মোঃ সাইফুর রশিদ চৌধুরী : গোপালগঞ্জে এ বছর বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে। এ কারণে বাঙ্গি চাষিদের মুখে হাসির ঝলক দেখা গেছে। বাঙ্গি ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, অ্যাসিডিটি, আলসার, নিদ্রাহীনতা, ক্ষুধামন্দাসহ অনেক রোগের প্রতিকার করে থাকে। বাঙ্গি আমাদের দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে। ত্বকের নানা রকমের সমস্যা দূর করতে বাঙ্গি সাহায্য করে থাকে। বাঙ্গি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নানা রকমের উপকার সাধন করে।.

বাঙ্গি সাধারনত দুই ধরনের হয়। বালু ও এটেল জাতীয়। বালু স্বাদ বা এটেল স্বাদ যেমনই হোকনা কেন বাঙ্গির কদর আলাদা। বাঙ্গি অতি মিষ্টি স্বাদের না হলেও গরমের সময় শরীর ঠান্ডা রাখতে বাঙ্গির তুলনা মেলা ভার।

চলতি সময় গোপালগঞ্জের সর্বত্র বাঙ্গি বিক্রি হচ্ছে ধুমসে । বাজারে, রাস্তার পাশে, ভ্যানে করে সর্বত্র ঘুরে ঘুরে বাঙ্গি বিক্রি চলছে। খুচরা ৫০ টাকা থেকে ১২০ টাকার মধ্যে প্রতি পিচ বাঙ্গি বিক্রি হচ্ছে। অনেকেই বছরের এসময় খুচরা বাঙ্গি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

মুলত নভেম্বর মাসের শেষ দিক থেকে ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত বাঙ্গি বীজ বপন করতে হয়। এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়। বর্ষার আগে ফলন ঘরে তোলা শ্রেয়।
জেলায় বাঙ্গি উৎপাদনের অন্যতম ক্ষেত্র হলো কোটালিপাড়া উপজেলার কলাবাড়ী ইউনিয়ন। ওই ইউনিয়নের কালিগঞ্জ বাজার ও পাশ্ববর্তী গ্রামগুলির রাস্তার দুইপাড়ে সারি সারি বাঙ্গির স্তুূপ দেখতে পাওয়া যায় প্রতিদিন। এসব বাঙ্গি পাইকারী ক্রেতারা দুরদুরান্ত থেকে এসে কিনে নিয়ে যান। অত্র এলাকার চাষিরা প্রতি পিচ বাঙ্গি ২৫/৩৫ টাকা দামে বিক্রি করেন।
নলুয়া গ্রামের পরিমল গাঙ্গুলি (৪০) বলেন, এবছর আমি সাড়ে চার বিঘা জমিতে বাঙ্গি চাষ করে ভালো লাভ করেছি। একই গ্রামের কপিল বিশ্বাস (৩০) বলেন,আমি দেড় বিঘা জমিতে বাঙ্গি লাগিয়েছি। খরচ বাদে ভালো লাভ হয়েছে।
কোটালিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দোলন রায় বলেন, উপজেলার বেশির ভাগ চাষি স্থানীয় উন্নত জাতের বাঙ্গি চাষ করেন। বাজারে উচ্চ ফলনশীল জাতের বাঙ্গি বীজ পাওয়া যায় না। মধুমতি নামে একটি কোম্পানির বীজ পাওয়া যায় বাজারে। তাও স্থানীয় জাতের। এসব বীজ চাষিরা উৎপাদিত বাঙ্গি থেকে সংরক্ষণ করে থাকে।
এখানকার জমি ৫২ শতাংশে বিঘা হিসাব করা হয়। বাঙ্গি চাষে প্রতি বিঘা জমিতে বীজ, রোপন, সার, কীটনাশক, পরিচর্যা,সেচ, সংগ্রহ, পরিবহনসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় হয় প্রায় ২৮ হাজার ৫ শত টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে বাঙ্গি উৎপন্ন হয় প্রায় ৮ হাজার কেজি।
প্রতি কেজির দাম দশ টাকা ধরলে ৮০ হাজার টাকা হয়। খরচ বাদে বিঘায় লাভ হয় ৬১ হাজার ৫ শত টাকা। ভালো লাভ হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখতে পাওয়া যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আব্দুল কাদের সরদার বলেন,জেলায় মোট ৩৫৮ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে কোটালিপাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ৩৪৫ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ হয়েছে এ বছর। কৃষি কর্মকর্তারা বাঙ্গি চাষিদের সার্বিক সহায়তা দিয়ে থাকেন।