সোবহানের আলাদিনের চেরাগ। এ পদ ব্যবহার করে তিনি মোহাম্মদপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ঘুষ, তদবির-বাণিজ্যসহ দলিলের শ্রেণি পরিবর্তন করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে টাকা কামিয়েছে। দলিল ও বালাম কাটা- ছেঁড়া ও পাতা পরিবর্তন করে অবৈধ আয়ের একটি বড় অংশ। সোবহানের মাসিক বেতনের বাইরে বিপুল পরিমাণ ঘুষবাণিজ্য রয়েছে। তাঁর কাছ থেকে প্রশাসন থেকে শুরু করে গণমাধ্যমের কয়েকজন কর্মীরা সুবিধা নিয়ে নিয়মিত সহযোগিতা করছেন।
অনুসন্ধানে আব্দুস সোবহানের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। আব্দুস সোবহান, তাঁর স্ত্রী হালিমা ও মায়ের আয়কর নথিসহ দলিলে দেখা যায়, রাজধানীর আদাবরে সড়কের পাশে ২৪/৩ হোল্ডিং নম্বরের একটি সাততলা বাড়ির মালিক আব্দুস সোবহান। তাঁর আয়কর নথিতে স্থাবর সম্পদ হিসেবে আদাবরের ১০ নম্বর সড়কে ৭১২/১৯/৬৬ নম্বর হোল্ডিংয়ে ৩ দশমিক ৫৯ কাঠা জমিতে ২৪টি ছাপরাঘর, ১০৩৪/৩/বি মোহাম্মদপুর সড়কের ১৭/বি, বি/এফ-এতে ৫ শতাংশ জমিতে ১৮টি ছাপরাঘর (আরএস নং ২৪০, এসএ খতিয়ান নং-৫৯), বাড্ডার সাঁতারকুলে ৫০ শতাংশ অংশীদারত্বে একটি ২ কাঠার প্লট (সিএস খতিয়ান নং ২৯) এবং ৬ শতাংশ জমির (এসএ নং ২৯৩) উল্লেখ রয়েছে।
নথি থেকে আরো জানা যায়, আদাবরের বায়তুল আমান হাউজিং সোসাইটির ১১ নং সড়কের ৬১৭ নং হোল্ডিংয়ের ভবনটিতে সোবহানের তিনটি ফ্ল্যাট, বছিলা সিটিতে ১৫ কাঠার একটি প্লট, মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর মৌজায় ২০ কাঠার ও কাঁটাসুর মৌজায় ৯৬৫৪ নং দলিলমূলে ১৮ কাঠার একটি প্লট রয়েছে। আদাবরের ৩ নম্বর সড়কের ৩২২ হোল্ডিংয়ের সিলিকন নামের ভবনের তৃতীয় তলায় একটি ফ্ল্যাটের মালিক আব্দুস সোবহান। ওই ফ্ল্যাটে থাকেন তাঁর এক আত্মীয়, যিনি রাজধানীর অন্য একটি সাব রেজিস্ট্রি অফিসে কর্মরত। আব্দুস সোবহানের নামে তিনটি মাইক্রোবাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। সোবহানের স্ত্রী ও মা আয়কর নথিতে তাঁদের ১৫ কোটি টাকা ও বিপুল স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। অথচ তাঁরা দুজনেই গৃহিণী।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি অভিযোগের বিষয় জানতে মোহাম্মদপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে গেলে গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে আব্দুস সোবহান অফিসের বাইরে চলে যায়। একটু পরে রুমে বসলে সাংবাদিক এর জবাবে বলেন সোবহান বাসায় চলে গেছেন রোববার অফিসে আসবেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অফিসের একাধিক কর্মচারী বলেছেন নাম গোপন করে কথা বলছেন তিনিই সোবহান।
মোহাম্মদপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিস সূত্র জানায়, আব্দুস সোবহান মোহাম্মদপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে ২০১৪ সালের পূর্ব থেকে এক যুগেরও বেশি সময় চাকরি করে আসছে। কোনরকম নিয়োগ আদেশ ছাড়াই পরবর্তীতে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে২০১৪ সালে তার অদৃশ্য ক্ষমতা বলে অস্থায়ী নিয়োগ আদেশ হাতে নিতে সক্ষম হয়। তবে ওই বছর আব্দুস সোবহান এ অফিসে দৈনিক হাজিরা-ভিত্তিক অস্থায়ী উমেদার পদে যোগ দেন। দৈনিক মজুরি ৬০ টাকা। ১০ বছর পর তাঁর ও তাঁর পরিবারের সম্পদের পরিমাণ শতকোটি টাকা ছাড়িয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, সোবহানের বিত্তবৈভব এর পেছনে গড়ে ওঠা মোহাম্মদপুর সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে গড়ে ওঠা ঘুষের বিনিময়ে তদবির-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপকর্ম।আব্দুস সুবহানের অবৈধ কাজের সহযোগী হিসেবে কাজ করে একটি চক্র।
মোহাম্মদপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের নকল নবীস সুবহানের শ্যালক রাজিব তাদের-ই একজন, রাজিবের বিরুদ্ধে অনেক অনিয়মের তথ্য রয়েছে। সরকারি ফি ছাড়া নকল প্রদান, দলিল কাটা ছেঁড়া করা ইত্যাদি।
উল্লেখ্য যে একজন ব্যক্তি শেষ সম্বল দিয়ে মাথা গোঁজার জন্য জমি বা ফ্ল্যাট কিনবেন আর সোবহান বালাম ঘষাঘষি বা ছিঁড়ে নিমিষেই ভবিষ্যৎ অন্ধকার করবেন। এরকম সোবহানদের শাস্তি নিশ্চিত করতে দুদকের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।